jago hua savera

অস্কার মনোনীত গল্প এবং কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিছু কথা

তৃতীয়পক্ষ ওয়েব- দেশভাগ, স্বাধীনতার তখন সবে ১১ বছর। মানুষের জীবনে সেভাবে পরিবর্তনও আসেনি। দুঃখদুর্দশা প্রায় এক। অন্যদিকে একই রকম রয়ে গেছে পদ্মা নদীর মাঝিদের গল্প। সেই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পের মাঝিরা। জীবনে স্বাধীনতা আসেনি তাঁদের।

১৯৩৬ সালে লেখা সেই উপন্যাসকে নিয়েই নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করার সঙ্কল্প নিলেন শিল্পীরা। পাকিস্তানী পরিচালক আখতার জং কারদারের পরিচালনায় ১৯৫৯ সালে মুক্তি পেল ‘জাগো হুয়া সাভেরা’। এটিই প্রথম পাকিস্তানী ছবি যা অস্কারের জন্য মনোনয়ন তালিকায় জায়গা পেয়েছিল। এছাড়া মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথম স্থান অধিকার করে। তবে এটাই নয়, অসংখ্য বিতর্ক, প্রত্যাবর্তনের ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে এই সিনেমা নিয়ে।

শিল্পের কোনো দেশকাল থাকে না, অনেকেই বলেন একথা। ‘জাগো হুয়া সাভেরা’ মনে হয় দেশ এবং কাল দুটোই অতিক্রম করতে পেরেছিল। পূর্ব পাকিস্তানের মুন্সীগঞ্জের পদ্মাপাড়ে শুটিং হলো সিনেমার। পরিচালনা করেছেন পশ্চিম পাকিস্তানের জং কারদার। চিত্রনাট্য লিখেছেন ফয়েজ আহমদ ফয়েজ। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষ। সহকারী পরিচালক জহির রায়হান পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। সেইসঙ্গে ভারত-পাকিস্তানের সেরা কুশীলবরা মিলে তৈরি করলেন এই সিনেমা। পাকিস্তানের অভিনেতা আতাউর রহমান আর কাজি খালেকের সঙ্গে অভিনয়ে ছিলেন কলকাতার অভিনেত্রী তৃপ্তি মিত্র। সঙ্গীত পরিচালনায় তিমির বরণ। সাদা কালো ক্যামেরায় সমস্ত দৃশ্য ধরলেন ওয়াল্টার লাসালি।

Jago hua savera

ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত সিনেমাটি ১৯৫৯ সালে মুক্তির ঠিক তিনদিন আগে প্রদর্শন নিষিদ্ধ করল আইয়ুব খান সরকার। এতে নাকি রাষ্ট্রদ্রোহিতার বীজ আছে। তাই সিনেমাটি মুক্তি পেল ইংল্যান্ডে। অবশ্য উর্দু ভাষার এই সিনেমা সেখানে বেশিদিন চলেনি। এরপর সিনেমার সমস্ত রিলও হারিয়ে যায়।

প্রায় পঞ্চাশ বছর পর ফ্রান্সের এক চলচ্চিত্র উৎসবের আর্কাইভ থেকে এটি উদ্ধার করেন ছবির প্রযোজক নোমান তাসিরের ছেলে আনজুম তাসির। ২০১৬ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবের ক্ল্যাসিক চলচ্চিত্র পর্বে দেখানো হয় এই ছবি। অবাণিজ্যিকভাবে ছবিটির কিছু প্রদর্শনী হয় ব্রিটেন, বাংলাদেশেও।

আজ কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন। মানবমনের গহন গভীর জটিল মুহূর্তকে তুলে ধরেন মনোবিকলন তত্ত্ব দ্বারা মগ্নচৈতন্যের অতলশায়ী বোধকে প্রকাশ করেছেন। চেতনার পরতে পরতে যে অজানিত রহস্য, যে অভাবিত বিস্ময় আছে যা মানুষের ভাবনা চিন্তা ও কার্যবিধিকে নিয়ন্ত্রিত করে উৎকেন্দ্রিক রূপে তাকে তুলে ধরে মানিকের উপন্যাসে তারই বিচিত্র পরিচয় পাওয়া যায়।

শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page