কবিতা।। সন্দীপন রায়

 (১)
আমার হাঁটা, তোমার হাঁটা….
হাঁটছি আমি ট্রেডমিলে রোজ, পকেট ভরা ইনসুলিন। তোমার হাঁটা নিংড়ে জীবন রোজ প্রতিদিন ক্লান্তিহীন।
স্নিকার মোড়া আমার চরণ, রক্তে ভেজা তোমার পা। হাঁটার পথে চড়ছি গাড়ি তোর পথে তুই হেঁটেই যা।
ঊর্ধ্বমুখী রোজ ক্যালরি, খরচ করার নেই উপায়।বার্ন করাতে খরচ করে বিকেল বেলা জিমেই যায়।
কিন্তু তুমি হাঁটছো বলে হাঁটছে রোজই  সভ্যতা। স্বার্থ ভেজা আমার  হাঁটা স্মার্ট ওয়াচে মাপবো
তা।
সব হাঁটারই পরিণামে অপেক্ষাতে পূর্ণচ্ছেদ। যা হোক তবু হেঁটেই  বাঁচি, বাঁচাই যখন লক্ষ্যভেদ।
(২)
উপাস্য ডাক্তার (বসুন্ধরায় গভীর অসুখ)…
বসুন্ধরায় গভীর অসুখ প্রতি পদে  মহাযুদ্ধ। অ্যাপ্রোনে তুমি সেনাপতি আজ, যিশু কিংবা বুদ্ধ।
নেই তরোয়াল ত্রিশূল তোমার গলায় আছে স্টেথো। দাঁড়িয়ে ভুবন করজোড়ে এ যুদ্ধ তুমি জেতো।
ভুল বুঝেছি মধ্যে মাঝে করেওছো অভিমান। তবুও তুমি সামনে, যখন সংকটে দেশ,প্রাণ।
হার মেনে যায় যখন সবাই ভেঙে পড়ি বারবার। সামনে তুমি পরিত্রাতা উপাস্য ডাক্তার।
রণাঙ্গনে লড়াই রোজই অস্ত্র অপ্রতুল। গুণছো প্রহর সতর্কতায় না হয় যেন ভুল।
ছুটছো তুমি লক্ষ্যে অনড় উদ্বেগে পরিবার। এ যুদ্ধে তুমি সেনাপতি মানবেনা জানি হার।
ক্লান্তিবিহীন এ কালবেলায় প্রতি শ্বাসে মেশে যুদ্ধ। অ্যাপ্রোনে তুমি সেনাপতি আজ, যিশু কিংবা বুদ্ধ।
(৩)
হেরে যাচ্ছি আমি
প্রতিদিনই হেরে যাচ্ছি আমি।
হ্যাঁ। প্রতিদিন। প্রতিমুহূর্তেই।
যখনই সামনের কয়েকজনকে ড্রিবল করে, কখনও বা ল্যাং মেরে সাফল্যের গোলবক্সে চালান করে দিচ্ছি পায়ে সযত্নে লুকিয়ে রাখা স্বপ্নের ফুটবলটিকে….।
অথবা, প্রবল হর্ষধ্বনিতে আমাকে কাঁধে তুলে নিচ্ছে আমার সতীর্থ নাকি প্রতিপক্ষরা?
ঠিক তখনই পরাজয়ের এক অন্তহীন অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছি আমি।
মহানগরের পঞ্চাশ তলা ফ্ল্যাটের শীর্ষে চার কামরার দরজায় যখন পৌঁছে যাচ্ছি আমি অত্যাধুনিক লিফটে চড়ে….। দরজা খুলে দেখি এক ঝাঁ চকচকে রঙিন পরাজয় অট্টহাসি নিয়ে অপেক্ষা করছে আমারই জন্য।
অনলাইনের সীমাহীন স্বাচ্ছন্দ্যের বাতানুকুল নীল শীতল কক্ষে আমি হেরে যাচ্ছি সেই সমস্ত অভুক্ত মুখগুলোর কাছে যারা লোডশেডিং এর ঘামে ভেজা শরীরেও নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে তাদের বস্তির কুঁড়ে ঘরে। এই বহুতলের প্রতিটি ইট, লোহা, কলকব্জা এখনও ভিজে রয়েছে এদেরই ঘাম, রক্তে। আর আমি ঘুমের ওষুধ খেতে খেতে হেরে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত।
সভ্যতার সেই ঊষাকাল থেকেই হেরে যাচ্ছি আমি।
কবি পরিচিতিঃ সন্দীপন রায় পেশায় ইংরাজী ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক। নেশায় প্রাবন্ধিক, কবি। ১৯৭৭এ জন্ম সন্দীপনের বসবাস সিউড়ী, বীরভূমে। তার প্রকাশিত কবিতার বই ‘সময়ের সংলাপ’। ছোটো, বড়ো বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হয় সন্দীপনের লেখা। প্রথম সারির বেশ কিছু দৈনিক সংবাদপত্র এবং স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে পোষ্ট এডিটোরিয়াল লেখেন তিনি। তিনি সুবক্তা, সুসঞ্চালক হিসেবে বৌদ্ধিক পরিসরে সমাদৃত হয়েছেন। সন্দীপনের লেখা সোশ্যাল মিডিয়ায় এক জনপ্রিয় ইভেন্ট।
শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page