উপন্যাস।। আবার এসো ফিরে।। রামেশ্বর দত্ত

ফিটন গাড়ি ছাড়ল। জোড়া ঘোড়ায় গাড়ি টানছে। ভিতরে ঠাকুর বসে রয়েছেন। সঙ্গে মাস্টার ও আরও দুজন;- ভবনাথ আর হাজরা। দুজনেই রামকৃষ্ণের পরম ভক্ত। রোজদিনই কলিকাতা থেকে সাড়ে আট মাইল হেঁটে দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুরের কাছে যায়সারা বিকেল সন্ধ্যে অন্য আগত ভক্তদের সঙ্গে তাঁর সামনে বসে থাকে। ভক্তি কথা শোনে ঠাকুরের মুখে। নামগান করে। তারপর একসময় উঠে পড়ে। বাড়ি ফেরে। সেই আট মাইল পথ পায়ে হেঁটে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায় আবার পরেরদিন একই রুটিন… 

পর্ব- ৩২ 

চারজনকে নিয়ে ফিটন গাড়ি আসছে দক্ষিণেশ্বর থেকে বাদুরবাগানে। অনেকটা পথ। ঠাকুর গাড়ির ভিতর বসে কলিকাতার পথের দৃশ্য দেখতে দেখতে চলেছেন। মাঝে মাঝেই তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন। পথে সেরকম কিছু চোখে পড়লেই। এই হয়েছে ঠাকুরের দোষ। বাইরে বেরলে একেবারে  বাচ্ছাছেলের মতো করতে থাকেন। হাত তালি দিয়ে ওঠেন। কখনও বা হঠাৎ করে সমাধিস্থ হয়ে যান।

সেরকমই আজও হলেন, বরাহনগরের পথ পেরোবার সময়। পথে এক মন্দির দর্শন হয়েছে। জগন্নাথ দেবের মন্দির। সেখানে ঢোল কত্তাল বাজিয়ে পূজো হচ্ছিল।

সেসব পেরিয়ে তাঁর ফিটন এসে ঢুকল বাদুরবাগানে। ঈশ্বরচন্দ্রের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি দাঁড়াল। বাড়ির পাহারাদার খবর পৌঁছে দিল ঈশ্বরচন্দ্রকে। সন্ধ্যে পেরিয়ে গেছে তখন। ঘরে ঘরে ঝোলানো কেরোসিনের লণ্ঠন জ্বলে উঠেছে।

বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে দোতলা বাড়িখানা নিরীক্ষণ করতে শুরু করলেন। বেশ পছন্দ হয়েছে ঈশ্বরচন্দ্রের বাড়িটা। মাষ্টারের কাছে বাড়ির গুণকীর্তন শুরু করলেন, দেখো, দেখো মাষ্টার, বিদ্যার সাগরের পছন্দ আছে বলতে হয়। বাড়িটা বানিয়েছে একেবারে সাহেবি ঢঙে।

-হ্যাঁ। তাই তো দেখছি, মহেন্দ্রমাস্টার উত্তর দিল। পরে কথা যোগ করল, ওনার অর্থ তো বই লিখেই।

-ভারী পণ্ডিত মানুষ গো। আহা, আজ তাঁর সঙ্গে মুখোমুখি হব। আমার কী আনন্দ হচ্ছে, বলে ঠাকুর উচ্ছ্বাসে ভেসে যেতে থাকলেন। একবার নিজের পোশাকের দিকে তাকালেন। গায়ের জামায় হাত দিলেন। জামার একটা বোতাম খোলা অবস্থায়। মাস্টারকে ডেকে বললেন, দেখো দেখি, জামার বোতামখানা খোলা। এতে কোনও দোষ হবে না তো?

