‘কালো, তাতে বয়েই গেল’ ছক ভাঙল আলোর নাচন
তৃতীয়পক্ষ ওয়েব- একটি ফেয়ারনেস ক্রিমের টিউব সদর্পে মাড়িয়ে দিচ্ছে কালো পা। সেই পায়ে লাল আলতা সঙ্গে সোনার নূপুর। আর সেই পা হলো মা কালীর। তার নীচে লেখা দুটো শব্দ ‘বয়েই গেছে’। কালীপুজোর সকাল থেকেই এই পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ভাইরাল। বার্তাটা স্পষ্ট- কালোই ভালো, ফেয়ারনেস ক্রিম মাখতে বয়েই গেছে।
এখনও যেখানে সুশ্রী, ফর্সা পাত্রী চাই বলে বিয়ের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়, গায়ের রং কালো বলে সমাজে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য সহ্য করতে হয়, সেখানে এই সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট যেন অনেক মেয়ের কাছেই অবদমিত প্রতিবাদের ভাষা।
‘আল্টিম্যাড মিডিয়া’ নামে এক অ্যাড হাউস তাদের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে পোস্ট করেছিল এই বিজ্ঞাপনটি।যা মুহূর্তের মধ্যে কয়েক লক্ষ শেয়ার হয়ে যায়! অতি সম্প্রতি বিভিন্ন নামজাদা সংস্থা দিওয়ালি উপলক্ষ্যে বেশ কিছু সামাজিক বার্তাবহ বিজ্ঞাপন ডিজিটাল ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করেছে, যা এ ভাবেই ভাইরাল হয়েছে।
‘আল্টিম্যাড মিডিয়া’র দুই কর্ণধার সুজয়নীল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভীক রায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত এই ‘বয়েই গেল’ পোস্টটি নিয়ে জানিয়েছেন, ‘একদিকে আমরা যেমন কালীকেও পুজো করছি, অন্য দিকে ফেয়ারনেস ক্রিম মেখে বা ছবিতে ফিল্টার ব্যবহার করে নিজেকে ফর্সা করে তোলার চেষ্টা করছি। আমাদের প্রতিবাদ ছিল এটার বিরুদ্ধেই। দীপাবলিতে এটাই আমাদের প্রতিবাদী শুভেচ্ছা।’
এই ধরনের বিজ্ঞাপন কি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে পারবে? এতটা আশা করেন না সুজয়নীল, তবে ভাবেন, কোনও জিনিস ভাইরাল হলে তার একটা প্রভাব জনমানসে পড়বেই। এক্ষেত্রে ডিজিটাল ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন সুজয়নীল।
বিজ্ঞাপনে বদলের এই ট্রেন্ড এখন আরও বাড়বে বলেই মনে করেন ‘ইনার সার্কেল অ্যাডভারটাইজিং’-এর কর্ণধার কাঞ্চন দত্ত। তাঁর কথায়, কোনও উৎসবে শুভেচ্ছা জানিয়ে বা ডিসকাউন্ট, অফারের বিজ্ঞাপন দিয়ে লোককে আকৃষ্ট করা এখন অনেকটাই ব্যাকডেটেড। সেগুলো থেকে বেরিয়ে এসে লোকের মনে দাগ কাটতে পারলে তার স্থায়িত্ব অনেক বেশি।
তবে প্রশ্ন একটা আসেই, ‘বছরের একটা দিন কালোর মধ্যে আলো খুঁজে লাভ আছে কিছু? গায়ের কালো রং নিয়ে কি মনোভাব বদলাতে পারবেন?’। এই ‘বয়েই গেল’ পোস্টের নীচে জমা পড়ছে এমন অনেক কমেন্টও।