গল্প। ম্যাজিক অঙ্কুর। সুদীপ ঘোষাল
পলিদি বিজ্ঞানী । পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।গোয়েন্দাগিরিও করেন। এটা তার শখ।বুুদ্ধিতেে শান দেন নিয়মিত।
খুব কম সময় বাইরে বেরোন।
সবসময় নিজের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখেন কখন কিভাবে সমাজের উপকার করা যায়।
দিদির বাড়ির একটি ছেলে আছে। তার নাম রিপন রিপন। ঘাড় বাঁকা।
সে চলতে ফিরতে পারে না। একটা তিন চাকার রিকশা ছোট থেকে কিনে দেওয়া হয়েছে। তাতেই চেপে যাওয়া আসা করে। কিন্তু রিপন লেখাপড়ায় খুব ভালো তার বুদ্ধি খুব প্রখর।
দিদির ঘরে তিনজন সদস্য সুমন বাবু নিজে তার এক চাকর তার দেখাশোনা করে আর একটা কুকুর।
কুকুর প্রভুভক্ত প্রাণী। সমানভাবে কুকুরটি খুবই প্রিয় তার। ইঁদুর ধরে দেয় কুকুরটি সুমনবাবুকে।
সঙ্গে যে থাকে তার নাম তোতন।। তোতন তাঁর দেখাশোনা করে।
সবকিছুই তোতনই করে। লোকের সঙ্গে কথা বলা সব কিছুই সে সামলায়।
আজ ভোরে উঠেই দিদির মাথায় একটা চিন্তা বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে।
সে তোতনকে বলছে, মহাভারতের আদিপর্বের গল্পটা জানিস। ধৃতরাষ্ট্র পত্নী দু’বছর গর্ভধারণের পর প্রসব করলেন একটি গোলাকার মাংসপিণ্ড। সেটি তুলে দেওয়া হল ঋষি দ্বৈপায়নের হাতে। তার থেকে তিনি 100 টি খন্ডে বিভক্ত করে বিভিন্ন ওষুধি উদ্ভিদে ভিজিয়ে একটি কাপড়ের টুকরো নিয়ে সেগুলির মধ্যে টানা দু’বছর রেখে দিলেন।
আজকের টেস্ট টিউব বেবি সৃষ্টির বিভিন্ন পর্যায়ের সঙ্গে কোথাও মিল আছে। কারো কারো মতে প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞান খুব উন্নত ছিল।
তোতন বললো তাহলে আর্য ঋষিরা কত পণ্ডিত ছিলেন বলুন। তারা নিশ্চয়ই এইসব ব্যাপারে বিজ্ঞানসম্মত উপায়গুলো জানতেন।
দিদি আবার বললেন আমাদের পাশের বাড়ি রিপনের রোগ হয়েছে। তার নাম ডাক্তারি ভাষায়, আমিও ট্রফিক লেটারাল স্ক্লোরেসিস সংক্ষেপে এ এল এস।
বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং যার অসহায় শিকার। এমন একটা রোগ যা মস্তিষ্কের নিউরন অর্থাৎ কোষগুলোকে নষ্ট করে দেয়। ফলে প্রচুর অঙ্গ কাজ করে না।
কোষ বেশি অচল হয়ে পড়ে।
তোতন তো অত পড়াশোনা জানেনা।
সে সবে গ্রাজুয়েট হয়েছে। কিন্তু তবু তার জানার আগ্রহ অনেক।
সে বলল যে, এই অঙ্কুর কোষ আসলে কি? অঙ্কুর কোষ দিয়ে কি সব অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা যায়?
