প্রবীণ প্রেমিক যেন স্মৃতির গহনে দিয়ে ডুব
লেখনী- শুভদীপ সাহা
অনেকদিন পর… কলামন্দির… কবীর সুমন… বাংলা আধুনিক গান।
গুঞ্জন’-এর আয়োজনে কলকাতা যখন মেতে উঠেছে মহাপঞ্চমীর সন্ধেয়, ৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০২২.. কলামন্দির তখন মেতে উঠল কবীর সুমন একক-এ।
প্রেক্ষাগৃহ প্রায় পূর্ণ, নির্ধারিত সময়ে মঞ্চের পর্দা উঠে গেল, সবাই দাঁড়িয়ে উঠে প্রবল করতালিতে স্বাগত জানালেন কবীর’কে। কবীর মার্জনা চেয়ে নিলেন, শারীরিক কারণে উঠে দাঁড়াতে অসুবিধে, তাই মনে মনে দাঁড়িয়েই তিনি সে অভিবাদন গ্রহণ করলেন।
তবলায়-পারকাসন্সে সঙ্গত করছিলেন ইন্দ্রজিৎ প্রধান, সুরমণ্ডলে রাকা ভট্টাচার্য, গীটারে দীর্ঘদিনের বন্ধু ধ্রুব বসু রায় এবং আমাদের আলোয় আলোয় ভরিয়ে রেখেছিলেন পিনাকী’দা, পিনাকী গুহ।
সন্ধে শুরু হ’ল আগমনী গান দিয়ে। দীর্ঘ সময় কেটে গেছে, বাংলায় আগমনী গান আর তৈরি হয় না। কবীর বেঁধেছেন খেয়াল আঙ্গিকে, কেদার রাগে, রূপক তালে…
“ উমা এলে আর যেতে দেব না,
বাপের বাড়ি ছেড়ে (আর) যেতে দেব না…
নাঁইয়রে আসে উমা মায়ের খালি কোলে,
শরৎ দুলে ওঠে গানের কলরোলে !
বাংলার উমা কোনো মর্দিনী নয়-
অসুর তার চেনা প্রতিবেশী হয়। ”
‘ বাংলার উমা কোনো মর্দিনী নয়- / অসুর তার চেনা প্রতিবেশী হয়। ’ অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর বাঙালী ফেসবুক ভ’রে ছিল এই দুটি লাইনে। এভাবে ভাবতে শেখান কবীর, ভাবতে পারেন কবীর। প্রমাণ করে, ‘ভালো গান’ বাঙালী আজও স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাদরে গ্রহণ করে। হাজারো বিজ্ঞাপনসর্বস্ব যুগে যেখানে সবকিছুই পণ্য, এবং এই ধারণা প্রবলভাবে প্রচলিত, ‘ঠিকঠাক ভাবে বিক্রি’ করতে হয়, সেখানে কবীর সেই নয়ের দশক থেকে এই ধারণাকে বারবার ভেঙে এসেছেন – আসছেন। কবীর প্রমাণ করে দিয়েছেন, গান যদি ভালো হয়, মানুষের মুখে মুখে ঠিক পৌঁছে যাবে। মানুষ পৌঁছে যাবে গানের কাছে।
অনেক নবীন শ্রোতা ; বাংলাদেশ থেকেও এসেছেন কয়েকজন। সুমন ফিরলেন অপেক্ষাকৃত ‘চেনা’ গানে। চেনা গান জ্বালবে আলো… মুহুর্মুহু হাততালি উঠল ‘কখনও সময় আসে…’ গানের শুরুতেই। কিন্তু কতটা ‘চেনা’ এই গান? আজকের অনুষ্ঠানে সুমন নিয়ে এলেন অনেক চেনা গান এবং উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিটা গানে, প্রত্যেকটা গান ‘নতুন’ ছোঁয়ায় পরিবেশন করলেন। Rendition… সার্থকভাবে, সুমনের থেকে শেখার। ‘ঠিক যেন পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা’য় সুমন যেভাবে ‘ঠিক’ আর ‘চোদ্দ আনা’ উচ্চারণ করলেন, আমার দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এসেছিল। আর কবীর বারবার বলছিলেন, এ সবই গুরুদের কৃপা।