মাষ্টার উত্তর দিল, ওর জন্যে আপনি ভাববেন না। আপনার কিছুতে দোষ হয় না। আপনার বোতাম দেবার দরকার নেই।

ঈশ্বরচন্দ্র ততক্ষণে খবর পেয়ে নীচে নেমে এসেছেন। তাঁর পরণে নিজস্ব সাবেকি পোশাক। ধুতি আর ফতুয়া। ওপর দিয়ে একখানা চাদর ফেলা। পায়ে বিদ্যাসাগরী চটী।

রামকৃষ্ণকে তিনি অভ্যর্থনা জানালেন। দুজনে দুজনকে দেখলেন। এই প্রথম।

সিঁড়ির পথ দেখিয়ে তিনি ঠাকুরকে নিয়ে চললেন বাড়ির দ্বিতলে। সেখানে প্রথম ঘরটাতে গিয়ে ঢুকলেন। সেটা ঈশ্বরচন্দ্রের পড়বার ঘর। ঘর ভর্তি বইয়ের মেলা। ঘরের মাঝখানে একটা টেবিল। উল্টোদিকে দুটো চেয়ার আর পাশ দিয়ে একটা বেঞ্চ রাখা। সব আসবাবই  ভালো কাঠের তৈরী। চকচকে পালিশ করা। ঘরে আগের থেকে দুজন বসেছিল। তাঁরা এসেছিল ঈশ্বরচন্দ্রের সঙ্গে কিছু বিষয় নিয়ে আলাপ করবার জন্যে। ঈশ্বরচন্দ্র তাঁদেরকে ছুটি করিয়ে দিলেন।

পাহাড় প্রমাণ বইয়ের মেলা দেখে ঠাকুর হাঁকুপাঁকু করতে থাকলেন। ঈশ্বরচন্দ্রকে বললেন, আজ সাগরে এসে মিশলাম গো। এতদিন খালবিল হ্রদ নদী দেখেছি। এবার সাগর দেখছি।

-তা সাগরে যখন এসেই পড়লেন, খানিকটা নোনা জল নিয়ে যান…, সহাস্যে কথা বললেন ঈশ্বরচন্দ্র।

পরমহংস বললেন, নোনা জল কেন গো? তুমি তো আর অবিদ্যার সাগর নও, তুমি হলে গিয়ে বিদ্যার সাগর। তুমি ক্ষীরসমুদ্র।

-তা বলতে পারেন বটে।

-তোমার কর্ম সাত্ত্বিক । স্তবগুণ থেকে দয়া হয়। দয়ার জন্যে যে কর্ম করা যায়, সে রাজসিক কর্ম বটে-কিন্তু এ রজগুণ-স্তবের রজোগুণ, এতে দোষ নাই। শুকদেবাদি লোকশিক্ষার জন্যে দয়া রেখেছিলেন, তুমি ঈশ্বরচন্দ্র, বিষয় শিক্ষার দেবার জন্যে তুমি বিদ্যাদান করছ, এও ভালো। নিষ্কাম করতে পারলেই এতে ভগবান লাভ হয়। কেউ করে নামের জন্যে, পুণ্যের জন্যে, তাদের কর্ম নিষ্কাম নয়। আর সিদ্ধ তো তুমি আছই।

ঈশ্বরচন্দ্র মনোযোগ দিয়ে ঠাকুরের কথা শুনলেন। ঈশ্বরীক ভাবধারায় তাঁর কাজের এত প্রশস্তি ইতিপূর্বে কেউ এমন করে করেনি। তাই ঠাকুরের কথা শুনে আবিষ্ট হয়ে পড়লেও তা বেশিক্ষণ ধারণ করে থাকা হল না তাঁর। তিনি যে অন্য ধাঁচের মানুষ। তাই ঠাকুরের শেষ বাক্যের রেশ ধরে বলে উঠলেন, সিদ্ধ আবার কবে হলাম?

-কেন? আলুপটল সেদ্ধ হলে তো নরম হয়। তুমি তো সেই নরম। তোমার অত দয়া। লোকে তোমাকে দয়ার সাগরও বলে, এও আমি জানি।

ঠাকুরের সব ঘরোয়া কথা। চলতি বস্তুর উদাহরণ দিয়ে তাঁর কথাবার্তা। ঈশ্বরচন্দ্রও তাতে কম যান না কিছু। তাঁর রসিক স্বভাব তো চিরকালের। তিনিও উত্তর দিলেন, কেন, কলাই সিদ্ধ হলেও তো শক্তই থাকে।

উপস্থিত সকলে হো হো শব্দে হেসে উঠল। ততক্ষণে ঘরে রবাহূত অনাহুতের অনেকে পৌঁছিয়ে গিয়েছে। বিদ্যাসাগরের বাড়িতে স্বয়ং ঠাকুর রামকৃষ্ণ এসেছেন। এ খবর চাউর হতেই পাড়া প্রতিবেশীর ভিড় লেগে গিয়েছিল সেখানে।

হাসির মধ্যেই ঠাকুর বলে উঠলেন, তুমি তা নও গো। পরে কথা যোগ করলেন, শুনি তুমি নাকি ব্রাহ্ম হয়েছিলে?

