ছোট উপন্যাস।। গোপাল গোঁসাই।। সৌপ্তিক চক্রবর্তী
খাটিয়ায় হ্যালান দিয়ে মেঝেতে বসল। প্লাস্টিকের টুলটার কাছ ঘেঁষে। ফ্যানটা চালিয়ে দিল। ঠিক মুখের হাইটে। মাধবী প্রতিদিন চার্জ দিয়ে রাখে।
মশার ধুপটা আর সাথে তার নিজের বানানো একটা ধুপ জ্বালাল। মশার ধুপের গন্ধটা তার একেবারে সহ্য হয় না। আর সন্ধে নামার সাথে সাথেই গোয়ালঘরে যা মশার উপদ্রব। তখন হয় মশারির ভেতর থাক না হয় মশার ধুপ জ্বেলে বসে থাক।
তারপর
গোপাল ছিলিম সাজতে লাগল। ছিলিম সাজা হয়ে গেলে উঠে গিয়ে আলো নিভিয়ে এসে বসল। তারপর আস্তে আস্তে তুলল ছিলিম। নীলচে ধোঁয়ার ওপর চাঁদের আলো খেলে বেড়াতে লাগল। দেখতে দেখতে গোপাল ছিলিম টানতে থাকল।
বেশ সুন্দর একটা ধুনকি নিয়ে বসে গোপাল বিড়ি ধরাল। ছিলিমটা হাফ খেয়েছে। বাকি হাফ পরদিন সকালের। বাক্সর মধ্যে সব গুছিয়ে খাটিয়ার নিচে রেখে দিয়েছে।
পা দুটো ছড়িয়ে দিল সামনের দিকে। আকাশে বড় করে চাঁদ উঠেছে। আসছে মঙ্গলবার পূর্ণিমা। ওইদিন বাড়িতে সত্যনারায়ণ পুজো।
দুজানালা দিয়ে আলো এসে পড়ছে। গোয়ালঘরে গোবর-গোমূত্র-মশার ধুপ-তার নিজের তৈরী ধুপ-গাঁজা-ভুষির জাব সব মিশিয়ে কেমন একটা মায়াময় গন্ধ তৈরী হয়। ঝিমঝিমে একটা ভাব ধরে যায় তাতে। নেশায় ধূর হয়ে গোপাল সেই গন্ধে বুঁদ হয়ে বিড়ি টানতে থাকল।
এইভাবে রোজই গোপাল বসে বসে ভাবে। আজও তার ব্যতিক্রম নেই। সে অনেক রকম ভাবনা। অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায় গাঁজার নেশায়। তবে চলতেই থাকে এই খাপছাড়া ভাবনাপ্রবাহ…
হুঁ, হুঁ, বাবা, কোর্টে যাই প্রমাণ হয়ে থাকুক, যতই সে জেল খেটে থাকুক, ছোট থেকে যারা তাকে চেনে তাদের মধ্যে অন্তত ফিফ্টি পারসেন্ট লোক বিশ্বাস করে যে সে চুরি করেনি, করতে পারে না…
বুবাই-পিকলু দুটোই তো টুয়েল্ভ পাশ, কিন্তু সে? সে কিন্তু সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা হোল্ডার। যদিও সেটা কাজে লাগল না। তাতে কি? তার নিজের দোষে তো আর নয়…
ধুপকাঠির ব্যবসটা ঠিক দাঁড় করাবে। করে দেখিয়ে দেবে সে। মন্দ চলবে না তার একার সংসার…
গ্রহর দশা তো কেটে গেছে, আগামী দশ বছরে নেই কোনো ফাঁড়া, মানে আনন্দ শস্ত্রী তো তাই বলেছে। হ্যাঁ, পাথর দুটো নিতে হবে…
আর কয়েকদিনেই নতুন ঘর হবে। একটা রট আয়রনের সিঙ্গল খাট কিনবে। জামাকাপড় রাখার জন্য একটা ট্রলিও কি কিনবে? না থাক, ওটা বরং পরে হবে, আপাতত দড়ি টাঙিয়েই কাজ চালিয়ে দেবে। আরও কয়েকটা জিনিশ কিনতে হবে। নোট করে রাখতে হবে সব…
গোপাল হাতের প্রায় শেষ হয়ে আসা বিড়িটা ভাঁড়ে গুঁজে দিয়ে আর একটা ধরাল। চোখ ছোট্ট হয়ে এসেছে তার। লালিটা ঘুমিয়ে পড়েছে মনে হয়। দুলি তখনও জেগে।
তার মায়ের কথা মনে পড়ল। বাপের লাইন ধরেনি বলে মা তাকে খুব ভালবাসত। ডিপ্লোমা পাশ করেছিল বলে তাকে নিয়ে মায়ের একটা আলাদা গর্বও ছিল। তাদের ওপর কোনোদিনও অত্যাচার না করলেও তার বাবা এত মেজাজী ছিল যে মা আস্তে আস্তে কথা বলাই প্রায় ছেড়ে দিয়েছিল তার বাবার সাথে। গোপালের সাথেই হত যত কথা। ইশ! মাকে তো সে আর বাঁচাতে পারল না। জলের মত টাকা খরচ করেও শেষরক্ষা হল না!
