সারা জেন্ এবং তার বর্তুলাকার কাঁচের বয়াম।। ঋতব্রত ঘোষ

অই জায়গাটা দগদগে।
কাঁচা ঘা শুকাতে সময় নেয় যদি না রোজকার ব্যবহারে তাকে বিস্মৃতি এসে ঢাকে,
পাতলা চামড়ার প্রলেপ পড়ে তার ওপর
ধীরে ধীরে চামড়াটা গুটিয়ে ওখানটা কড়া পড়ার মতন হয়ে যায়,
আর কোনো বোধ থাকে না অতএব।
আমার ক্ষেত্রে তা হতে পারে নি,
আইবুড়ো ক্ষতের জায়গাটায় লহমায় পট্টি লাগিয়ে দিয়েছিলে তখন
নতুন শহরে আবাস বসিয়েছি সদ্য,
আধুনিক মুদি দোকানে হঠাৎ পরিচয়,
তোমার বয়স হয়েছিল, তুমি বিপত্নীক
মাঝবয়সে বিভ্রান্তি এসেছিলো, বলেছিলে,
তোমার নাকি আলঝেইমার – আজকাল কিছু মনে করতে চাই না, মাথার যন্ত্রণায় ঘুম আসে না নয়ত ।
ভিনঘুর্ পালা ফুরিয়ে আসছে জীবনের,
তাও ভাবি অশ্বের দ্রুততায় মেলে ধরেছিলাম তোমার সামনে আমার কিছু না বলতে পারা সংলাপ
কিছু স্বগতোক্তি, ঝাপসা অবুঝতা,
ধ্বংসের পথে ফুসলিয়ে নিয়ে গেছিলে ভাবছিলাম
এই ত পেলাম, নতুনের স্বীকৃতি।
পেলাম ত!
ধীরে ধীরে আরো জড়িয়ে ধরেছে আস্কারা। আর আজাদি –
একটা ভেঙে যাওয়া দুমড়ে যাওয়া সিঁটকে যাওয়া আঁৎকে ওঠা জীবন থেকে,
এ ছাড়া আর কি উপায় ছিল
কিচ্ছু না হয়ে ওঠার ত্রাস কিংবা বঞ্চণা থেকে উদ্ধার হবার?
পুড়ছে সচকিত হয়ে পুড়ছে সব আক্ষেপ খেতের শুকনো ফসল,
তোমার ভিতর ক্ষণিকায় আমার কালছন্দের তীব্রতা
অসাড় হয়ে আসার ঠিক আগের মুহূর্তগুলো
মনে হত মহাকাশের ভালোবাসা এসে জড়ো হয়েছে ওই সঙ্কুচিত পরিধিতে,
বীজনের রস তখন ছুট ছুট ছুট
ছড়িয়ে পড়েছে সমস্তটা আমার ভেতরে,
তারপর অনেকবার মিলিত হয়েছি আমরা,
আর প্রত্যেক বার একটু একটু করে চুরমার হয়ে গেছি,
প্রতিবার ভেবেছি এই হয়ত শেষ, এমনি হবার ছিল পরিণতি,
এভাবেই সব কিছু শেষ হবে একদিন।
তবু ডাকতেই ফিরে গেছি বারবার,
পিছুটান ফেলে এসেছি – বাবুই কোচিংক্লাসে অনুপ অফিসে শাড়ি পালটে তোমার বাড়ি তোমার বনের পথে,
আর যথেচ্ছ ব্যবহার করেছো আমায়
চূর্ণগুলো এক করে করে আবার ফিরে এসেছি ঘরের কোণায়,
আনমনে রান্না ঘরে ঢুকেছি
মা, কি করছো, বাবা যে বললো আজ শর্বরী আন্টির বাড়ি আমাদের ডিনার
খুব খারাপ, তুমি বল, এই পৃথিবীটা,
সঙ সেজে হাসব গায়ে ঢলব পরনিন্দায় মুখর হয়ে উঠব শর্বরীর ড্রয়িং রুমে,
অনুপ আর শর্বরী অন্য ঘরে চলে গেলেও না-দেখার ভান করে মিসেস বাজপায়ীর সাথে কুন্দনকে নিয়ে কথা বলব,
তোমার কথা একবারো মনে পড়বে না,
এভাবেই আমি বিশ্বের মানুষকে
বিশ্বের সমস্ত ভ্যালেনতাইনকে ভেঙে যেতে গুঁড়িয়ে যেতে দেখেছি।
আর ভেবেছি আমার বাড়ির সিংবারান্দায় তোমার অলক্ষিত আনাগোনা আমায় কেন প্রমত্ত করে না
পেখমের ঝাপটানি তরঙ্গের আকুলতা নিয়ে ভোমরাবাঁশির সাধে?
এত শালীনতা কার জন্যে, প্রিয়তম?
কার কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়ে গেলে আজো?
শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page