Quo Vadis, Aida?
ঋতব্রত ঘোষ
২৬ বছর আগে ১১ই জুলাই বসনিয়ার স্রেব্রেনিকা শহরে ৮০০০এরও বেশি বসনিয়াক মুসলিমদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল VRS, বসনিয়া হেরজেগোভিনা-র সার্ব আর্মি। মানব সভ্যতা(?)-র অত্যন্ত কলঙ্কিত ইতিহাসের এই অধ্যায়টি “স্রেব্রেনিকা গণহত্যা” বলে পরিচিত। ফিল্ম মানুষকে, ড্রয়িং রুমে আয়েষ করা সুখী রক্ষণশীল মানুষকে, চোখ-কান ঢাকা মানুষকে অন্তর্হিত ইতিহাসকে চেনায়। তারপর মানুষ ভুলে গিয়ে আবার রসদের সন্ধানে চরকি-বিহারে বের হয়ে পড়ে পরদিন।
Quo Vadis, Aida? (based on a film of same name. Dir. Jasmila žbanić) কোথায় চললেন আইডা মাষ্টার? কাদের মা আপনি, কার ছিলেন আদরের জায়া? যুদ্ধোত্তর, অনেক খুঁজেছিলেন কোথায় তাদেরকে গোর দিয়েছিল খুনী সৈনিকেরা? অথচ, জলজ্যান্ত বেঁচে ছিল এই কদিন আগেও তাঁর দুই ছেলে, হেডমাষ্টার স্বামী – নিহাদ। ইউ.এন. শান্তিরক্ষী বাহিনী স্রেব্রেনিকা শহরের প্রান্তে ছাউনি ফেললে পর আইডা হয়েছিলেন তাদের লোকাল স্টাফ, দ্বিভাষীর কাজ জানা ছিল তাঁর, জুটে গেছিলেন সেই কাজে, কিণ্ডারগার্টেনে থাকতে আপনি শেখাতেন শিশুদের ইঙ্গিত করে করে গল্প বোঝাতে, তারা কখনো দুই হাত জড়ো করে পাখির ডানার মতো নাড়তে নাড়তে কখনো চোখের দুইপাশ থেকে দুই হাত দিয়ে ঢেকে তাঁর চিত্ররূপ দেয়া গল্প বোঝাত, দর্শক তাদেরই বাবা-মা, হাততালি দিয়ে উৎসাহ দিতেন তারা শিশুরা হেসে উঠত, ব্যঙ্গের হাসি, একমাত্র আপনি বুঝতেন মাষ্টার তার অন্তর্নিহিত অর্থ।
আপনার শহরে ঘটে যাওয়া গণহত্যার আগে আপনি ত চেয়েছিলেন ইউ.এন . স্টাফের পরিবার বলে আপনার স্বামী আর দুই ছেলেকে তারা আপনার সঙ্গে থাকতে দিক, কর্নেলের কাছে আবেদন করেওছিলেন, কিন্তু কেউ শোনেনি আপনার কথা, ছিনিয়ে নিয়ে গেছিলো ওদের আপনার কাছ থেকে আর আপনাকে আটকে রেখেছিল, যাতে আপনি আবার তাদের ফিরিয়ে আনতে না পারেন বা, তাদেরই সাথে বাসে না উঠে পড়েন, যে বাসখানি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বধ্যভূমির দিকে, জেনারেল, নামটা মনে পড়ছে না, কে-ই বা মনে রাখে আততায়ীর নাম, হ্যাঁ, জেনারেল রাডকো মিলাডিক, আমার ছেলে নাম শুনে বলেছিল – what a dick!
মিলাডিকের আদেশে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছিল ওই শহরের এক বিশেষ সম্প্রদায়ের আবাল পুরুষকে, যাই হোক, আপনাকে আটকে দিয়েছিল ওই খুনী সৈনিকদের একজন, যাকে আপনি চিনতে না পারলেও সে চিনতে পেরেছিল আপনাকে, ইস্কুলে আপনার কাছে সে পড়েছিল কোনো এক সময়ে আপনাকে দেখে অন্তরের শ্রদ্ধা খুব একটা জানায়নি সে যদিও, পাছে অন্য সঙ্গীরা তাকে তাচ্ছিল্য করে বসে, তবে আপনাকে সে বাসে উঠতে দেয় নি। উঠতে দিলে হয়ত ভালো করত সেদিন, আপনাকে এভাবে হন্যে হয়ে এক কবরস্তান থেকে অন্যে ছুটে বেড়াতে হত না।
তারপর একদিন শান্তি ফিরে এলে দেশে, যে যার এলাকায় আধিপত্য গেড়ে বসার পর, যখন নিহতদের ফেলে যাওয়া খুঁটিনাটি বসন ভূষণ প্রদর্শনীতে লাগানো হয়েছিল টাউনহলে, আপনিও গেছিলেন খুঁজতে খুঁজে পেলেনও শেষ পর্যন্ত, সেদিন আর কেউ ধরে রাখতে পারে নি আপনাকে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিলেন আপনি।
সন্ধ্যেবেলা একলা বাড়ি ফেরার পর যখন নিস্তব্ধ ডাইনিং টেবিলের পাশে বসে ছিলেন আপনি, আইডা, “মা” বলে কেউ ডেকে উঠল, শুনতে পেলেন আপনি? আপনাকে ডাকছে আপনার ছাত্রের মা, প্রতিবেশী দরজা ধাক্কাচ্ছে, ছেলের স্কুলে শিশুদের অনুষ্ঠান খুব ভাল লেগেছে তাদের, আপনাকে অভিনন্দন জানাতে এসেছে ভারী সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছিল তারা, শান্তিপূর্ণ দেশে স্বাধীনতার প্রথম সম্বৎসর কুচকাওয়াজের আগে ওরাই ত প্রদর্শন করবে দেশের উচ্চতম নাগরিকদের সামনে সভ্যতার কিংখাবে মোড়া সংগ্রামের শেষে উজ্জ্বল দেশের এগিয়ে চলবার দৃশ্যাবলী।
ছবি- গুগল