-আমার বিষয়ে সব খবরই রেখেছেন দেখছি।

ঈশ্বরচন্দ্র কথার জবাব দিলেন। ঠাকুর বললেন,  -না, ওই যে ওরা সব বলাকয়া করে, তাই শুনি। তা, ব্রাহ্ম হয়ে ঈশ্বরচন্দ্রকে দেখতে পেয়েছ?

-দেখুন, ঈশ্বরচন্দ্রকে নিয়ে আমি কোনোদিনই ঘাঁটাঘাঁটি করিনি। তবে ব্রাহ্মধর্মের অনুসরণ করে যা দেখেছি, এখন সেখান থেকে সরে এসেও তাই দেখছি। ওই সমাজেও ব্রহ্মকে নিয়ে কলহ; এই সমাজেও তাই। জোড়াসাঁকোর দেবেন্দ্রনাথের নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই। আর কেশব সেন?…

ঈশ্বরচন্দ্র ঠাকুরের দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। ঠাকুরের মধ্যে কোনও ভাবাবেগ না দেখে তিনি নিজেই বলে যেতে থাকলেন, দুজনেই মহৎ লোক। একজন হয়েছেন মহর্ষি, অপরজন ব্রহ্মানন্দ। দুজনেই ব্রাহ্ম সমাজের হোতা। তবে সেখানেও একজনের প্রকৃতিগত ভিন্নতায় ওই সমাজে নবীন আর প্রবীণদের মধ্যে বিভেদের সৃষ্টি হয়। তাই সেখান থেকে বহু আগেই আমি নিজেকে সরিয়ে নিয়ে এসেছি।… তবে, আপনার কথায় আমি ঈশ্বরে বিশ্বাসী না হলেও পরমেশ্বরে বিশ্বাস রাখি। ব্রহ্মে আমার নজর রয়েছে।

-ভালো কথা বলেছ। জ্ঞানীর কথা। ব্রহ্ম যে কী, তা মুখে বলা যায় না। জানো তো, সব জিনিষ এঁটো হয়ে গেছে। মুখে পড়া হয়ে গেছে। মুখে উচ্চারণ হয়েছে, তাই এঁটো হয়েছে। কিন্তু ব্রহ্ম এঁটো হয়নি। ব্রহ্ম যে কী আজ পর্যন্ত কেউ মুখে বলতে পারেনি।

-বাহ, বেশ কথাটা বললেন তো, আজ একটা নতুন কথা শিখলাম।…আচ্ছা, অনেক কথাবার্তা হল। এবার কিছু খাবেন-দাবেন তো?

-জল খাবো।

-সঙ্গে কিছু দিলে? আপনার খাবার প্রকৃতি তো জানা নেই?

-খাবো, খাবো। আমি সর্বভুখ। তন্ত্রসাধনায় বামনী আমায় নরমাংসও খাইয়ে ছেড়েছিল। সে এক মহিলা ছিল বটে…,। এখন আমি পেট রোগা মানুষ। শিঙির ঝোলভাত করে দেয় গিন্নী, তাই খাই।

-সে তো আমিও। তবে এখন তা না খেয়ে বরং মিষ্টি দিয়ে জলযোগ করুন, বলে ঈশ্বরচন্দ্র উঠে ভিতরে গেলেন।

কিছু পরে একটা রেকাবিতে  মিহিদানা আর সীতাভোগের সঙ্গে জলের গ্লাস নিজে হাতে এনে ঠাকুরের সামনে রাখলেন। বাকি যাঁরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন তাদেরকেও মিষ্টি বিতরণ করলেন চাকরের মাধ্যমে। তৃপ্তির সঙ্গে খেয়ে ঠাকুর ঢেঁকুর তুললেন। দুচার কথায় ঈশ্বরচন্দ্রকে কিছুটা প্রশংসা জানিয়ে কথা শেষ করে নীচে নামার তোড়জোড় শুরু করলেন। কেমন যেন ছটফট করছেন তিনি।

