স্ট্রেস দূর করতে চান, ট্রাই করুন সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স

সকালে উঠে একবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুঁ মারাটা যেন রোজকার এক নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে হঠাৎ একদিন ঠিক করলেন যে সোশ্যাল মিডিয়ায় আর ঢুঁ মারবেন না। আর এই সিদ্ধান্তকেই  ‘টেক’ গুরুরা বলবেন Social Media Detox। সহজ কথায় , আমাদের রক্তে জমে থাকা টক্সিক উপাদানগুলি যদি ঠিক-ঠিক সময়ে শরীরে থেকে বেরিয়ে না যায়, তা হলে যেমন নানা ধরনের রোগ-ব্যাধির খপ্পরে পড়ার আশঙ্কা থাকে, সেরকমই ঘণ্টার পর ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোরাঘুরি করলে শরীর এবং মনের উপরে নেতিবাচক চাপ পরে। যেমন অনিদ্রা এবং মানসিক অবসাদের মতো সমস্যার শিকার হওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়।

সম্প্রতি এক স্টাডিতে প্রমাণিত হয়েছে, গত কয়েক বছরে কমবয়সিদের মধ্যে অ্যাংজাইটি, স্ট্রেস এবং মানসিক অবসাদের মতো রোগের প্রকোপ লাপিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে, যার পিছনে মূল কারণ হল সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি। তাই তো সাবধান হওয়ার সময় এসেছে বই কী! কিন্তু কীভাবে, জেনে নিন সেই উপায়…

স্ট্রেস থেকে দূরে
  1. সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে স্ট্রেস-অ্যাংজাইটির সম্পর্কটা ঠিক কেমন? খেয়াল করলে দেখবেন, ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে ঘুরঘুর করার সময় বন্ধু-বান্ধব বা চেনা-পরিচিতদের ছবি বা স্টেটাস দেখে মাঝে-মধ্যেই মনে হয়, ওদের থেকে আমরা কত দুঃখে রয়েছি। বিশেষ করে যখন কাছের কোনও বন্ধু ভালো চাকরি পেল বা কোথাও ঘুরতে গেল, সেটি দেখে মন আরও দুঃখ পায়।
  2. এই ধরনের নেগেটিভ চিন্তার কারণে স্ট্রেস লেভেল বাড়তে সময় লাগে না। তার সঙ্গে না পাওয়ার যন্ত্রণার লেজুড় হয়ে এসে হাজির হয় অ্যাংজাইটিও। যার ফলে যেটুকু সুখ-শান্তি ছিল, তাও উঠে যায় লাটে। তাই প্রতিদিন যাঁরা কম-বেশি ঘণ্টাখানেক সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটান, তাঁদেরকে প্রায়ই সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্সের পরামর্শ দিচ্ছেন সাইকোলজিস্টরা। এতে স্ট্রেস-অ্যাংজাইটির প্রকোপ কমে যাবে নিমেষেই।
শরীর-স্বাস্থ্যে মন দেওয়া
  1. কিছুদিন আগে কয়েকটি স্টাডিতে জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, যুবসমাজের প্রায় ৭৫ শতাংশই দৈনিক দেড় থেকে দু’ ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়ার পিছনে ব্যয় করে থাকে। এই ঘণ্টাখানেক সময় যদি তারা সোশ্যাল মিডিয়া না করে  শরীরচর্চা করে, তা হলে একবার ভাবুন তো শরীর এবং মস্তিষ্কের কত উন্নতি ঘটবে! এর ফলে ‘ফিল গুড’ হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যাবে। এতে মানসিক অবসাদ এবং স্ট্রেস-অ্যাংজাটির প্রকোপও কমবে।
  2. তবে একান্তই যদি শরীরচর্চা করতে মন না চায়, তাহলে নিয়ম করে ৩০ মিনিট হাঁটতে পারেন, এতেও কিন্তু অনেক উপকার মিলবে। আর যদি কিছুই করতে ইচ্ছে না করে, তা হলে বই পড়তে পারেন অথবা ড্রয়িং বা কুকিংয়ের মতো কাজ করলেও কিন্তু শরীর-মন চাঙ্গা থাকবে। আসল কথা মাসে বারদু’য়েক, দিন দশেকের জন্য যদি সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স করা যায়, তা হলে শরীর এবং মন, উভয়ের জন্যই যে মঙ্গল, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
ইনসমনিয়ার সঙ্গে আড়ি
  1. বেশ কিছু সমীক্ষায় দেখা গেছে আমাদের মধ্যে অনেকেই ঘুমোনোর সময় মাথার কাছে ফোন রেখে শোন, এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। কিন্তু ফোনের সঙ্গে ঘুমের কি সম্পর্ক যদি বলেন? তাহলে বলি National Sleep Foundation-এর স্টাডি অনুসারে যারা ফোনকে সঙ্গী করে ঘুমোতে যান, তাঁরা ঘুমানোর আগে কম করে মিনিট কুড়ি সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটান, এতে অনিদ্রার মতো সমস্যা ঘাড়ে চেপে বসার আশঙ্কা বাড়ে। কারণ, অন্ধকারে ফোন ঘাঁটলে স্ক্রিনের নীল আলোর প্রভাবে মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ ঠিক মতো হয় না, যার ফলে সহজে ঘুম আসতে চায় না।
  2. দিনের পর দিন এমন ঘটনা ঘটলে, সেটি চিন্তার বিষয়। কারণ, ঠিক মতো ঘুম না হলে ওজন বাড়ার আশঙ্কা তো থাকেই, সেই সঙ্গে ব্রেনের ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগের খপ্পরে পড়ার আশঙ্কাও ভীষণ বেড়ে যায়। তাহলে বুঝতেই পারছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু কিছু সময়  ঢুঁ না মারলে শরীর এবং ব্রেন, দুইই চাঙ্গা থাকবে। আর আপনিও থাকবেন ফ্রেশ।
শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page