‘প্রতিদিন সূর্য ওঠে, তোমায় দেখবে ব’লে’ গান আগেও কত কতবার শোনা, ক্যাসেটে তো বটেই, বহু কনসার্টেও…. নানারকমভাবে শোনা। তবুও আবার একদম অন্যরকমভাবে যেন এলো এই গান। যেন এই গান গতজন্মে শুনেছিলাম.. এ জন্মে আবার নতুন ক’রে শোনা। এই প্রথম।
সময় পেরিয়ে গিয়ে গানের মাঝখানে অনেকে এলেন, ঢুকলেন, জায়গা খুঁজলেন, বসলেন। আজকের সুমন যেন প্রথম থেকেই অনেক শান্ত – তথাগত তিনি। একবার শুধু ‘সাড়া দাও’ গানের আদলে ‘বসে যান, বসে যান, বসে যান’ গাইলেন। মোবাইল বেজে উঠল মুহুর্মুহু, কেউ কেউ ফোনে কথা বলাও শুরু করে দিলেন। পিয়ানোর সাথে সাথেই অযোগ্য সঙ্গত দিয়ে গেল টুংটাং নোটিফিকেশন… কিন্তু সুমন দেখেও দেখলেন না যেন। আজ যেন তিনি নিজের জন্য গাইছেন, নিজের জন্য বাজাচ্ছেন। অথচ, সুমনের কনসার্ট এই ভব্যতারও ক্লাস… বছরের পর বছর ধরে। ঠিক সময়ে ঢোকা, নিতান্ত দেরী হলেও একটা গান শেষ হওয়ার পরে ঢোকা, মোবাইল বন্ধ রাখা, ক্ষিদে পেলে বাইরে থেকে খেয়ে আসা…
আজকের সুমন অনেকটা…. উদাসীন।
বরং এই দেরী করে আসাকেই তিনি রঙ দেন অন্য মাত্রায়। কখনও গেয়ে ওঠেন ‘ তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’… গান শেষে স্মৃতিচারণ করেন বন্ধু শহীদ কাদরীর কথা, যাঁর লেখা কবিতায় ভর করে এই গান হয়ে উঠেছিল, সুমন মনে করান দেশভাগ ; ওদেশ থেকে এদেশে চলে আসা আমরা, তেমনই এদেশ ছেড়ে ওদেশে চলে যাওয়া শহীদ, যিনি যেতে চাননি – যেতে চাননি – যিনি আমৃত্যু স্মৃতিতে আঁকড়ে ধরে রেখেছিলেন কলকাতাকে। বইয়ের উৎসর্গপত্রে লেখা আছে আজও – ‘গানগুলো যেন পোষা হরিণের পাল,
তোমার চরণচিহ্নের অভিসারী…’
নাজমুনের জন্য….
শহীদের জন্য, সুমন আবার গাইলেন ‘তোমাকে অভিবাদন’। যারা দেরী করে এলেন, তাঁদের জন্য আবারও… ‘সেনাবাহিনী বন্দুক নয়, শুধু গোলাপের তোড়া হাতে’ আবারও গাইলেন সুমন।
ডেকে আনেন ‘মন খারাপ করা বিকেল’-এর মেঘ’কে।
বয়েসকে তুড়ি দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারেন যিনি, তিনিই তো গেয়ে উঠতে পারেন ‘বয়েস আমার মুখের রেখায়…’ আর আবারও নিজেকে ভাঙেন সুমন, গড়েন, গড়ে তোলেন আমাদের। ‘সন্ধে নামার সময় হ’লে পশ্চিমে নয় পুবের দিকে, মুখ ফিরিয়ে ভাববো আমি, কোন দেশে রাত হচ্ছে ফিকে…’ গেয়েই সুমনকন্ঠে উচ্চারিত হয় আজান। ঠিক সেই মুহূর্তে টপ উইংস থেকে একফালি হলুদ আলো ফেলেন পিনাকী’দা।
অগর ফিরদৌস বররুয়ে জমিনস্ত,
হমিনস্ত, হমিনস্ত, হমিনস্ত…..
