mental health

মানসিক ব্যাধিঃ যে লক্ষণ গুলি এড়িয়ে যায় চোখ

বিদিপ্তা মুখার্জী

একের পর এক আত্মহত্যা চোখে আঙুল দেখিয়ে দিচ্ছে সমাজকে। কি কারণ, কেন এরকম হচ্ছে বুঝতে গেলে গভীর ভাবে আর্থ সামাজিক এবং মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন। তবে আমাদের চারদিকে এরকম অনেক মানুষই রয়েছেন যাঁদের দেখলেও আমরা বুঝতে পারি না আসলেই তাঁদের মনের ভেতর কি চলছে। কি কি কারণে এই প্রবণতা তৈরি হতে দেখা যেতে পারে, তার একটি তালিকা দেখা যাক-

  • পরিবারে এমন কোনও ঘটনা পূর্বে ঘটলে
  • সাম্প্রতিক কালে কোনও প্রিয়জন আত্মঘাতী হলে
  • দীর্ঘদিন ধরে কোনও অসুখে ভুগলে
  • যদি বাইপোলার ডিসঅর্ডার, অবসাদ বা উদ্বেগের মতো কোনও মানসিক সমস্যা থাকে
  • মাদক দ্রব্যাদিতে আসক্ত হলে
  • দীর্ঘদিন কোনো মানসিক চাপের পরিস্থিতি তৈরি হলে, অথবা কোনও অসহনীয় সম্পর্কে থাকলে
  • হঠাৎ করে প্রিয়জনের মৃত্যুর মতো কোনওরকম মানসিক আঘাত পেলে
  • ছোটবেলার কোনও গভীর মানসিক আঘাত
  • কোনওরকম প্রাণঘাতী অস্ত্র কাছাকাছি থাকলে
  • অতীতকালে আত্মহননের চেষ্টা করে থাকলে

অনেকেই হতে পারেন অবসাদের শিকার,  তাঁকে দূরে না ঠেলে বরং সাহায্য করুন

তবে কে কখন কোন পরিস্থিতিতে এরকম কঠিন সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটি আগে থেকে অন্য কারও পক্ষে বোঝা মুশকিল। বাবা-মা, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ঠিক কী দেখে বিপদের আশঙ্কা করবেন বা সতর্ক হবেন, তা বলা মুশকিল। তবে কারও আচরণ, কথাবার্তা বা স্বভাবে হঠাৎ পরিবর্তন হলে, তার দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন মনোবিদরা। কেউ যদি হঠাৎ করেই মৃত্যুর কথা বেশি বলেন, বা তাঁর না-থাকায় সবার মঙ্গলকামনা শুরু করেন, কিংবা বার বার প্রকাশ করেন যে, কোনও জটিল পরিস্থিতি থেকে কিছুতেই নিস্তার পাচ্ছেন না, অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে তাহলে। অবশ্যই মন দিয়ে তাঁর কথা শোনার চেষ্টা করতে হবে। তবে সবসময় পরিস্থিতি এত সহজ হয় না। কখনও কখনও অনেক ছোট লক্ষণ আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়।

সেগুলি কী—

  • অনেক সময় সামনের ব্যক্তিটির আচরণের বদল আমরা ধরতে পারি না, তার কারণ সেগুলি হয়তো অবসাদ বা মানসিক চাপের সঙ্গে সরাসরি কোনও যোগাযোগ নেই। এক্ষেত্রে কোনও শান্ত ব্যক্তি হঠাৎ করেই বদমেজাজি হয়ে গিয়েছেন। অথবা যিনি অনেকদিন ধরেই অবসাদে ভুগছিলেন, তিনি হয়তো খুব শান্ত এবং তৃপ্ত ব্যবহার করছেন হঠাৎই।
  • ঘুমের অভ্যাসে বদল অনেক সময় অবসাদের লক্ষণ, সেরকমই আত্মহননের দিকে এগোনোর অন্যতম লক্ষণও হতে পারে এটি। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিক্ষণ ঘুমনো, ঘুম থেকে উঠতে অসুবিধা হওয়াও একটি লক্ষণ। সেরকমই হঠাৎ যদি কেউ রাতের পর রাত সঠিক করে ঘুমাতে না পারেন, তাহলেও সতর্ক হতে হবে।
  • গোপনে ঘুমের ওষুধ কিনে কেউ জমিয়ে রাখছেন কিনা, সেটি লক্ষ্য রাখা অন্য কারও পক্ষে অসম্ভব। তবে যদি চোখে পড়ে, কেউ ঘন ঘন ওষুধের দোকানে যাচ্ছেন, তা হলে সতর্ক হতে হবে।
  • আবেগপূর্ণ মুহূর্তেও যদি কেউ নিরুত্তাপ ব্যবহার করেন, কোনও কাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন, প্রায় প্রত্যেক পরিস্থিতিতেই উদাসীন থাকেন, তা হলে সেটি যেমন অবসাদের লক্ষণ, তেমনই আশঙ্কা থাকতে পারে আত্মহননেরও।
  • সামাজিক ভাবে মেলামেশা বন্ধ না করলেও খেয়াল রাখা প্রয়োজন, কেউ মানসিক ভাবে খুব বেশি উদাসীন রয়েছেন কি না।
  • অনেক সময়েই আমরা বিভিন্ন শারীরিক লক্ষণ এড়িয়ে যাই। অনেকেই হয়তো জানেন না, অবসাদের উপসর্গ হতে পারে এগুলিও। সেরকমই কারওর মধ্যে আত্মহননের প্রবণতা তৈরি হলেও এমন শারীরিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন- দীর্ঘক্ষণ মাথাব্যথা, গায়ে ব্যথা, পেটে ব্যথা বা হজমের সমস্যা শারীরিক সমস্যার কথা বলে, তেমনই মানসিক সমস্যারও ইঙ্গিত দেয় কিছু উপসর্গ।

** এরকম অবস্থায় পাশে থাকুন। স্বাভাবিক ব্যবহার করুন সেই ব্যক্তির সঙ্গে। আদতে আমরা জানি না, হাসিখুশি প্রাণবন্ত মানুষটি ভেতরে ভেতরে কোন যন্ত্রণা ভোগ করছে।

 

শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page