গুচ্ছ কবিতা।। অরিত্র চ্যাটার্জি
সাদা কালো ভালবাসতেন তিনি
সাদা কালো বরাবরই বেশি ভালবাসতেন তিনি
অথচ চোখে তো তাঁর এককালে রঙ ছিলো
লাল নীল হরেক রকমের, ক্রমশ গলে গলে
সিপিয়া বেয়ে এসে একদিন ধূসর আকার নিলে
জীবনকে এই প্রথম তাঁর সিনেমা বলে মনে হল,
নিরাপদ দূরত্ব রেখে বেনীআসহকলার খোলস
ভেঙ্গে এইবারে তিনি দেখলেন কিভাবে
২৫৬ প্রকারের ধূসর অনায়াসে বেরিয়ে আসে
আর ছেয়ে ফেলে চারপাশ আমাদের মনোরম
তাঁর চোখের তারায় চোখ, না রাখলে বিশ্বাস হত না
খুব উঁচু জানলার পাশে একা যে মেয়েটি গাঢ় নীল,
তার কার্নিশে খেলা করে পিচ্ছিল বেড়ালটি হলুদ
কিংবা অনতিদূরে যে লোকটি মরচে পড়া,
ছাতা হাতে একা রাস্তা পার হয় এবড়োখেবড়ো,
হিসাব মেপেজুখে, সাদা কালো মাখিয়ে তাদের
সিনেমায় কি আশ্চর্য মসৃণ করে তুলেছেন তিনি …
গোয়েন্দা কাহিনী
আমি জানি এটা একটা থ্রিলার
যার শেষটা পাল্টে যাচ্ছে
পুরোপুরি লিখে ফেলার আগেই,
টুপি হাতে ডিটেকটিভ, ঢুকে পড়ছেন ফ্ল্যাটে
তার ভেজানো দরজাগুলো
ঠিক কতটা মেলাঙ্কলিক
ডিটেকটিভ ঝুঁকে পড়ে দেখেন
কালো কেটলির গায়ে লাগা ছাপ
আতস কাচের ওপাশে
প্লেনের ডানার মত কয়েকটা বাচ্চা কাঁদে
আমাদের রেডিও মনে পড়ে
আর একটা নীল ঘোড়ার কথা
আমি সারাদিন ভাবছি, এই সাদা কালো ফ্ল্যাটে
খুব বেমানান একটা নীল ঘোড়া হারিয়ে গেছে
শেষতক জানা নেই কিন্তু আমি জানি এটা একটা থ্রিলার
যেভাবে বাল্বগুলো অকারণে জ্বলে আর নেভে
আর ক্লান্ত ডিটেকটিভ ক্রমাগত সুইচের খোঁজ করেন
এসব সময়ে আমার ভেতরে কেউ
একটা টাইপরাইটার বরাবর খটখট শব্দে
তাঁর টুপি হাতে একাকী চলে যাওয়াটুকু লেখে…
দৃশ্যকামীর গান
ক্যাবারেতে খুব মেখলা উড়ছে,
সিঁড়ি ভেঙ্গে ভেঙ্গে তার আরেকটু লাবডুব
বাড়তে না বাড়তেই মাংসল আলো
এসে তাকে গ্রাস করে নিল, খুব ঘন
ওমের কাছে সে বরাবর সহজেই পরবশ
নাগালে চলে গেলে এত অল্পেই নীল
তার হাসি দেখে দেখে রিয়্যালিটি, বেহিসেবি
বারেবারে গড়িয়ে নামে কাচে
আর নেপথ্যে রেখে দেওয়া চোখ
তুমি তাকালেই কেমন শিথিল
প্রতিটি বিভঙ্গের কাছে, ক্রমশ তরল হয়ে
সে ওই টকটকে জ্যামিতির দিকে
কিছুটা এগোবে কিনা ভাবে,
আর এই গোপন পারফরম্যান্সের ভিতর
হঠাৎ পর্দা নেমে এলে, চারপাশে কত কত ছায়া
আবারও যে উবে যায়, তার খেয়াল থাকে না…