বিশ্বাস করুন, ওই মুহুর্তের থেকে পবিত্র মুহূর্ত আর হয় না। মঞ্চে বসে বারবার লোকটা এভাবে কাঁদাতে পারে। আর সমস্ত কৃতিত্বকে নস্যাৎ করে ব’লে ওঠেন, এ সব গুরুদের কৃপা। বলে ওঠেন, তিনি কোনোদিন এই রকমভাবে ভাবতে পারতেন না, যদি না পঙ্কজকুমার মল্লিক থাকতেন। আজকের এই ‘আমি’ সর্বস্ব যুগে সুমনকে দেখলে অবাক হ’তে হয়। যখন সবাই অন্যের কাজ’কে নিজের বলে দাবী ক’রে যায়, সুমন সেখানে আমাদের বারবার ইতিহাসকে চেনান।
‘মহিষাসুরমর্দিনী’ – আকাশবাণী কলকাতার অনুষ্ঠান, সেখানে ‘রূপং দেহি, ধনং দেহি’ এই গানে কোরাসের পর পঙ্কজকুমার মল্লিক একা ধরছেন… এবং আজানের সুর নিয়ে আসছেন। ‘বেজে ওঠা স্মৃতি’ এবং তার আগেও সুমন বহুবার এই প্রসঙ্গ আলোচনা করেছেন। সুমন বলেছিলেন, ঠিক সময় মিলিয়েই, অর্থাৎ যে সময়ে আজান হয়, ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানে ঠিক সেই সময়েই পঙ্কজবাবু এই ধুঁয়ো ধরেন। অনুষ্ঠানের সাথে চারদিকের আজান মিলেমিশে যায়।
সুমন গাইলেন ’৭১ সালে পঙ্কজকুমার মল্লিকের নির্দেশনায় তাঁর গাওয়া সরস্বতীবন্দনা, বাণীকুমারের লেখা।
সুমন একাকী ধরলেন পিয়ানোয় ‘লোডশেডিং’ গানটা। স্মৃতিচারণায় তুলে আনলেন তাঁর গানের ইতিহাস,
‘লাইটারের আলোয় খুঁজি,
তোমার মুখ ক্লান্ত বুঝি – বয়েস রাখে হাত !’
সুমন তাঁর সেই বান্ধবীর নাম অনুল্লেখ রাখলেন পুরো গান জুড়ে। আমিও তাই রাখছি। সুমনের গানে আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম তাঁর মুখ… এই গানও তো কত কতবার শোনা, অথচ জানি না কী লয়ে সুমন ধরলেন, এই গান একদম অন্যরকম হয়ে এলো আমার কাছে। আমরা যারা চিনি তাঁকে, আমরা জানি, তিনি আরও সুন্দর হয়ে উঠছেন। এমন ভালো মানুষ আমি আমার সারাজীবনে খুব কম দেখেছি এটুকু স্বচ্ছন্দ্যে বলা যায়।
সুমন ধরলেন একটা লোকের ১৭ বছর বয়সে তৈরি গান, বাল্মীকি প্রতিভায় যে কিশোর তৈরি করেছিল –
“ ব্যাকুল হয়ে বনে বনে,
ভ্রমি একেলা শূন্যমনে।
কে পুরাবে মোর কাতর প্রাণ,
জুড়াবে হিয়া সুধাবরিষণে।”
(প্রসঙ্গত ‘একেলা..’ শব্দটি উচ্চারণের সময় সুমন এক চোরা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন… এমন করার জন্য মহাকাল একজন কবীর সুমনকেই প্রসব করেন। রবীন্দ্রনাথের গান গাওয়ার জন্য একজন কবীর সুমনের প্রয়োজন ছিল এ মহাকালের। নইলে রবীন্দ্রনাথের গান অসম্পূর্ণ থেকে যেত ব’লেই আমার মত।)
সুমন জানালেন, এ গানের প্রসঙ্গ তিনি কেন আনলেন।
মাজ খামাজ রাগ, বাবা আলাউদ্দিন খান সাহেবের তৈরি বলেই ইতিহাসে স্বীকৃত। অনেক পরে, বাংলায়, তাঁর সুযোগ্য শিষ্য রবিশংকরের সুরে, এই রাগেই লক্ষ্মীশংকর- এর গায়কিতে আমরা পাই রম্যগীতির গান –
‘ মায়া ভরা রাতি,
সাথী হারা চলে যায়
