গুচ্ছ কবিতা।। দীপিতা চ্যাটার্জী
তর্পণ
ইচ্ছে হয় মাকে সব স্বাধীনতাগুলো কিনে দিই,
কিন্তু আমার সামর্থ্যে কুলোবে না যে. . .
ভুলে যাই বার বার-
আমি যে তোমার কন্যাসন্তান।
আবার ভাবি তোমায় সম্মান কিনে দেব
কিন্তু কত দাম তাও জানি না।
শুনেছি আজকাল খুব দামি হয়ে গেছে, প্ল্যাটিনামের চেয়েও।
তবু একদিন ঠিক কিনে দেব-
তখন না হয় ভুয়ো গুলোকে হরিলুট দিও।
গুমসুদা
খুব চেনা মুখ গুলো যখন ধীরে ধীরে দূরে চলে যায় ,
আচমকাই স্বপ্ন বলে মনে হয়।
কেমন যেন ধোঁয়াশায় বিলীন হওয়ার মতো
হাজারো ছোঁয়ার চেষ্টাতেও কর্পূরের মতো উবে যায়
সমস্ত ভুল বোঝাবুঝির কচকচানিতে মুখ থুবড়ে পরে
আত্মীয়তা।
স্বজনেরা নিজ নিজ বৃত্তে অপরিপক্ক।
হাজার টন জমে থাকা বরফের চাঁই বুকে চাপিয়েও মুখে ফল্গুধারা।
তবু কি সব ভুলে অকারণ ঝঞ্ঝাট বর্জিত নিজ রক্তকে আপন করেছে?
পেরেছে কি সম্পর্কের নাম গুলোর মর্যাদা দিতে?
ভঙ্গুর চেতনায় আঘাত হানতে যে চাপা খুশি আছে
পাল্টা আঘাতের ক্ষতটা তার থেকে সহস্র গুন বেশি নির্মম- নিয়তির খেলা।
রাজনীতির মঞ্চে না নেমে যদি ভালোবাসার প্রতীকী রূপ নিত
তবে স্বপ্নের বাগে সংসার বাহারি ফুল হতো।
যা ভালোবাসা ছিল সবকিছু মনে হয় এখন,মরীচিকা!!
মরাসিম এখন শবের উপত্যকা হয়ে গেছে।
ঝিঁ ঝিঁ ডাকা রাতে শব্দরা খুবই মায়ুস।
হিম করা তনহায়ি ছেয়ে আছে অবয়বে,
সম্পর্কের প্রতি ভাঁজে ভাঁজে ঘুন ধরেছে।
সূক্ষ ফাটল গুলো গভীরতা নিচ্ছে, কোনো এক মৃত্যুর পথিক হয়ে।
স্বাভাবিকত্বের মাঝে
মহামারীর সাথে শত্রুতা করে নিজেকে ঘর বন্দি করা আমার শত ভুলের মধ্যে অন্যতম,
একটা জীবনে ভুলের তো বিরাম হয় না কখনোই, এটাও তেমনি!
রাগ , অভিমান এগুলো বোঝার মতো একটা চরিত্র দরকার যা এখন বিলুপ্ত প্রায়,
তাই ঠিক করলাম মহামারী কে সঙ্গী করে উন্মুক্ত হোক আমার বন্দিদশা,
গাড়ির চাকার সাথে স্পাইরালের মতো পিষে দিচ্ছি সমস্ত ভয় আতঙ্ক
ধরে রাখছি মুঠোভর্তি সাবধানতার মন্ত্র, জপমালার মতো-
আমার সমস্ত নেতিবাচক ভাবনা গুলো দূষণ মুক্ত বায়ুর মাঝে ঘূর্ণাবর্ত,
আসল কথা হলো মহামারীর সাথে সমঝোতা করে ছুটে চলেছি রাস্তা কে পদবিষ্ট করে
অনিশ্চয়তার মাঝেও স্বভাবিকত্বের স্বাদ বেশ নতুনত্বের খোঁজ এনে দেয়
ঘর, ঘর সরিয়ে সিঁড়ি, তারপর রাস্তা, রাস্তা সরিয়ে বালি আর বালির স্পর্শেই অনন্তের দেখা
যেখানে মহামারীও নতজানু আগামীর কাছে।।
দীপিতা চ্যাটার্জী
বিবাহ সূত্রে মুম্বাইয়ে বাস। মনে প্রাণে বাঙালি। ছোটবেলা থেকেই বই পড়া নাচ গান ও আবৃত্তির ওপর নেশা। বই পড়তে পড়তে লেখা শুরু। প্রথমে খাতা বন্দি তারপর ধীরে ধীরে সবার সাথে ভাগ করে নেয়া নিজের লেখা। নানান অন্তর্জাল পত্রিকায় নিয়মিত লেখালিখি । কবিতা ও প্রবন্ধ ই বেশি লিখে থাকি। তবে মাঝে মধ্যে গল্প লিখি। কাব্যগ্রন্থ ‘মেঘ বৃষ্টির উপাখ্যান’ ২০১৯ এর বইমেলা তে প্রকাশিত। লিটেরোমা রেডিও তে আবৃত্তি পাঠ। এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আবৃত্তি ও নাচ করে থাকি , সাংস্কৃতিক ভালোবাসায়।