আজকের আলোচ্য বিষয় হল ‘মানুষ চেনার পাঠ’!

আজ যে চেনা, কাল সে অচেনা হতে সময় লাগে না। কয়েকটা মুহুর্ত যেন পালটে দেয় সব কিছু। মুখ নাকি মুখোশ। দীর্ঘদিন ধরেই সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত , প্রচুর মানুষের সাথে আমার আলাপ পরিচয় ঘটেছে, কিন্তু আজও আমার মনে কেমন যেন খটকা লাগে, সবাই কি মুখোশধারী? বৈশাখী কি বলছেন?

বৈশাখী- হ্যাঁ, আসলে আমরা সবাই মুখোশ পড়ে থাকি। সেই মুখোশের এক একটা নাম আছে। এটা ঠিক সাইকোলোজিকাল একটা পার্ট বলা যায়। আমার মতে। মুখ আর মুখোশের মধ্যেও কিন্তু তফাত আছে। আপনি কি বলেন?

পিনাকী – কিন্তু যখন রং চটে গিয়ে খড়ের কাঠামোটি বেরিয়ে পড়ে, তখনই যেন মানুষটির প্রকৃত স্বরূপ জানা যায়!

বৈশাখী- হ্যাঁ সেটা তো যায়, কিন্তু তার আগে আর একটা জিনিস লক্ষ্য করে দেখবেন, কোনো না কোনো কারণ বশত মানুষ সেই মুখোশটা পড়তে বাধ্য হয়।

পিনাকী- হ্যাঁ একদমই তাই। অনেকেই আমরা কখনও কোনো চরিত্র সেজে অথবা কখনও চরিত্রহীন হয়ে নিরন্তর অভিনয় করে চলেছি শুধুমাত্র স্বার্থসিদ্ধির তাগিদে !

বৈশাখী- স্বার্থ হতে পারে আবার ভয়ও হতে পারে। কারণ ভয় থেকেই মানুষ মুখোশধারী হয়ে যায়। কারন লুকোতে হবে তাঁকে যেমন তেমন ভাবে। আসলে প্রতিটি মানুষের জীবনেই একটা অন্ধকারাচ্ছন্ন দিক রয়েছে, যেদিকে অন্য কারোর অনধিকার প্রবেশ নিষেধ, বলা ভাল সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন দিকটা আমরা সুকৌশলে এড়িয়ে চলি ! আবার আলোও রয়েছে। অন্ধকারকে ভয় পাওয়ার পর আলোয় ফিরতে না চাওয়া হয়ত তখন ভীষণভাবে মনের ওপর এফেক্ট করে। যার ফলে বাইরের পৃথিবীর কাছে লুকোতে হলে একটা মুখোশ চাই।

পিনাকী – হ্যাঁ। তবে মানুষ চেনার পাঠটি কিন্তু নেহাতই সহজ নয়। আপাতদৃষ্টিতে সবাই অমায়িক, ভদ্র । কিন্তু নিজের স্বার্থে ঘা লাগলেই মানুষটি হঠাৎ করেই কেমন যেন বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন।

বৈশাখী- ঠিক তাই। স্বার্থ আসলে একমাত্র দেওয়াল। যা আটকে রাখে মানুষকে। পড়তে বাধ্য করে মুখোশ। তখন মুখ আর মুখোশের ভিড়ে চিনতে পারা যায় না, আসলেই কি এই মানুষটাই আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করত।

পিনাকী – কখনও আতিথেয়তার আতিশয্য তো আবার কখনও বিষাক্ত কথার ছোবল – প্রতিটি মানুষের মধ্যেই এই দ্বিচারিতা লক্ষ্য করা যায় !

বৈশাখী- তবে আমার মতে, এক একটা মুহুর্তে মানুষ এক এক রকম মুখোশ পড়ে থাকে। আর একটা জিনিস হল দু-মুখো মানুষ। এদের চেনা বড়ো দায়। কারণ এঁরা আপনার সঙ্গেও ভালো ব্যবহার করবে, আবার উলটো দিকের মানুষের কাছে আপনার নিন্দে করবে।

পিনাকী- সমাজে যাঁরা পতিতা, যাঁরা কিনা নিষিদ্ধ পল্লীতে নেহাতই পেটের দায়ে দেহব্যবসা করেন, তাঁদেরও কিন্তু একটা ব্যক্তিগত পরিসর রয়েছে, রয়েছে সুখ দুঃখ ! কিন্তু তাঁদের বোধহয় আজও আমরা যথার্থ সম্মান দিতে পারিনি। খোঁজ নিলে হয়তোবা জানা যাবে যে সেই যৌনকর্মীর একটি সুন্দর মন রয়েছে ‌‌। কিন্তু সেখানে অনেকেই দু’ইঞ্চির পুরুষত্ব ফলাতেই যান ! ওই যে বললাম, স্বার্থ !

বৈশাখী- মানুষ চেনা বড়ো দায়, কিন্তু সহজ মানুষের অভাব আছে কি, যারা মনের যেমন, সামনেও সেরকম। সেই মানুষের চোখ দেখে বোঝা যায়, আবার এখানে একটা কথা বলতে চাই। সহজ, সরল চোখের মানুষেরা ভেতরে লুকিয়ে রাখতে পারে পাহাড় প্রমাণ কথা।

পিনাকী – ধ্রুব সত্য !

বৈশাখী- আমার সব সময় একটা কথা মনে হয়, এই যে যারা মানুষের ক্ষতি করে, তাদেরও একটা মন রয়েছে। সেই মনে হয়ত কখনো ভোরের আলো প্রবেশ করেনি। এই মানুষদের আপনি, আমি চিনি। কিন্তু কখনো তাঁদের মুখোশ টেনে ছিঁড়তে পারব না, আমরা। মুখ আর মুখোশের ভিড়ে তাঁরা পিএইচডি করে ফেলেছেন। হাহাহা… মজা করলাম।

পিনাকী – হয়তো তাই। তবে অতীতের সেই সহজ, সরল , অনাড়ম্বর জীবন যাপন আজ হয়তোবা অনেকেই এড়িয়ে চলেন, পরিবর্তে তাঁরা দেখনদারীতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন ! আর বাবা, টাকা দিয়ে বিলাস বৈভব কেনা যায়, কিন্তু মানসম্মান নৈব নৈব চ !

বৈশাখী- মান… থাকলে তবেই সম্মান। এ কথাটা কি কেউ মেনে চলে আজকাল। সকলেই টাকার পেছনে ছুটতে গিয়ে ভুলেই গিয়েছি, আয়নার মধ্যে থাকা মানুষটা নিজেও একটা মুখোশ পড়েই ঘরের বাইরে পা বাড়ায়।

পিনাকী- আজকের মতো এটুকুই থাক তবে, ‘মানুষ’, মান আর হুশ নিয়ে চলা ব্যক্তিদের সংখ্যা আজকাল যে কমে আসছে বড়ো।

শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page