রাত ন’টা বাজে তখন। পরমহংসদেব দক্ষিণেশ্বর ফিরবেন।  গাড়ি এসে দাঁড়াল বাড়ির দোরগোড়ায়। তিনি উঠে বসলেন গাড়িতে। সঙ্গে আর যাঁরা এসেছিল, তাদের মধ্যে শুধু মাস্টারমশাই তাঁর সঙ্গ নিল। বাকি দুজন তাঁদের কলিকাতার বাড়িতে ফিরে গেল।

কোচোয়ান মুখে হ্যাট হ্যাট, শব্দ করে ঘোড়াকে চলবার নির্দেশ দিতে গাড়ি নির্জন রাস্তা ধরে উত্তর পানে এগিয়ে চলল। ভিতরে বসে ঠাকুর চোখ মুদলেন।

(৩৬)

পরমহংস রামকৃষ্ণ যখন যুবক নরেন্দ্রনাথকে দিনে দিনে আধ্যাত্মিকতার পথের পাঠ দিচ্ছেন, ঠিক সেই সময় ঈশ্বরচন্দ্র ঠাকুরকে সম্যক কাছ থেকে দেখলেন। ঠাকুরের ঐশ্বরিক শক্তির  কথা জানলেন এবং মানলেন; কিন্তু ঠাকুরের ভাবাদর্শে সম্পৃক্ত হয়ে উঠতে পারলেন না। অথচ তখন নরেন্দ্রনাথ কলেজের পাঠ শেষে  ঈশ্বরচন্দ্র প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশনেই শিক্ষকতা করছেন। ঈশ্বরচন্দ্র সেসময় তাঁর স্বপ্নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নতি কল্পে উঠেপড়ে লেগেছেন।

বড় গোলমেলে অবস্থায় দিন কাটছে ঈশ্বরচন্দ্রের। একদিকে শরীরের ভাঙন; তাতেই  তৈরী হয়েছে কর্মাটাঁড়ে দীর্ঘকালের জন্যে নিভৃতবাসের বাসনা। সেখানে গরীব , অশিক্ষিত সাঁওতালদের জীবনে উন্নতির আলো দেখানোর অদম্য ইচ্ছে। আবার ওপর থেকে যোগ হয়েছে মেট্রোপলিটন কলেজটাকে উচ্চ থেকে উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তকমা এনে দেওয়ার কাজ। কোনটাই তাঁর কাছে দ্বিতীয় সারিতে নয়। তবু সবের মধ্যে প্রাধান্য দিচ্ছেন কলেজের কাজকে। যা কিনা দেশের শিক্ষা সংস্কারের অঙ্গ হয়ে চিরকাল বিদ্যমান হবে।

কয়েক বছর  আগেই বহু প্রচেষ্টার অবসানে কলেজকে এফ এ এবং বি এ পড়াবার যোগত্যামানে পৌছিয়ে দিয়েছেন। কলেজের ছাত্ররাও তাতে সহযোগিতা দেখিয়েছে সারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মেধা স্থান অধিকার করে। এখন তাঁর ইচ্ছে, ওই কলেজে আইন বিষয়ও পড়ানোর। তিনি চান আইন শ্রেণীর প্রবর্তন। সেই অনুপাতে প্রতিষ্ঠানে ছাত্র  সংখ্যাও পাঁচ শতয় পৌছিয়ে গেছে। কলেজ যে বছরে বছরে সুনাম কিনছে, এটাই তার প্রমাণ। ঈশ্বরচন্দ্রের খুশির বাঁধ শরীর ভাঙনের বাধা মানছে না। তিনি ছুটে বেড়াচ্ছেন।