বিজ্ঞানী দিদি বলেন, প্রথমেই সম্ভাবনার দিকে তাকানো যাক দেশ-বিদেশের বহু বিশেষজ্ঞ মনে করেন অঙ্কুর কোষের গবেষণা পৃথিবীতে রোগবালাইয়ের মুখচ্ছবি একদিন আমূল বদলে দেবে।
নির্মূল করবে ক্যান্সার থেকে শুরু করে ডায়াবেটিস।
ক্যান্সার এবং বহু বংশগতীয় অসুখ নিখুঁতভাবে মেরামত করে দেবে এবং তা থেকে ফুসফুস লিভার কিডনি ইত্যাদি বিশেষ করে তা শরীরের মধ্যে নির্দিষ্ট অংশে ইনজেকশনের মাধ্যমে দিয়ে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষ মেরামত করা হবে।
বিজ্ঞানী ভোরবেলা হাঁটতে বের হন আর দেখেন তিন চাকার সাইকেলে করে রিপন পড়তে যাচ্ছে তার মাস্টারের কাছে।
তিনি রিপন কে ডেকে বললেন আমার ঘরে তুমি মাঝে মাঝে যাবে। আর তোমার সঙ্গে আমার প্রয়োজন আছে। তোমার বাবা-মাকে বলেই আমার ঘরে আসবে।
রিপনের বাবা মা কারণ জিজ্ঞেস করাতে বলল দিদি বললেন যে, ও এলে আমি বিজ্ঞানসম্মত ব্যাপারগুলোকে বোঝাতে পারব এবং আমাদের গল্প হবে। আর ওর রোগের চিকিৎসা করব।
রিপনের মা বললেন, ওর কোন ক্ষতি হবে না তো?
সুমন বললেন, আমাকে সবাই পাগল বলে। তবে আশা করি আপনার ছেলেকে আমি সারিয়ে তুলতে পারব।
রিপনের বাবা মা আলোচনা করে দেখল ছেলেটা এমনিতেই অচল। বেঁচে থেকেও মরার মত। তাই ওরা ঠিক করলেন সুমনবাবুই ওদের শেষ ভরসা। দেখা যাক কি হয়।
রিপন এবার থেকে প্রায় রোজই বিজ্ঞানীর ঘরে আসে এবং খুব কৌতুহলী ওঠে। কিন্তু ও খুব কার্যকরী কথা বলে। ও খুব পড়াশোনায় ভালো। ওর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অচল হলেও পড়াশোনায় খুবই ভালো। এক থেকে দশের মধ্যে ছিল ওর রোল নম্বর।
বিজ্ঞানী কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে একটা নিডল দিয়ে ওর শরীরের হাতে পায়ে তিনি ওষুধ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আস্তে আস্তে চিকিৎসা করতেন। আপনি এগুলো কি করছেন?
তোমার ঘাড় সোজা করার চেষ্টা করছি। তোমার হাত-পা সচল করার চেষ্টায় আমি তোমাকে আসতে বলেছি। তোমার বাবা-মাকে সবকথা বলার প্রয়োজন নেই এখন।
যখন তুমি সুস্থ হবে তখন তারা এমনিতেই জেনে যাবে। তাছাড়া আমি ওনাদের পারমিশনও নিয়েছি তোমার চিকিৎসা করার জন্য।
রিপন খুব বুদ্ধিমান ছেলে সে সময় পেলেই দিদির কাছে চলে আসে আর বিজ্ঞান এর সমস্ত কিছু জানতে চায়।
দিদি তার যথাযথ উত্তর দেন এবং তার মাঝেই তার চিকিৎসা চালিয়ে যান অঙ্কুর কোষের মাধ্যমে তার চিকিৎসা চলে।
বিজ্ঞানী, রিপনের নিজস্ব অঙ্গ থেকে দেহকোষ নিয়ে প্রতিস্থাপনযোগ্য যন্ত্রটি তৈরি করেছেন এবং এতে কোনো সমস্যা নেই।
সেক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার কথা মাথায় রেখেছেন তিনি, তা হল কোন অঙ্গ থেকে কেবল সেই অঙ্গ বা তার অংশবিশেষ টি সুস্থ করা যায়।
প্রথমে তিনি হাত থেকেই চিকিৎসা শুরু করেন এবং যথাযথ ফল পেয়ে যান।
তার ফলে তার উৎসহ আরো দ্বিগুণ হয়ে যায় বিজ্ঞানী দেখেন যে রিপন তার হাত নিচে নামাতে পারছে,ওপরে ওঠাতে পারছে।
বিজ্ঞানী বলেন রিপনকে এটা হাট করে সবাইকে বলার দরকার নেই।
যখন তুমি সম্পূর্ণ সুস্থ হবে তখন আমি নিজে থেকেই এই কথাগুলো সবাইকে বলব।
তোতন আজ আরো অবাক হয়ে গেল রিপন পা নড়াচড়া করছে। সে দেখল নিজে নিজে দাঁড়াতে পারছে। হয়তো বেশিক্ষণ পারছেনা।
কিন্তু আগে তো একবারেই পারত না। হুইল চেয়ারে বসে বসে যাওয়া করত।
কিন্তু এখন সে দাঁড়াতে পারছে।
সে জিজ্ঞেস করল বিজ্ঞানী যে এটা কি করে সম্ভব হল?
