কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিজেপি – বিরােধী জোট অসম্ভব
অপূর্ব দাস
ভবানীপুর বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে প্রত্যাশামতােই জয়ী হয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমাে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে মুখ্যমন্ত্রীত্ব নিয়ে কোন জটিলতা তৈরী হলাে না। কিন্তু এই উপনির্বাচনের প্রচার চলাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর ভাইপাে অভিষেক বিভিন্ন সভায় কংগ্রেসকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। অথচ মাস দুয়েক আগে তৃণমূল নেত্রী দিল্লিতে গিয়ে বিজেপি–বিরােধী দলগুলির নেতাদের সঙ্গে অনেকগুলি বৈঠক করেন। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর ডাকে চা-চক্রে অংশ নেন। শ্রীমতি গান্ধীর বাসভবনে দুই নেত্রীর কথাবার্তা হয়। সেই সময় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও উপস্থিত ছিলেন। সেই সময় সংসদের বাদল অধিবেশন চলছিল। সংসদের উভয়কক্ষে কংগ্রেসই সবচেয়ে বড় বিরােধী দল। লােকসভায় কংগ্রেসের নেতা এবং রাজ্যসভায় কংগ্রেসের নেতা বিরােধী দলগুলির সংসদীয় নেতাদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করেন। অধিকাংশ বৈঠকেই তৃণমূল প্রতিনিধি পাঠায়।
নয়াদিল্লিতে সাংবাদিকদের মুখােমুখি হয়ে মমতা বলেন, তাঁর লক্ষ্য আগামী ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি’কে হারানাে এবং নরেন্দ্র মােদিকে গদিচ্যুত করা। বিজেপি–বিরােধী জোটের নেতা হতে তিনি চান না। তার লক্ষ্য আগামী লােকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে অসম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ মাের্চা গঠন করা। এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাই চলছিল। কিন্তু তারপর হঠাৎ কি হল? প্রথমে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর ই.ডি-র দপ্তরের বাইরে মিডিয়ার কাছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ঝাঝাল ভাষায় আক্রমণ শানালেন। তারপর উপনির্বাচনের প্রচার চলাকালীন পিসি–ভাইপােদুজনেই কংগ্রেসের দিকে অভিযােগের বিষাক্ত তির ছুঁড়লেন।মমতা তাে বলেই দিলেন ‘কংগ্রেস বিজেপি–কে ম্যানেজ করে চলে। অভিষেক নাম না করে রাহুলের উদ্দেশ্যে বলেন কংগ্রেসের নেতার যাবতীয় কর্মকান্ড ট্যুইটারেই সীমাবদ্ধ। তিনি রাস্তায় নামেন না। প্রসঙ্গত, কংগ্রেস ভবানীপুর কেন্দ্রের উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয় নি। সি.পি.আই (এম) প্রার্থী শ্রীজীব বিশ্বাসকেও সমর্থন করেনি।
সম্প্রতি দলীয় মুখপত্র ‘জাগাে বাংলা’–র উৎসব সংখ্যায় নিজের লেখা রাজনৈতিক নিবন্ধ “দিল্লির ডাক”–এ মমতা বলেছেন দিল্লিতে বিজেপি-র মােকাবিলা কংগ্রেস সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ২০১৪ এবং ২০১৯–র লােকসভা নির্বাচনের ফলাফল থেকে তা স্পষ্ট হয়ে যায়। প্রসঙ্গত, ২০১৪–র নির্বাচনে কংগ্রেস পায় মাত্র ৪৪টি আসন। আর ২০১৯–এ তা বেড়ে হয় ৫২। কিন্তু এসব তথ্য তাে তৃণমূল নেত্রীর অজানা নয়। তাহলে দলীয় মুখপত্রের নিবন্ধে নেত্রী বিশ্লেষণ করে কিভাবে বলেন, “বিজেপি
মােকাবিলায় কংগ্রেস ব্যর্থ। বাস্তব বুঝে জোটে আসুক কংগ্রেস। একই সঙ্গে নেত্রীর সাফ কথা তিনি কংগ্রেস ছাড়া মহাজোটের কথা ভাবছেন না। আসলে মমতা চাপ বাড়িয়ে বিজেপির বিরােধী জোটের মুখ হতে চাইছেন। এক্ষেত্রে ২০২৪–র লােকসভার ভােটের ফলাফল মহাজোটের অনুকূল হলে তিনি প্রধানমন্ত্রীত্বের জোরালাে দাবিদার হয়ে উঠতে পারবেন।।