তবে একদিকে ভাল হয়েছে যে তার মা আগে ভাগেই মারা গেছে। গোপালের ঘাড়ে চুরির দায় ও হাজতবাস সে মেনে নিতে পারত না। হয়ত সুইসাইড-ফুইসাইড করে বসত।
ফ্যানটা বিছানার দিকে ঘুরিয়ে দিল গোপাল। মশার ধুপটা নিভিয়ে জলের বোতলটা নিয়ে উঠে মশারির মধ্যে ঢুকে গেল। তার সুগন্ধি ধুপ ততক্ষণে পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। মশারি গুঁজে নিয়ে একটু জল খেল তারপর বালিশের পাশে জলের বোতলটা রেখে শুয়ে পড়ল। একবার সেলফোনে দেখে নিল কটা বাজে। এগারোটা চল্লিশ বেজে গেছে।
না, আজ শনিবার সুতরাং এখনই ঘুমাবে না। আরও কিছুক্ষণ জেগে থাকবে। আসলে গোপাল অপেক্ষা করবে…
এগারো
গোয়ালঘরের দরজাটা শব্দ না করে আস্তে আস্তে খুলে ভেতরে ঢুকে এল মাধবী। আবার একইভাবে বন্ধ করে দিল। গোপাল জেগেই ছিল।
এই নিয়ে তিন নম্বর শনিবার তার কাছে মাধবী এল। বাংলার নেশায় অয়ন তখন গভীর ঘুমে। টুসুও।
প্রথম দিন গোপাল ঘুমাচ্ছিল। মশারি তুলে তার বুকে হাত বুলিয়ে তাকে তুলে দিয়েছিল মাধবীমামী। ঘুম ভেঙে চমকে উঠে ছিল গোপাল। তারপর যখন তার মাধবীমামী একটা হাত নিজের বুকে টেনে নিয়েছিল তাতে আরও বেশি চমক ছিল। বুঝেছিল মামী ব্রা পরেনি।
গোপাল বিশেষ দেরি করেনি আর। মশারি তুলে খাটিয়ায় পা ঝুলিয়ে বসে ছিল। মাধবীমামী কিছুক্ষণ বসেই ছিল। খানিক জড়ামড়ির পর উঠে দাঁড়িয়েছিল। তার মামীর কোমরটা জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ ঘষতে ঘষতেই আবছা দেখেছিল মামী নাইটিটা নিজে থেকেই ওপর দিকে গুটিয়ে আনছে। বাকিটা গোপাল নিজে হাতেই। নাইটি গুটিয়ে কোমরের ওপর তুলে দিয়ে দেখেছিল রাতে শোয়ার সময় তার মামী প্যান্টি পরে না।
উঠে দাঁড়িয়ে লুঙ্গি খুলে গোপাল এরপর করতে শুরু করেছিল। দেওয়ালে দুহাতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে তার মাধবীমামী। আর পেছনে দাঁড়িয়ে গোপাল। মামীর কোমরটা দুহাতে চেপে ধরে একমাথা ধুনকিতে করেছিল কিছুক্ষণ।
আজ সাহস করে গোপাল মাধবীর নাইটিটা খুলে দিল। মাধবী বিন্দুমাত্র বাধা দিল না বরং এতটা সহযোগিতা করল যেন অপেক্ষায় ছিল কখন গোপাল সম্পূর্ন উলঙ্গ করে নেবে তাকে। তারপর ওই একই ভঙ্গিতে, যেভাবে দাঁড়িয়ে করে তারা।
ভুষির খালি বস্তার ফাঁক দিয়ে আসা চাঁদের আলো মাধবীর মসৃণ পিঠে-পাছায় বাউন্স করে এলোপাথাড়ি পিছলে যাচ্ছিল। আর সেটা দেখতে দেখতে ঘামতে ঘামতে পরপর না থেমে গোপাল যেন শাবল চালাচ্ছিল। পায়ের পাতায় লুঙ্গি। স্যান্ডো গেঞ্জিটা পেটের ওপর টেনে তুলে ভাঁজ করা।
প্রথম দুদিন তার মামী নাইটির ওপরের কিছুটা মুখে ঢুকিয়ে চাপা শীৎকার করেছে। আজ বেশ স্পষ্ট। করুক ক্ষতি নেই তাতে। গোপাল জানে মাল খেয়ে তার মামা অঘোরে ঘুমায়। রাতে হিসু করতে উঠে উঠোন থেকেই সে পেয়েছে তার প্রবল নাকডাকার শব্দ। তা ছাপিয়ে এই শীৎকার তার কিংবা টুসুর কর্ণগোচর হওয়া নিতান্তই দুর্ভাগ্যের।