বিজ্ঞানী বললেন এসব ক্ষেত্রে আরও সফলভাবে কাজে লাগানো সম্ভব যদি ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন আইভিএফ পদ্ধতি সাহায্যে অর্থাৎ পরীক্ষাগারে রোগী বা রোগীনীর জনন গ্রন্থি তৈরি করা যায়।
রতন বলল হ্যাঁ আপনি যেভাবে বলেছিলেন যে এখন টেস্টটিউব বেবী বা নলজাতক এর ব্যাপক সৃষ্টি সম্ভব হচ্ছে। বস্তুত আইডি এতে একসঙ্গে অনেকগুলো এমব্রায়ো তৈরি করতে হয়।।
যার মধ্যে একটি উপযোগী ভ্রূণকে মাতৃগর্ভে স্থাপন করে নলজাতক জন্ম দেওয়া হয়। এগুলো আমি আপনার কাছে শুনেছি।
রিপন বলল তাহলে আপনি কি অবশিষ্ট কোষগুলি থেকে অঙ্কুর কোষ নিষ্কাশন করে অঙ্গ মেরামতি কাজে আপনি সফল হবেন বা রোগ নিরাময় কাজে লাগিয়ে আমাকে সুস্থ করতে পারবেন।
বিজ্ঞানী বললেন মানুষের বা ইঁদুরের কোষ নিষ্কাশন সম্ভব হয়েছে মাত্র কুড়ি বছর আগে। তাই এর ব্যবহার এখনো প্রাথমিকভাবে আছে। তবে বহুবিধ শারীরিক ত্রুটি এবং দুরারোগ্য ব্যাধি নিরাময়ে একদিন সফল হবে বলেছেন বিদেশের বিশেষজ্ঞরা।
তুমি নিশ্চিন্ত থাকো আমি চলাফেরা করার মত মোটামুটি সুস্থ তোমাকে করে দিতে পারব।
রিপন বলে এগুলো পৃথিবীর কোথায় কোথায় ভাল রকম গবেষণাগার আছে স্যার।
বিজ্ঞানী বলেন অঙ্কুশ নিয়ে কোথায় কি ধরনের গবেষণা চলছে আমরা জানতে পারি এই বিজ্ঞান পত্রিকার মাধ্যমে।
এদেশে প্রায় 15 টি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে অঙ্কুর কোষ গবেষণা তার বাস্তব প্রয়োগ পরীক্ষা চলছে তার মধ্যে রিলায়েন্স লাইফ সাইন্স, হায়দ্রাবাদের এল ভি প্রসাদ ইনস্টিটিউশন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল সাইন্সেস, ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজের নাম উল্লেখযোগ্য।
রিপন বলল দিদি, তুমি এত আপডেট, কি করে খবরগুলো পাও।
তিনি বলেন আমার কম্পিউটার আছে। কম্পিউটার মাধ্যমে সব খবরগুলো পাই এবং আমার গবেষণার 40 বছর ধরে চলছে সেই জন্য তোমাকে দিয়ে আমি এই পরীক্ষাটা করতে চাইছি।
রিপন বলছি আপনি যখন সেলগুলো নিচ্ছেন তার আগে এক ঘন্টা আগে আমাকে একটা ইনজেকশন দিচ্ছেন তার ফলে আমি কিন্তু ব্যথা পাচ্ছি না কিছু বুঝতে পারছিনা।
বিজ্ঞানী বললেন হ্যাঁ এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সেইজন্য কাছাকাছি থাকার মাধ্যমে বা এটা কোন নার্সিংহোমে থাকা মাস্ট করা হয়।।
যেহেতু তুমি আমার পাশের বাড়িতে আছো আমি তোমাকে সব সময় দেখতে পারছি চিকিৎসাটা সব সময় চলা উচিত।
রিপন দিদির কথা অনুযায়ী তার মাকে বলল মা আমি সুমন দিদির কাছে এক মাস থাকবো তারপর তোমার কাছে আসবো।
আমি ওখানে পড়াশোনা করে কিছু শিখতে চাই আমি ওখানে পড়াশোনা করছি। সকলে আমাকে খুব ভালোবাসেন।
তার সঙ্গে আমার দেহের চিকিৎসাও চলছে।
