জয়নগরের মোয়া এবং যামিনীবুড়ো
পিনাকী চৌধুরী।। শীতপ্রত্যাশী মানুষজনের কাছে বড়ই সুখের সময় ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাস ! বিশেষ করে খাদ্যরসিক বাঙালি কিন্তু আজও অপেক্ষা করে থাকে শীতকালের জন্য। আর শীতকাল মানেই যেন জয়নগরের মোয়াতে কামড় দিয়ে তৃপ্তি লাভ করা ! কিন্তু কিভাবে উৎপত্তি হয়েছিল এই জয়নগরের মোয়া ? উনিশ শতকের শেষের দিকে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বহরু গ্রামের জনৈক যামিনীবুড়ো এক কান্ড করে বসলেন! তাঁর নিজের ক্ষেতেই চাষ হত কনকচূড় ধানের। আর সেই কনকচূড় ধানের খইয়ের সঙ্গে নলেন গুড় মিশিয়ে মন্ড করে তিনি তা একটি অনুষ্ঠানে পরিবেশন করলেন । অতীব সুস্বাদু সেই নতুন ধরনের মিষ্টান্ন খেয়ে সবাই ধন্য ধন্য করতে লাগলেন।
উনিশ শতকের শুরুতে এই বহরু গ্রামের জমিদারি লাভ করেন নন্দকুমার বসু। তাঁর ইচ্ছাতেই সেখানে একটি শ্যামসুন্দরের মন্দির নির্মাণ করা হয়। যাইহোক সময় থাকে নি । যামিনীবুড়োর সেই মোয়াকে বাণিজ্যিকীকরণ করলেন জয়নগরের দুই অভিন্ন হৃদয়ের বন্ধু পূর্ণচন্দ্র ঘোষ এবং নিত্যগোপাল সরকার। তাঁরা ঠিক করলেন যে, এই মোয়া তৈরি করে বিক্রি করা হবে। অতএব মোয়াতে মিশলো গাওয়া ঘি, খোয়া ক্ষীর এবং কিসমিস। অতঃপর ১৯২৯ সালের সেইসব সাদাকালো দিনে জয়নগরের ‘ শ্রীকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভান্ডার’ এ শুরু হল জয়নগরের মোয়া বিক্রি! বস্তুতঃ এই হেমন্তের শেষের দিক থেকেই জয়নগর, মজিলপুর, বহরু গ্রামের বেশ কিছু পরিবারের জীবিকা হয়ে ওঠে এই জয়নগরের মোয়া তৈরি। তাই এখন তাঁদের ব্যস্ততা তুঙ্গে। যদিও ইদানিং নকল জয়নগরের মোয়াতে বাজার ছেয়ে গেছে। বাস্তবে মরিশাল খই এর সঙ্গে নলেন গুড় মিশিয়ে মোয়া তৈরি করা হয় অনেক জায়গায়, যে মরিশাল খই কনকচূড় ধানের খইয়ের থেকে অনেকটাই নিকৃষ্ট! প্রসঙ্গত এই বহরু গ্রামেই কিন্তু হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এবং কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শৈশবকাল অতিবাহিত হয়েছিল।