অতএব এই শীৎকার তরঙ্গে গোয়ালঘরে আজ অবিরত ভালবাসা। একদম ক্ষরণের ঠিক আগ অব্ধি। কে যেন গমগম করে বারবার বলে চলেছিল তাকে ও মাধবীকে যুগপৎঃ চালাও হে, শরীর। নাও হে, যতটুকু আছে ক্ষুধামুখ, ভরে নাও। আজ স্রেফ ভালোবাসা হবে বেনিয়ম।
বেশিক্ষণ নয়। আগের দুবারের মতোই ওই মিনিট দশ-বারো। সব মিলিয়ে।
গোপাল দড়ি থেকে গামছা টেনে মুছে নিল তারটা। তারপর মাধবীকে মুছিয়ে দিল। গামছাটা কেচে দেবে কাল সকালে।
লালি-দুলি কেউ জেগে ছিল বা গিয়েছিল কি? গোপাল কিংবা মাধবী তা লক্ষ্যই করেনি।
তবে জেগে থাকলে বা গেলে গোপাল-মাধবীর এই মিলনের সাক্ষী পূজ্যা গোমাতা। হয়তবা গোমাতাদ্বয়।
মাধবী চলে যওয়ার পর গোপাল বাথরুমে গেল। ফিরে এসে জল খেল। একটা বিড়ি ধরিয়ে মশারির ভেতর ঢুকে খাটিয়ায় আরাম করে বসল। বেশ ক্লান্ত লাগছে। বিড়িটা শেষ করেই ঘুম দেবে গোপাল।
গোয়ালঘরের গন্ধে এখন তার মাধবীমামীর গন্ধটাও মিশে আছে। গোপাল সেটা স্পষ্ট টের পাচ্ছে। সে একটা জোরে শ্বাস নিল। তারপর আস্তে আস্তে ছেড়ে দিল। বিড়িতে টান দিয়ে ভাবতে লাগল আবার…
হ্যাঁ, মামীর সাথে করছে। মানে মামীই তো চেয়েছে! সে তো আর হামলে পড়েনি। ভাবেওনি। সত্যি বলতে কি ভালই লাগছে কিন্তু করতে…
বউ তো ভেগে গেল। জেলে থাকতে তো আর করাও হয়নি। উফঃ সে কতদিন! কিন্তু কোনো উপায় ছিল না সে কামনা গিলে নেওয়া ছাড়া। বউ সুখ না দিলেও আজ মামী দিচ্ছে। ক্ষতি কি! সেও তো দিচ্ছে সুখ তার মামীকে…
অয়নমামার কথাই যদি ভাবতে হয় তবে হ্যাঁ, এটা ঠিক যে মামী ও সে দুজনেই তার বিশ্বাসের সুযোগ নিচ্ছে। কিন্তু এটাও তো ঠিক যে মামাকে দিয়ে মামীর পুরো সুখ হচ্ছে না বলেই মামীর তার কাছে আসা। একে মামার বয়স বেশি তায় আবার আজকাল কেমন স্বাত্তিক গোছের হয়ে গেছে। হয়ত সেক্স-টেক্স করে না তেমন। তো মামী কেন চেপে থাকবে তার কামনা! শরীরের খিদে কার না থাকে…
যা হচ্ছে হোক। সে তো চলেই যাবে আর কদিন পরে…
তখনও যে একেবারে চান্স থাকবে না তা নয় অবশ্য। পাশের বাড়িতেই তো যাবে সে। সময় করে চলে আসবে না হয় একবার দুপুরের দিকে। অয়নমামা তো তখন ঘুমায়…
আনন্দ শাস্ত্রীও তো বলেছে তার জীবনে অনেক সঙ্গিনী হবে। তো এ তো হাতের লিখন কিংবা কপালের সে আর আটকাবে কিভাবে…
হাজতবাস যেমন তার কপালে ছিল, বউ পালানো ছিল, পাড়াছাড়া হওয়া ছিল, তেমনই মামীসম্ভোগও আসলে তার ভাগ্যে লেখা ছিল। নিশ্চয়ই…
চাঁদের আলোয় ধুনকি, তৃপ্তি আর ক্লান্তি নিয়ে বিড়ি টানতে টানতে গোপালের মধ্যে এমনই সব ভাবনার চোরাস্রোত খেলতে থাকল…
একটু বাদে ঘোর কাটল। বিড়িটা নিভে গিয়েছিল। আর নতুন করে ধরাল না গোপাল। মশারি তুলে খাটিয়ার নিচে রাখা ভাঁড়ে ফেলে দিল।
ব্যাস, আর কিচ্ছু ভাববে না। লুঙ্গিটা হাঁটুর ওপর তুলে দিয়ে ডানপাশ ফিরে শুয়ে চোখ বুঁজল।
বারো
জলঘট
প্রদীপ, গাছা, ধূনোচী
সিন্দুর
পৈতা
লালচী (বড়)