রিপনের মা আনন্দের সঙ্গে রাজি হয়ে গেলেন তিনি বললেন ঠিক আছে তোর বাবার পারমিশন নিয়ে আমি তোকে সংবাদ দিয়ে দেব।
তোতন বললেন 61 বছর বয়স্ক এক ব্যক্তির যখন নিলয় থেকে মেরামত করা হয়েছে তারই অস্থিমজ্জা থেকে নেওয়া অঙ্কুর কোষ প্রতিস্থাপন করে কাজটি হয়েছে kaguya-sama মেডিকেল হসপিটালে।
বিজ্ঞানীর সঙ্গে হাবার্ড বিশ্ববিদ্যালয় যোগাযোগ আছে তাদের ভবসাগর রংপুরের সঙ্গে সংযুক্ত করে ঐতিহাসিক রূপান্তরিত করার উপায় বের করে ফেলেছেন এবং পদ্ধতিতে কম্পিউটারে তিনি দেখতে পাচ্ছেন অসুবিধা হলো তিনি সেই পদ্ধতি প্রয়োগ করলেন।
বিজ্ঞানী রিপনকে বললেন তবে ইদানিং যেভাবে অঙ্কুর কোষ গবেষণায় হিড়িক পড়ে গেছে। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে নানা প্রতিষ্ঠান। তাতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন একাধিক বিজ্ঞানী। গবেষণায় দক্ষিণ কোরিয়ার নামি এক বিজ্ঞানী জালিয়াতি ফাঁস হওয়ার পর এ ব্যাপারে খবর নিয়েছেন।
তাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ ও অনুসন্ধানের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
প্রায় দু’বছর ধরে বিজ্ঞানী রিপনের শরীরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালালেন, তাদের বাবা-মায়ের অনুমতি নিয়ে।
তারপরের রিপনের বাবা-মা দেখলন, নিজেই তার কাজকর্ম করতে পারছে। আর হুইলচেয়ার লাগেনা। সে হাঁটতে পারে। তবে আস্তে আস্তে।
এখনো স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লাগবে।
রিপনের বাবা মা জানতে চাইলেন কি করে এটা সম্ভব হলো?
আমরা তো বুঝতে পারলাম না আপনি কোন টাকা পয়সাও নেন নি। তাহলে আমরা আপনার কাছে চির ঋণী হয়ে থাকলাম।
বিজ্ঞানী বললেন এটা আমার ব্যবসা নয় আমি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এটা গবেষণা করছিলাম। আপনার ছেলেকে সুস্থ দেখে আমার নিজেরই ভালো লাগছে।আমার গবেষণা সফল।
তার বাবা-মা জিজ্ঞেস করলো কি করে এটা সম্ভব হলো?
বিজ্ঞানী বললেন, ইঁদুরের কোষ থেকে মোটর নিউরন কোষ তৈরি করে কৃত্রিম উপায়ে শ্রেষ্ঠ পক্ষাঘাতের চিকিৎসার আংশিক ওষুধ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।
আপনার ছেলের ক্ষেত্রে আংশিক সারিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। এবার ধীরে ধীরে ও প্রাকটিসের মাধ্যমে, ধারাবাহিক অভ্যাসের ফলে ওর কোষগুলি আরও শক্ত হয়ে যাবে।
এখন বিজ্ঞানী তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা গবেষণার ফলে সেরে ওঠা রিপনকে নিয়ে রোজ ভোরবেলা হাঁটতে বের হন।
সে ধীরে ধীরে হাঁটে দিদির সঙ্গে খুব আনন্দে অবলীলায়।
রিপণ চেয়ে থাকে সবুজ সবুজ ঘাসের ভেতর দিয়ে যে রাস্তাটা চলে গেছে, আনন্দের দিকে আলোর খোঁজে,সেই আলোময় পথের দিকে।
ইলাস্ট্রেশন- গুগল আর্ট