কোরিয়ান রেড জিনসেং

ত্বকের চর্চায় রেড জিনসেং

নিশ্চয়ই শুনেছেন অনেকেই বলে, এশিয়ানদের স্কিন টাইপ বেশ ভালো। বলতে গেলে তাঁদের স্কিনে বয়সের ছাপ থাকে না। আর এটা বেশি করে হয় চাইনিজ, কোরিয়ান এবং জাপানীজ মেয়েদের। তাঁদের স্কিন ভালো থাকার রহস্যটাই হলো রেড জিনসেং। এর বহুমূল্য গুণ হলো, ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে রেড জিনসেং। প্রায় ১৫০০ বছর ধরে কোরিয়ান রেড জিনসেং-এর মূল ব্যবহার করে আসছে তাঁরা।
জিনসেং কে বলা হয় wonder herbs বা আশ্চর্য লতা। চীনে সহস্র বছর ধরে জিনসেং গাছের মূল আশ্চর্য রকম শক্তি উতপাদনকারী পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এছাড়াও এর রয়েছে নানাবিধ গুন। চীন থেকে কেউ বেড়াতে আসলে সাধারণত দেখা যায় জিনসেং ও সবুজ চা কে গিফট হিসেবে নিয়ে আসতে। সেইরকম একটা গিফট পাওয়ার পরে ভাবলাম যে এই আশ্চর্য লতার গুন কে আসলে বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত নাকি এ শুধুই প্রাচীন চাইনিজ মিথ?
জিনসেং কোরিয়াতে এবং দেশের বাইরে জনপ্রিয় হলেও এর চাষাবাদ কিন্তু বেশ কঠিন। বর্হিবিশ্বে জিনসেং-এর প্রচুর চাহিদা মেটানোর জন্য কোরিয়ার Gyeong sangbuk-do প্রদেশের পুঞ্জী এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে জিনসেং-এর সফল চাষাবাদ চলছে সেই ১১২২ খ্রিস্টাব্দ থেকে। এই পুঞ্জী এলাকা জিনসেং দেশ হিসাবে ঐতিহাসিকভাবে পরিচিত।
এবার বলি এর গুণ গুলো-
• জিনসেং শরীরের শক্তি বাড়ায় এবং দুশ্চিন্তা ও হতাশা দূর করে।
• ইমিউন সিস্টেম বাড়াতে জিনসেং ভীষন সাহায্য করে।
• এছাড়া যাঁদের খুব বেশি ডিপ্রেসন হয়। একটুতেই মন খারাপ হয় তাঁরা কিন্তু এই রেড জিনসেং ব্যবহার করতে পারো।
• এছাড়া স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, কথা শোনার সাথে সাথে বুঝতে না পারা, চিন্তা শক্তি কমে যাওয়া রোধ করে রেড জিনসেং।
• যাঁদের কোলেস্টেরলের সমস্যা আছে। তারাও কিন্তু এটি ব্যবহার করতে পারো।
• স্কিন এজিং রোধ করতেও এর জুড়ি মেলা ভার।
• তবে যদি কারোর ঘুমের সমস্যা থাকে, তাহলে রেড জিনসেং ব্যবহার করা উচিত নয়।
• কোরিয়ান রেড জিনসেং এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পদার্থ স্কিন ভালো রাখতে সাহায্য করে।
• জিনসেং এক্সট্রাক্ট স্কিনের মধ্যে পৌঁছে স্কিন সেল ভালো রাখে।
• এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ফর্মুলা একজিমা তাড়াতেও সাহায্য করে।
• লৌহ, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি১, বি৩, বি৬, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস সহ অনেক খনিজের আধার এই জিনসেং। যে কোনো শারীরিক ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করে।
• রেড জিনসেং এর শেকড়ের বয়স যত বেশি হবে। এর উপকারীতাও তত বেশি হবে।
• জিনসেং বিভিন্ন এন্টি-এজিং ক্রীম ও স্ট্রেচ মার্ক ক্রীম এ ব্যবহৃত হয়। এইসব ক্রীম ত্বকের কোলাজেন এর উপর কাজ করে ত্বকের বলিরেখা প্রতিরোধ করে ও গর্ভবতী নারীদের পেটের ত্বক স্ফীতির কারণে তৈরী ফাটা দাগ নিরসন করে।
• জিনসেং পূর্নবয়স্করা ২-৩ সপ্তাহ টানা খেয়ে ২ সপ্তাহ বিরতি দিয়ে আবার খেতে পারবে।
• সরাসরি মূল খেলে ০.৫-২ গ্রাম মুল খাওয়া যাবে দিনে ১ বার। মূল কিনে খাওয়া টাই সবচেয়ে সাশ্রয়ী হয়। মূল-টা চিবিয়ে খাওয়া যায়, গুঁড়ো করে জিভের নীচে রেখে দিয়ে খাওয়া যায়, জলে এক ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে জল সহ খাওয়া যায় অথবা জলে ৫ মিনিট ফুটিয়ে জল সহ খাওয়া যায়।
• বাচ্চা, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের এটা খেতে নিষেধ করা হয়। জিনসেং স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে তাই স্নায়ুর উপর কাজ করে এমন অন্য কোনও ওষুধ (যেমন ঘুমের ওষুধ, বিষন্নতার ওষুধ ইতাদি) এর সঙ্গে এটা খাওয়া উচিত না।
• জিনসেং রক্ত জমাট বাধা প্রতিরোধ করে, তাই হার্টের রোগীরা যারা ইতমধ্যে রক্ত তরল করার অন্যান্য ওষুধ খাচ্ছেন, তারা এদের সঙ্গে জিনসেং খাবেনা না।
• জিনসেং ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে, তাই ডায়বেটিস রোগীদের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে এটা খাওয়া উচিত যাতে ওষুধের সাথে জিনসেং নিলে সুগার যেন বেশি কমে না যায়।
• জিনসেং যেহেতু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় তাই সাধারণ মানুষ এটি খেলে উপকৃত হবে কিন্তু Auto-immune disease এর রোগীদের খাওয়া উচিত না।
• জিনসেং মেয়েলি হরমোন ইস্ট্রোজেন এর পরিমাণ বাড়ায়, তাই যাদের হরমোনের সমস্যা আছে তাদের এটা খাওয়া উচিত কিন্তু যাদের ব্রেস্ট, জরায়ু বা ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার আছে তাদের খাওয়া উচিত নয় কারণ অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন এইসব ক্যান্সারে আরো সহায়ক ভূমিকা রাখে।

শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page