লালসুতা
তিল, হরিত্বকী
পঞ্চশস্য
পঞ্চগুড়ি
পিট ও অঙ্গুড়ী
ঘৃত, মধু, কপূর, ধূনো
ধুপবাতী, মোমবাতী
——————-
জল চৌকি
তোয়ালে, গামছা, ধুতী কাপড়
থালা, গেলাস, বাটি
আতপ চাউল
পাকাকলা, পাঁচ ফল, ভোগের ফল
আটা/ ময়দা/ সুজি/ চাউলের গুড়া
গুড়, চিনি, বাতসা,কদমা, সিংগে
দুধ, দই, মিষ্টি, জিলেপি
ফুল, তুলসি, দূর্ব্বা, বেলপাতা
——————-
ভোজ্য, দক্ষিণা
ওপরের ফর্দটা ধরিয়েছিল পুরুত কেশব ভটচাজ। বাজারে-দোকানে ঘুরে সব কটা উপকরণই জোগাড় করেছে মামা-ভাগ্নেতে। আজ বাড়িতে সত্যনারায়ণ পুজো। উঠোনেই আয়োজন করা হয়েছে।
কেশব ভটচাজের চেহারায় একটা গাম্ভীর্য আছে। দেখলেই একটা সম্ভ্রম হয়। বয়স ষাটের ওপর। লম্বা দোহারা শরীর। গায়ের রং কালোর দিকেই। কাঁধ দুটো বেশ চওড়া। কব্জি দুটোও। গায়ে নামাবলী আর নতুন পৈতে। পরনে ধপধপে ধুতি।
বেলা এগারোটা-সাড়ে এগারোটা হবে। কথাপাঠ শুরু করে দিয়েছে কেশব ভটচাজ। বাড়ির লোক বাদে নিমন্ত্রিত বলতে আনন্দ শাস্ত্রী আর তার বউ-ছেলে। আনন্দ শাস্ত্রীর বাবার শরীর ভাল নয় বলে তার মা-বাবা আসেনি। প্রসাদ নিয়ে যাবে।
গোপাল বসে আছে টুসুর পাশে। আজ সে ধুপকাঠি নিয়ে বেরোয়নি আর। সকালেই স্নান সেরে নিয়েছে। তার মামার একটা ধুতি পরে বসেছে। গায়ে কাচা টি-শার্ট। মনটা বেশ ভাল লাগছে। পূজোর ধুপকাঠি সেই দিয়েছে। নিজের হাতে তৈরী বলেই বোধহয় গন্ধটা এত বেশি ভাল লাগছে! হ্যাঁ, মিষ্টিটাও এনেছে গোপাল।
আনন্দ শাস্ত্রীর ছেলেটা টুসুর চেয়ে সামান্য বড়ই হবে বয়েসে। বার কয়েক ঘাড় ঘুরিয়ে টুসুকে সে ঝাড়ি মেরেছে। গোপাল সেটা লক্ষ্য করেছে। টুসুটাও বেশ পাকা। চোরা চোখে রঙ্গভরা হাসিতে বিঁধেছে ছেলেটাকে। গোপালের মন্দ লাগেনি বিষয়টা বরং তার আর চন্দনার সেই ছেলেবেলায় দেখা হয়ে যাওয়ার দৈবাৎ সুযোগগুলোর কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল।
ভোজ্যের আয়োজনে আছে গোবিন্দভোগ চাল ও মুগ ডালের খিচুড়ি, আলু-কুমড়ো-বেগুন ইত্যাদি ভাজা আর অবশ্যই সিন্নি।
গোপাল জানে যে তার অয়নমামার কাছে ভক্তি ও নিষ্ঠাই হল এখন জীবনের ধ্যান-জ্ঞান। তার উদ্যগেই এই পুজোর আয়োজন। প্রসন্ন মুখে বসে সে বিভোর হয়ে পাঠ শুনছে। হাতদুটো জড়ো করে কোলের ওপর রাখা।
তবে গোপালের কাছে পুজো-ভোজ্য এসবের উর্ধে যেটা আজ সব থেকে বড় ও খুশির ব্যাপার তা হল আজ আনন্দ শাস্ত্রী এগ্রিমেন্টটা নিয়ে এসেছে। উকিল গতকাল রাতেই দিয়ে দিয়েছিল। আনন্দর বাবা আর গোপালের নামে এগ্রিমেন্ট। বাড়ির মালিক তো আনন্দর বাবা।
আনন্দই তার বাবাকে রাজি করিয়ে গোপালকে বিশ্বাস করে থাকতে দিচ্ছে। গোপাল তাকে ঠকাবে না এটা সে নিশ্চিত করে বলতে পারে। আসলে কোনোদিনই গোপাল কাউকে ঠকায়নি। সে নিজেই ঠকেছে। মহা ঠকা।
পুজো শেষ হলেই সইসাবুদ হবে। গোপাল ভেতরে ভতরে ছটফট করছে। আহঃ আগামিকালই নতুন ঘরে যাবে সে! কি যে একটা আনন্দ হচ্ছে তার!