সবদিক বিবেচনা করে এক্ষেত্রে একটি প্রবচনের উল্লেখ করা যায়। এই প্রবচনটি হল সময় বাকি, এর মধ্যে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে যাবে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হতেও বেশি সময় লাগে না। কোন দল কোন দিকে যাবে তা এত আগে বলা যায় না। তবে একটি কথা জোর দিয়ে বলা যায় যে, কংগ্রেসকে দূরে সরিয়ে রেখে বিজেপি–বিরােধী জোট অবাস্তব। লােকসভার ৫৪৩টির মধ্যে ২০০টি আসনে বিজেপি–র সঙ্গে কংগ্রেসের সরাসরি লড়াই। এছাড়াও আরও ৭৩টি আসনে কংগ্রেসের জোট সঙ্গী অথবা সহযােগী দলগুলির সঙ্গে বিজেপি–র লড়াই। এই অবস্থায় কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বা সামনে না রেখে কিভাবে বিজেপি–বিরােধী জোট সম্ভব? তৃণমূল সুপ্রিমােকে বাস্তবটা বুঝতে হবে।
গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখন্ডের মতাে রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপি–র মুখােমুখি লড়াই। অসম, কর্ণাটক, মণিপুর, মেঘালয়, গােয়ায় বিজেপি-র মূল প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস। তৃণমূল নামে সর্বভারতীয় দল হলেও এখনও পশ্চিমবঙ্গের বাইরে মণিপুর ও অসমের মতাে রাজ্যে তৃণমূল দু’একটি আসন পেলেও তা ধর্তব্যের মধ্যে নয়। ত্রিপুরাতে সম্প্রতি দল পারাখলেও এখনও বলার মতাে সাফল্য নেই। তাই বাস্তবকে মাথায় রেখেই জাতীয় স্তরে বিজেপি–বিরােধী জোট গড়ার ক্ষেত্রে তৃণমূলকে এগােতে হবে। একথাঠিক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভা ভােটে পরপর তিনবার জিতে জয়ের হ্যাটট্রিক করেছেন। বাংলায় বিজেপিকে রুখে দিয়েছেন। একই সঙ্গে একথাও মাথায় রাখতে হবে লােকসভা তাদের সদস্য সংখ্যা ২২। কংগ্রেসের ৫২। তাই কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে শরদ পাওয়ার, তেজস্বী যাদব, হেমন্ত সােরেন বা এম কে স্ট্যালিনের পক্ষে তার হাত ধরা খুবইকঠিন।
লেখক পরিচিতি – অপূর্ব দাসের জন্ম ১৯৬৪ –র ২৪মে, মুর্শিদাবাদের বিখ্যাত জমিদার পরিবারে। বাবা ছিলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও চলচ্চিত্র প্রযােজক। মা রাণী রাসমণীর পরিবারের মেয়ে। ছােটবেলা থেকেই ওঁর লেখালেখির প্রতি ঝোঁক। আরেকটা উল্লেখযােগ্য দিক হল যেকোনও শ্রেণির মানুষের সঙ্গে স্বচ্ছন্দে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা। নীল রক্তের আভিজাত্য এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ছড়ায়নি। কলকাতা শ্বিবিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় এ.এ পড়তে পড়তেই আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে যুব শিবিরে যােগ দেওয়ার যােগ্যতা অর্জন করেন। আকাশবাণী(কলকাতা)-র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ইভনিং ব্রিফ, ওভারল্যান্ড সহ একাধিক দৈনিকে কাজ করেছেন। দীর্ঘদিন বিভিন্ন পেশাগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়িয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল – এল.বি.এস অকাদেমি অব মিডিয়া স্টাডিজ এবং সিগনাস ইনস্টিটিউট অব মাস কমিউনিকেশন। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১০। উল্লেখযােগ্য বই প্রতিবাদী না সুবিধাবাদী এবং অনিকেতের ডায়েরি।
** মতামত সম্পূর্ণ লেখকের