কেন এলে না…’
একটু লক্ষ করলে দেখা যাবে, এই গানের চলন, মাঝ খামাজের চলন অনেককাল আগে তৈরি বাল্মীকি প্রতিভায়… ‘ ব্যাকুল হয়ে বনে বনে’-কে মনে করায় আমাদের। বলা বাহুল্য, আলাউদ্দিন খান সাহেব ‘চুরি’ করেননি ; এখানেই দু’জন জিনিয়াস মিলে যান। আর আমাদের কাছে এই উপহার তুলে দেন আর এক জিনিয়াস। উল্লেখ করেন ঠুংরি ‘প্রেম অগন জিয়ারা..’, বড়ে গোলাম আলি খান সাহেবের…
রবীন্দ্রনাথ।
আমাদের বড়ো প্রাপ্তি।
একজন মানুষ যিনি একা হাতে বাঙালীর রুচি তৈরি করেছেন, হাতের লেখা পালটে দিয়েছেন একটা গোটা জাতির ; আজ বাঙালীর রুচি নিম্নগামী, তাই রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে পত্রিকার ইস্যু তৈরি হয় – রাণুর চিঠি, উল্লেখিত থাকে – ‘আদর, চুমু।’ সে আদর – চুমুকে কদর্যভাবে প্রকাশ করা হয়।
অথচ, রবীন্দ্রনাথ সারাদিন কী করতেন? একটা লোক যিনি প্রায় সবদিকেই বিচরণ করেছেন, তিনি কী করতেন সারাদিন? কী বাজনা বাজাতেন? ঠাকুরবাড়িতে কী কী বাজনা বাজত? সে সব নিয়ে আগ্রহ নেই।
যেভাবে আমাদের আগ্রহ নেই কবীরের গান এবং বাজনা নিয়ে। দীর্ঘ সময় জুড়ে লোকটা বাংলা আধুনিক গান এবং বাংলা খেয়াল (আমার কাছে বাংলা খেয়ালও আধুনিক গান। কেন নয়?) নিয়ে চর্চা করে যাচ্ছে, পুষ্ট করছে ; তারপরেও তাঁকে ক্রমাগত বিরক্ত করে যাওয়া, উস্কে যাওয়া, ফোন করে উত্যক্ত করা… এবং… কবীর বেশ করেছেন গালাগালি দিয়েছেন।
কবীরের গান নিয়ে চর্চা কতটা হয়েছে? বাজনা নিয়ে? একটা সুর তিনি কীভাবে ভাবেন? লেখার প্রেক্ষিত যেভাবে তৈরি হয়, সুরের প্রেক্ষিতও কি সেভাবেই তৈরি হয়? কবীরের সাউণ্ডস্কেপটা কেমন? খালি গলায় যখন লোকটা গান গায়, এই তিয়াত্তর বছর বয়েসে এসেও… কীভাবে তৈরি করেছেন – করছেন গলাটা? লোকটা পারকিনসন হাতেও ছবি আঁকে কী করে? গানের মাঝে অমন দীর্ঘশ্বাস… কীভাবে করে লোকটা? এইরকম উচ্চারণ? কীভাবে? গানের লয় পালটে পালটে গানটাকে অমনভাবে পালটে দেন কী করে?
এসব নিয়ে চর্চা হয় না কেন? কোনো সাংবাদিক কখনও এসব নিয়ে প্রশ্ন করে কেন জ্বালাতন করে না? কেন ঘ্যানঘ্যান করে কানের পোকা নাড়িয়ে দেওয়ার মতো গান নিয়ে প্রশ্ন করে না কেন? যে লোকটা আর গান সমার্থক… তাঁর কাছে? ক্ষমা চাওয়ার মুখও নেই আমাদের তাঁর কাছে।
আমরা করব না। যে জাতি রবীন্দ্রনাথ বললে প্রথমেই ‘বৌদি’ মনে করে, সে কবীর সুমন বললেও তাই মনে করবে। আর আমি জানি এই লেখার জন্য আমাকেও নানা কথা শুনতে হবে, হয়ে আসছেও… আর তবুও বলবই।
কারণ আমার কাছে এই লোকটা আদ্যপান্ত একটা গান।
‘সময় চ’লে গেছে, এবং চলছে…. চলতি জীবনের গল্প বলছে’ সুমন গল্প ব’লে ওঠেন একা মঞ্চে… যে গানের শেষ থেকে ধরবেন ‘গানওলা’…ধরবেন ‘বিদায় পরিচিতা’..