গতকাল আনন্দ তাদের ঠিকে কাজের লোক গঙ্গাকে দিয়ে সেই ঘর-বাথরুম ভাল করে সাফ করিয়েছে। গোপাল নিজে গিয়ে দেখেও এসেছে তা। পরিষ্কার করার পর ঘরটার শোভা যেন দ্বিগুন বেড়েছে!
পুজো শেষ হল। দক্ষিণা ও ভোজ্য নিয়ে কেশব ভটচাজ চলে গেল।
তারপরই এল সেই বহু প্রতিক্ষীত মাহেন্দ্রক্ষণ। গোপাল সই করল এগ্রিমেন্টে। সাক্ষী অয়ন এবং আনন্দ।
হোক না ছোট্ট একটা আধপাকা ঘর। তবুও তো ঘর। নিজের আয়ে ভাড়া দিয়ে থাকবে। খুশিতে ডগমগ গোপাল মনে মনে ভাবে ঘরছাড়া-পাড়াছাড়া ‘গোপাল’ এই মাস দেড়েকের মেহনতেই আবার পাড়া ও ঘর হাসিল করে নিল।
হ্যাঁ, এটা ঠিক যে অয়নমামা-আনন্দ শাস্ত্রী তাকে বিশ্বাস করে সুযোগ দিল একটা। এর সদ্ব্যবহার গোপাল করেই ছাড়বে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে সে।
আনন্দ শাস্ত্রীও খানিক আগে সপরিবারে খেয়ে বাড়ির জন্য প্রসাদ নিয়ে চলে গেছে। অয়ন-টুসু ঘরে খেতে বসেছে। উৎফুল্ল গোপাল গোয়ালঘরে গিয়ে একটা ছিলিম সেজে হাফ খেল। আজ একটু বেশিই হয়ে যাবে হয়ত। হোক গে যাক। খুশিটাকে তো সেলিব্রেট করতে হবে, নাকি!
সিঁড়িতে বসে হাতে থালা ধরে পরম তৃপ্তিতে গোপাল পুজোর ভোগ খাচ্ছে। আজই প্রথম কিছু খেল সে এই বাড়িতে।
খেতে খেতে গোপাল বলে উঠলঃ আহঃ মাধবীমামী, তুমি কি চমৎকার খিচুড়ি রাঁধো, গো!
শুনেই হেঁশেলে খুশির সাথে খানিক লজ্জামেশা হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল মাধবীর মুখ। সামান্য টোল খেলল গালে।
গোপাল অবশ্য দুটোর কোনোটাই দেখতে পেল না।
হেঁশেল থেকেই আদরভরা গলায় মাধবী বললঃ দাঁড়াও, আর একটু খিচুড়ি দিই, তোমায়।
‘দাও’ বলে গোপাল কুমড়োভাজা দিয়ে একগ্রাস খিচুড়ি মুখে পুরে দিল।
গোপালের অগোচরেই চিরায়ত ভঙ্গিতে ডানহাত তুলে কপালের ঘাম মুছে মাধবী খিচুড়ির ডেকচি নিয়ে উঠতে গেল…
গোয়ালঘর থেকে লালি-দুলির মধ্যে কেউ একটা ডেকে উঠল: হাম্বাআআআ…
– সমাপ্ত –