দিল্লীর এক রোগশয্যা থেকে এই পত্র প্রেরণ করছি।
আমার নাম চিরশ্রী বিশী চক্রবর্তী, প্রয়াত প্রমথনাথ বিশীর একমাত্র জীবিত সন্তান ও কন্যা। পশ্চিমবঙ্গে সম্ভবতঃ আমাকে কেউ চিনতে পারবে না, কারণ সেখানে আমি অপরিচিত। আমি কোন বুদ্ধিজীবী নই। দীর্ঘকাল দিল্লীবাসী, এখানকার কোন এক নামী কলেজে দীর্ঘ ত্রিশ বছরের বেশি অধ্যাপনা করেছি। শিক্ষাই আমার জগৎ। আমার বয়স ৮০ বছর পূর্ণ হয়ে গেছে, দেহের ক্ষমতা কমলেও আশাকরি হৃদয়ের ক্ষমতা ও কলমের ধার এখনও ভোঁতা হয়নি।
আমার বাবা সম্ভবতঃ এই বয়সেই শিক্ষা জগতের এক মারাত্মক অনৈতিকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে তাঁর সহযোদ্ধা ডঃ সুকুমার সেন সহ বিদ্যাসাগর মূর্তির পাদদেশে অনশনে বসেছিলেন। আমার যদি শারীরিক ক্ষমতা থাকতো, তাহলে আমাকেও আপনারা কলকাতার ধূলি লুন্ঠিত রাস্তায় এই সমস্ত অত্যাচারিত, অবিচারগ্রস্ত, মা সরস্বতীর প্রতিনিধি ছাত্রবর্গের সঙ্গে দেখতে পেতেন। এরা আমার কেউ রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয় নয়, এরা আমার আত্মার অঙ্গ। দুর্ভাগ্যক্রমে আমার এখন সে ক্ষমতা নেই। তাই লিখিত ভাবে জানাই, যে এই শিক্ষা ও শিক্ষকজাতির প্রতি যে অপমান চলেছে, দীর্ঘদিন ধরে অ- বিলম্বে তার অবসান চাই। কেবল মুখের কথায় নয়, কাজে করে দেখানো হোক।
এ যেন, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ! রাজনীতি আমি বুঝি না, বুঝতেও চাই না। আমি ওদেশের ‘ভোটার’ও নই। কাজেই আমার কোন স্বার্থ আপনারা খুঁজতে চেষ্টা করবেন না। এটা আমার ধর্মনীতি, মনুষ্য নীতির প্রকাশ মাত্র।
একি আমাদের চেনা সেই কলকাতা ? যাকে নিয়ে চিরকাল আমরা স্বদেশে, বিদেশে গর্ব করে এসেছি ? এখনকার এই মুন্ডহীন, রসনা- সর্বস্ব কবন্ধ জনতাকে আমি চিনি না। একি সেই পান্ডবদের রাজসভা ? যেখানে ভীষ্ম, কৃপ, দ্রোনাচার্য- মহা মহা হৃদয়বান, শক্তিমান পন্ডিতেরা নিজেদের বিচার বুদ্ধিকে এক গোপন ও মিথ্যা প্রতিজ্ঞার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে এক একজন বিচারহীন দর্শক বনে বসে আছেন ??? কিন্তু কেন ? কেন ? কেন ? এখানেও কি পিতামহ ভীষ্মের আনুগত্যেও মত কোন প্রশ্ন আছে ? এটা আমরা বিশ্বের শিক্ষিত জনতা মুক্তকন্ঠে জানতে চাই।
আমিও সম্ভবতঃ অশিক্ষিত নই। আমার সমস্তডিগ্রী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সম্মানের বিচারের আশায় ভূলুন্ঠিত ছাত্রদের পদস্পর্শ করে ক্ষমা চাওয়া এবং তাদের শিক্ষাজগতে ফিরিয়ে আনা। এদের যথার্থ স্থান হোক, ক্লাশরুমে, ব্ল্যাকবোর্ডের সামনে। সম্মুখে থাকুক একদল তাজা কচি শালতরু, মাথা উঁচু করে। এটাই আমার একমাত্র স্বপ্ন।
আর কলকাতার এই দর্শক কবন্ধ জনতা, তোমাদের জন্য ঘৃণার অন্ত নেই। এ কলকাতাকে আমি চিনি না। চিনতেও চাই না। “এ আমার এ তোমার পাপ- ” !!
আর একটা কথা মনে রাখা দরকার, ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনা, ক্ষমা করেনি। এবারেও করবে না। তার প্রাচীনতর উদাহরণ আমাদের “মহাভারত”!
আমার করজোড় নিবেদন, আমার এই “খোলাচিঠি” আমি বিভিন্ন বৈদ্যুতিন মিডিয়াতে প্রকাশ করছি। সেইসঙ্গে কলকাতার প্রত্যেক নামী দামী সংবাদ পত্রেও পাঠাচ্ছি। আপনাদের “বুকের পাটা” থাকে তো এ পত্র ছাপিয়ে প্রকাশ করুন। তাহলেই বুঝবো মনুষ্য রক্ত এখনও আপনাদের বক্ষে প্রবহমান।
এত পাপ ধরিত্রীও সহ্য করবেন না, সর্বংসহা তিনি সত্যই নন।
নমস্কারান্তে
চিরশ্রী বিশী চক্রবর্তী ।
জে -২১৭, সাকেত, নতুন দিল্লী ১১০০১৭
৯৮১০০ ৮৮০৩০ ফোন নং
{ ঠিকানা লেখার কারণ, এটা কোন মেঘের আড়াল থেকে লেখা মেঘনাদের হুঙ্কার নয়। ঠিকানা যাচিয়ে দেখতে পারেন। }
বিঃদ্রঃ – সম্পূর্ণ মতামত লেখকের। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনওপ্রকার দায়ী নহে।