কবীরকথা।। শুভদীপ সাহা
হাতে রইল পেনসিল..
( Form & Content )
সেদিন অ্যাকাডেমীতে গেছি আমি আর কবীর। একটা ছবি, abstract art ; আমরা দুজনেই অনেকক্ষণ ধরে দেখছিলাম ছবিটা। বেরিয়ে এসে দুজনেই চুপচাপ। হরির দোকান থেকে চা নিয়ে ফ্লেকে সুখটান দিতে দিতে কবীর বলে উঠল, জানিস শুভ, ছবিটা দেখে আমার একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল, বলি শোন।
অনেক বছর আগে, এই অ্যাকাডেমীতেই আমাদের নাটকের শো –
– সে কী ! তুমি থিয়েটারও করতে নাকি !
– আরেহ, ওই কলেজ লাইফে, যা হয়.. আসল কথাটা শোন, আমি পার্ট পেয়েছি এক চাষীর। যা দেখতে আমায়, এর থেকে বেশী কিছু জুটবে না জানি। ডায়লগ শুধু, জী হুজুর। যে যাই জিজ্ঞেস করে, চাষীর শুধু এক রা, জী হুজুর। সেই আমি, মেকআপ শেষ, মেকআপ বলতে ওই মাথায় গামছা বাঁধা ; শো শুরু হতে তখনও এক ঘন্টা বাকি, ভাবলাম হরির দোকান থেকে চা খেয়ে আসি। বাইরে বেরোচ্ছি, একজন ইয়া গোঁফওলা লোক প্রায় পাঁজাকোলা করে আমায় কিডন্যাপ। এনে ফেলল, অ্যাকাডেমীর পাশের গাছগুলোর সামনে। ছেড়েই হুঙ্কার, “সেই কখন তোমার আসার কথা, আর বাবু এদিকে ওদিকে ঘোরাঘুরি করছে। এই নাও কাঁচি। এই গাছগুলোকে কেটে গোল গোল করবে। যেমন কথা হয়েছিল তোমার সাথে। বুঝলে?” আমি চরিত্র-হীন নই, উত্তর দিলুম , “জী হুজুর”। মালি উড়ে গেল অন্যদিকে। আমি ততক্ষণে ব্যাপারটা বুঝে নিয়েছি। মালীর এক সহকারী আসার কথা, অচেনা হয়তো। আমার ওই পোশাক দেখে সে-ই ভেবে, ‘ও শ্যামাদাস, আয়তো দেখি, বোস তো দেখি এখেনে’ আউড়ে নিয়েছে। আর ওই বয়েসে আমিও বিটকেল বদমাশ, ভাবলুম, এ কাজ কোনোদিন করিনি, একটা ট্রাই মেরে দেখি করতে পারি কি না !
দশ পনেরো মিনিটের চেষ্টায়, মোটামুটি Sphere Shape-এ এনে আমি তো যারপরনাই খুশী। একটু ছোটো হয়েছে এই যা, মানে খুবই ছোটো, যাই হোক, গোল তো হয়েছে। তখনও যা বুঝিনি, গোল বানাতে গিয়ে গোল পাকিয়েছি।
মালি এসে সব দেখে – হা হতোস্মি ! মূর্ছা যায় যায় আর কী!
– এ কী হয়েছে?
– কেন? গোল। তুমি যে করতে বললে…
– গোল তো হয়েছে। কিন্তু গাছটা কোথায় গেল?
ফিকফিক করে হাসতে হাসতে কবীর সিগারেটে শেষটান দিয়ে বলল, form-এ থাকতে গিয়ে content-ই উড়িয়ে দিয়েছিলাম। ‘এই যদি সেই বিড়াল হয় তবে মাংস কোথায়, আর এই যদি সেই মাংস হয় তো বিড়াল কোথায়?’-এর আদি অকৃত্রিম গল্প ! বুঝলি তোপসে !
প্রথম পর্ব পড়তে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে-