Roddur Roy: গালিগালাজ করেই লক্ষ লক্ষ টাকা!

তৃতীয়পক্ষ ওয়েব- বাঙালি মাত্রেই রোদ্দুর রায়কে চিনবেন না এমনটা নয়। আর এখন প্রায় সকলের মুখেই তার নাম। কারণ সদ্য নেট দুনিয়ায় মণীষীদের গালিগালাজ করা থেকে শুরু করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ করার জন্য, তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। যার আসল নাম অনির্বাণ রায়। যাকে আমরা সকলেই রোদ্দুর রায় নামে চিনি।

শুধুমাত্র খিস্তি দিয়েই তার পকেট ভরে উঠেছে লক্ষ লক্ষ টাকায়। নোংরা, অশ্রাব্য ভাষায় ভরা সেই ভিডিয়ো শেয়ার করে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঢুকে যায় রোদ্দুর রায়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। এভাবেই দ্রুত জনপ্রিয়তা আর আয় বাড়াতেই এই পথ বেছে নিয়েছেন রোদ্দুর রায় এমনটাই অনেকের মত।

নেটিজেনদের নজরে রোদ্দুর রায় আসেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের গান এবং কবিতার বিকৃতি ঘটিয়ে। অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা হু হু করে তার ফলোয়ার হতে থাকে। অনেকেই তাঁর এই কীর্তিতে গর্জে উঠেছিলেন, আবার একইসঙ্গে মজাও পেয়েছিলেন অনেকে। এতেই হু হু করে ছড়িয়ে পড়ার লোভ যেন তাঁকে পেয়ে বসে।

আঞ্চলিক ভাষা বাংলা হওয়ায়, এই ভাষায় ভিডিওর রীচ অনেকটা কম। তাই জাতীয় স্তরে দর্শক টানতে প্রচুর ভিডিও ইংরেজিতে প্রচার করেন। অবশ্যই মূল লক্ষ্য ছিল টাকা ইনকাম। ২-৩ লাখ দর্শক দেখতেন তার এই অশ্রাব্য খিস্তিতে ভরা কন্টেন্ট।

তবে শুধু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন, দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম থেকে রবীন্দ্রনাথ- রোদ্দুর রায় কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ করেছেন সকলকে।

তবে রোদ্দুর রায়কে ঠিক একটি পরিচয়ে বাঁধা চলে না। একাধারে যেমন তিনি  ইউটিউবার, কবি, লেখক, গায়ক, তেমনি রোদ্দুর রায়ের রয়েছে অনেক গুণাগুণ। অশ্রাব্য ভাষার ফোয়ারা ছোটে মানেই এমন নয় যে তিনি অশিক্ষিত। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়াতে উঠে এসেছে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা। যা দেখে চমকে উঠছেন তাঁর তীব্র সমালোচকরাও। এতদিন যে নজরে রোদ্দুর রায়কে চিনেছেন, জেনেছেন, এবার একটু আলাদা নজরে দেখার সুযোগও এসেছে সকলের।

রোদ্দুর রায়ের প্রোফাইলের তথ্য বলছে, গত দু’দশক ধরে বিভিন্ন শিল্প মাধ্যমে সাররিয়্যাল ও পোস্ট মডার্নিস্ট ভাবধারায় নিরন্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন রোদ্দুর রায়। তার আগে বিজ্ঞানের এই মেধাবী ছাত্র জড়িত ছিলেন তথ্য প্রযুক্তি ব্যবসায় গবেষণা ও প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতির সঙ্গে।

দিল্লির নয়ডাতে আইটি সেক্টরে চাকরি করতেন। পরে চাকরি ছেড়ে আবার পড়াশোনার মধ্যে ফিরে আসেন। রোদ্দুর রায় গবেষণাও করেছেন। তাঁর গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল চেতনা বিজ্ঞান। আজ তিনি যে অবিরাম গান এবং কবিতার বিকৃতি ঘটিয়ে চলেছেন, সেটাও আসলে তাঁর গবেষণারই বিষয়বস্তু।

শুধু তাই নয়, মনোবিজ্ঞানের উপর বইও লিখে ফেলেছেন রোদ্দুর রায়। রোদ্দুর রায়ের লেখা সেই বইয়ের নাম ‘অ্যান্ড স্টেলা টার্নস এ মম’। একসময় প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী থাঙ্কুমুনি কুট্টির সঙ্গে লেখক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। এরকম রোদ্দুর রায় আজ বাংলার কলেজ ক্যাম্পাসগুলির প্রতিবাদের মুখ। সাম্প্রতিককালে ঘটে চলা বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যু যেমন CAA, NRC থেকে শুরু করে হালফিলে ঘটে যাওয়া বলিউড গায়ক কেকের মৃত্যু নিয়ে বাংলার ম্যানেজমেন্ট এবং সিস্টেমের বিরুদ্ধেও প্রশ্নের আঙুল তুলতে কখনও পিছপা হননি তিনি।

কারও কাছে তিনি ‘খ্যাপা’, আবার কারও কাছে তিনি ‘প্রতিবাদী’। অবশ্য মজা করে নিজেকে নাম দিয়েছেন ‘বিশ্যোকোবি’! সোশ্যাল মিডিয়াতে কেউ তার ফ্যান, কেউ তার সমালোচক। আর কখনও কখনও তিনি এসব করতে গিয়ে হয়তো কোথাও গিয়ে মাত্রা ছাড়িয়ে ফেলেন। সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করেছিলেন রোদ্দুর। আর এরপরেই এদিন গোয়ায় গিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করল বাংলার পুলিশ। আজ(বৃহস্পতিবার) তাঁকে তোলা হবে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে।

 

শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page