‘ খুন হওয়া স্বপ্নের চোখ ঢেকে দেওয়া চাই…’
সুমনের সুরেই রেখাবের রূপে, সূর্যোদয়ের রাগে ভীমসেন যোশি গান ধরেন। জাগে জাগে রাত… ভোর হবে ব’লে…
‘ প্রবীণ প্রেমিক যেন স্মৃতির গহনে দিয়ে ডুব ’
দশ মিনিটের বিরতির পর সুমনের কী-বোর্ড ‘ছলাৎ ছলে’ বেজে ওঠে। ‘একলা হ’তে চাইছে আকাশ’… ফিরে আসেন রবীন্দ্রনাথ, একলা থাকেন তিনি, অশ্রুনদীর সুদূরপারে।
সম্পূর্ণ খালি গলায় সুমন ধরেন – ‘তোমায় ছাড়াই বাঁচবো আমি’… তিয়াত্তরের এই যুবক কণ্ঠে সারা প্রেক্ষাগৃহ নির্বাক। দাঁড়িয়ে উঠে টানা আড়াই – তিন মিনিটের হাততালি… সুমন বহুদিনের তেষ্টা মেটালেন।
উঠে এলো তোমাকে চাই। সুমন বললেন সেই নাকতলা পোস্ট- অফিসে চিঠি ফেলার ঢক করে আওয়াজ, একই আওয়াজ বুকেও…. ‘যদি সে নিজেই এসে থাকে’। শান্তিনিকেতনে ছুটি / নরেশ গুহ।
সমস্ত প্রেক্ষাগৃহ তখন গাইছে ‘তোমাকে চাই’, সুমন বাজিয়ে চলেছেন। তিনি আনলেন এক মধুর সাম্প্রদায়িকতা। যে সাম্প্রদায়িকতা আমরা বারবার পেয়ে এসেছি তাঁর থেকে, কখনও ‘আমার ভিতর ও বাহিরে’-তে , কখনও ‘সাড়া দাও’ তে…
পেটকাটি চাঁদিয়াল, বাঁশুরিয়া বাজাও বাঁশী বা আমাদের জন্য গানে বারবার সুমন এক অন্য সুমনকে চেনাচ্ছিলেন। সুমন চেনাচ্ছিলেন সেই বাঙালীকে, যে বাঙালী সব পেয়েও হারায় সহজেই। সুমন জানেন সেটা। তবুও, সুমন জানেন সব বিভ্রান্তির শেষে থেকে যায় চাওয়াটুকু। ভাগের শেষে, সব কাটাকুটির পর, সব হিসেব মেলা না মেলার পর থেকে যায় যে ভালোবাসার দাবীটুকু… সুমন জানেন এরাই সেই ভাগশেষ। তাই হয়তো বিষণ্ণ কণ্ঠে বলে ওঠেন, শুধু গানবাজনা করে গেলেই হয়তো… অন্য এতো কিছুতে জড়িয়ে পড়লাম, লোকজন আমার গানটাকে সিরিয়াসলি নিল না।
প্রেক্ষাগৃহ থেকে বের হয়ে এসেও রেশ কাটে না। প্রবীণ মানুষেরা চোখ ভেজান, আবার কবে সুমন অনুষ্ঠান করবে? আবার কবে আসতে পারব আমরা? বেরিয়ে যেতে যেতে দেখি, গ্রীনরুমের সামনে তখন দীর্ঘ ভিড়… একবার ভালোবাসাটুকু জানিয়ে আসার দাবীদার যারা…
শহর জুড়ে তখন সুমন বইছে…
** মতামত সম্পূর্ণ লেখকের। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ দায়ী নহে