গুচ্ছ কবিতা।। বর্ণালী গুপ্ত
প্রি পুজো সিন্ড্রোম -১
সবটুকু যেন অন্যরকম, রোদ্দুর কত কিছু বদলে দেয়,
তাই দুপুর গড়ানোর আগেই মানুষের ঢল নামে রাস্তায়
ছোটো, ছোটো দোকানিদের তৎপরতা বলে দেয় ‘মা দুগ্গা’ মুখে হাসি ফোটালেন।।
খেটে খাওয়া মানুষগুলো, হিসেব কষে দোকানের বাইরে একখান নতুন কাপড়ের জন্যে।
মেয়েটি বাবাকে বুঝিয়ে মায়ের একটি ভালো চকচকে শাড়ি বাছে।
সস্তার নেলপালিশ, প্রসাধনী আগলে দাঁড়িয়ে থাকা শ্যামলা রোগা দুর্গাটির চোখদুটি মায়া জড়ানো হাজার জিজ্ঞাসা!
কলকাতা বাজার, কসমোবাজার,এমবাজার কত নানা নকল
মলেরা ঢাকের বাদ্যি বাজিয়ে লোক ডাকে –
উঠতি ছেলেরা জরিপ করে নেয় – লুকিয়ে আসা বান্ধবীর গা ঘেঁষে –
পুরো ভিড়টা আজ দিন আনা দিন খাওয়ার কলরব।
লছমন চাচা মহানন্দে ফুচকার হিসেব গোনে – শিবু খুড়ো পান চিবতে চিবোতে বলে হঁ হে বাজারটা জম্যে গেছে… কি বুলিস!!
দশকর্মার দোকানে ধুনো গুগ্গুলের গন্ধে হারান দাদু ফর্দ মেলায় চশমা মুছে – এ সিন্ড্রোমের কোনো পরিবর্তন নেই আজও।
হঠাৎ লাজুক মালতী বলে শীলা কে ‘সে আসবে জানিস ছুটি পেয়েছে কারখানায়..’
কাশের দোলায় মেঘের ভেলায় চালচিত্রের মাঝে মা দুগ্গাও যেন মুখ টিপে হাসেন!
‘বাজলো তাহার আলোর বেনু”
প্রি পুজো সিন্ড্রোম
বিশ্বকর্মা পুজো ঘুড়ি উড়িয়ে যেন নীলকন্ঠকে আহ্বান জানায়। সারা আকাশ জুড়ে একটা বিষন্নতার মেঘ, কি জানি হয়ত মনের ভুল।
দেশ জুড়ে এন. আর. সির আতঙ্ক চন্দ্রযান এখনও খুঁজে বেড়াচ্ছে ভবিষ্যত,খ্যাপা শ্রাবণ বার,বার আশ্বিনকে এমনকরেই বেহাল করে কোনো না কোনো অছিলায়। পিতৃপক্ষের চাপা মনখারাপ কি বাতাসে ঘোরে?
সব কিছুর মধ্যেও হস্তশিল্প মেলায় অক্সিডাইজ গয়নাগুলো কবিতা হয়ে যায়।
হয়ত সারাবছর মলে ঘুরে ঘুরে বোরড্, জিনিয়া,রাগিনী,শ্রেয়স,বিরাজরা কিছুটা সময় স্ট্রিট ফেয়ারে বুড়ির চুল নিয়ে লোফালুফি করে।
করিম, ইকবালরা কিন্তু মেহেন্দির ক্যাটলগ নিয়ে বাজারের কোণগুলো দখল করে নিয়েছে –
সুমন মিশ্রা,কানন বর্মা,বিদিশা সেনশর্মারা উইন্ডো শপিং সেরে বারিস্তায় গলা ভিজিয়ে ট্যাটু পার্লারে ঢুকে পড়ছে – শপিং তো কমপ্লিট সে কবেই –
পার্ল ফেসিয়াল এন্ড হাইলাইটিং করা মিসেস হেনা রায় পুজোয় এন আর আই দেওর-জা’কে কি করে চমক দেবেন ভাবছেন।
অনুরাধা জ্যাঠাইমা কিন্তু ষষ্ঠি থেকে একাদশীর মেনু ঠিক করে চলেছেন- পঞ্জিকা সামনে রেখে।
আমি ভাবছি কি করে কাশফুল দেখতে যাব পাঞ্চেত ড্যামের ধারে।