এই রকম সময়ে একদিন ঈশ্বরচন্দ্র তাঁর কলেজের নিজস্ব ঘরে বসে কিছু দরকারি কাজ সারছেন। ঘরে এসে ঢুকল এক শিক্ষক। নাম মনোময় ভট্টাচার্য। ইতিপূর্বে মনোময় ভট্টাচার্য মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন থেকে এফ এ পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়েছে। বাংলায় অনার্স ও ইতিহাস বিষয়ে পাশ করে সুপণ্ডিত হয়েছে। মনোময়বাবু বরাবরের মেধাবী ছাত্র। সেই সূত্রে ঈশ্বরচন্দ্রের কাছে তাঁর বিশেষ খাতির। তিনিই মনোময়বাবুকে  মেট্রোপলিটন কলেজে এনে চাকরি দিয়েছেন। ভট্টাচার্য মশায় ঈশ্বরচন্দ্রের খুব কাছের লোক। তাঁর কথায় ঈশ্বরচন্দ্রের অগাধ বিশ্বাস; এমনকি তিনি মরতেও পারেন, বাঁচতেও পারেন মনোময়বাবুর কথায়।

আগন্তুক ঘরে এসে ঢুকল। ঈশ্বরচন্দ্রের ঘরে তাঁর অবারিত দ্বার। যখন তখন আসবার অনুমতি রয়েছে; যেখানে অন্য শিক্ষকদের ওই ঘরে ঢোকবার আগে দুবার চিন্তা করে নিতে হয়। ঈশ্বরচন্দ্র হচ্ছেন রাশভারী মানুষ; কলেজের প্রতিষ্ঠাতা এবং ম্যানেজং কমিটির শীর্ষে তাঁর অবস্থান।

হাতের কাজ স্থগিত রেখে তিনি মনোময়বাবুর দিকে তাকালেন। ইশারায় বসবার কথা বললেন। জিজ্ঞেস করলেন, কিছু সংবাদ রয়েছে নাকি, মনোময়?

-আছে স্যার।

-যেমন?

-ক’দিন ধরেই শিক্ষকদের মধ্যে একটা চাপা গুঞ্জন চলছে। জানি না, তার শব্দ আপনিও শুনেছেন কিনা। তবে মনে হয়, এখনও সেটা অতটা সোচ্চার হয়নি…

-আসল কথায় আয়। বল, কী কথা হচ্ছে।

-স্যার, শিক্ষকরা বলেছে, অন্যান্য অনেক কলেজের থেকে এই কলেজে শিক্ষকদের বেতন অনেকটাই কম।  বাজারে জিনিষপত্রের দর দিন দিন বাড়ছে। এই সামান্য টাকায় সংসার চালানো হয়ে উঠছে না। তাইতে তাঁদের মন বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকে তো ছাত্র পড়ানো হবে কী করে?

ঈশ্বরচন্দ্র মনোময়বাবুর কথাটা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। একশভাগ বিশ্বাস করলেন। মনে মনে ক্ষুব্ধ হলেন। ক্ষুব্ধ এই কারণে নয় যে কথাটা শিক্ষকরা সরাসরি তাঁকে এসে জানায়নি; কারণটা হচ্ছে, কম বেতনের জন্যে ছাত্রদের পড়ানোয় খামতি থেকে যাচ্ছে, সেটাই তাঁর ক্ষোভের কারণ। তখন তখন ওই বিষয়ে তাঁকে আর কিছু বললেন না। শুধু জানালেন, পরে এই নিয়ে শিক্ষকদের একটা মিটিং ডাকবেন। তাঁকে বললেন, যা, গিয়ে তোর ক্লাস নেয়ে, বিষয়টা আমি দেখছি।

মনোময়বাবু চলে গেল। কিছুক্ষণ গম্ভীর হয়ে বসে রইলেন ঈশ্বরচন্দ্র। পরে খাতা কলম টেনে নিয়ে খসড়া করতে বসলেন। সমস্যা যখন এসেছে, তা মেটানো তাঁরই দায়িত্ব। তবে তার জন্যে চাই পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনারই  ছক কষছেন তিনি। ম্যানেজিং কমিটির মিটিং ডাকবেন, সেখানে কাকে চেয়ার দেবেন, কেমন ভাবে নিজের বক্তব্য পেশ করবেন ইত্যাদি। নিখুঁত পরিকল্পনা করে কাজে এগোতে চান।

 

চলবে… 

শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page