হাসুন, প্রাণ খুলে বাঁচুন
সুকুমার রায়ের সেই ছড়াটা পড়েছেন তো-
রামগরুড়ের ছানা হাসতে তাদের মানা,
হাসির কথা শুনলে বলে,
‘হাসব না–না, না–না !’
এমন রামগরুড়ের ছানা গোমড়ামুখো মানুষ এখন আমাদের চারপাশে অনেক দেখা যায়। হাসতে কি টাকা খরচ হয়? তবু মানুষ হাসে না আজকাল। দিন দিন স্ট্রেসের মাত্রা বাড়ছে আর আমাদের হাসি যাচ্ছে পালিয়ে। আর সেই হাসির সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের মানসিক, শারীরিক ভালো মন্দের ব্যাপার।
হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখতে কার না ভালো লাগে বলুন? পাশাপাশি হাসি একটি প্রাকৃতিক ওষুধ, এটি আমাদের আবেগকে সহজেই স্পর্শ করে ও সেটি প্রকাশ করে। হাসি সংক্রামিত হয়, ধরুন আপনি হাসছেন প্রাণ খুলে, এই হাসি দেখে অন্যের মুখে হাসি ফুটবে না এটা হতেই পারে না! হাসি মুহুর্তেই অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে সক্ষম। হাসির এই তাৎক্ষণিক উপকারিতার পাশাপাশি রয়েছে কিছু দীর্ঘমেয়াদি উপকারও।
তাই শরীরকে চাঙা ও সুস্থ রাখতে হাসির কোনো বিকল্প নেই। জেনে নিন হাসির উপকারিতা সম্পর্কে–
- টি-সেলের ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে হাসি। এই বিশেষ ধরনের কোষটির শক্তি যত বাড়তে থাকে, তত শরীর ভিতর থেকে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। টি-সেলের ক্ষমতা বাড়ানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হলো মন খুলে হাসা।
- যখনই দেখবেন রাগ, হতাশা বা দুঃখ মনকে ঘিরে ধরেছে, তখনই এমন কিছু করবেন যাতে খুব হাসি পায়। কারণ, মন যখন ঠিক থাকে না, তখন মানসিক চাপ কমাতে হাসিই একমাত্র দাওয়াই হতে পারে।
- আমরা যখন প্রাণ খুলে হাসি, তখন আমাদের শরীরে সেরাটোনিন এবং এন্ডোরফিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে নিমিষে আমাদের মন ভাল হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে মানসিক এবং শারীরিক যন্ত্রণাও কমে যায়। তাই তো এ ২টি হরমোনকে চিকিৎসকেরা ‘ফিল গুড’ হরমোনও বলে থাকেন।
- হাসার সময় আমাদের শরীরে ‘ফিল গুড’ হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। আর এই হরমোনগুলি নানাভাবে শ্বেত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই শক্তিশালী হয়ে যায় যেকোনও রোগই শরীরকে ছুঁতে পারে না। সেই সঙ্গে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
- একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে হাসার সময় আমাদের সারা শরীরে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। রক্তনালীগুলি প্রসারিত হতে শুরু করে। যার ফলে স্বাভাবিক ভাবেই শিরা-ধমনীর উপর চাপ কম পরে। আর এমনটা হলে ব্লাড প্রেসার কমতেও সময় লাগে না। তাই প্রেসারের রোগীরা যদি গোমড়ামুখো হন, তাহলে কিন্তু বেজায় বিপদ!
- একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, হাসার সময় আমাদের শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত ক্যালোরি বিপুল পরিমাণবার্ন হতে থাকে। শুধু তাই নয়, এই সময় পেটেও খুব চাপ পড়ে। ফলে সব দিক থেকে ওজন হ্রাসের পথ প্রশস্ত হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে ১০০ বার হাসি ১০ মিনিট নৌকা চালানো কিংবা ১৫ মিনিট সাইকেল চালানোর সমান শারীরিক কসরত। শারীরিক সঞ্চালনের কারণে সবখানে রক্ত চলাচল যায় বেড়ে। রক্তে সংযুক্ত হয় বেশি পরিমাণ অক্সিজেন।
- বেশি হাসলে ব্লাড প্রেসার কমে যায়। শুধু তাই নয়, হার্টের কার্যক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। আসলে হাসার সময় আমাদের রক্তনালীগুলি প্রসারিত হয়। ফলে সারা দেহে রক্ত প্রবাহ বেড়ে গিয়ে শরীর একেবারে চাঙ্গা হয়ে ওটে। সেই সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও কমে।
- হাসির সময় আমাদের শরীরে এন্ডোরফিন হরমোনের ক্ষরণ হয়, যা স্ট্রেস হরমোন নামে পরিচিত। এটি কর্টিজল হরমোনের কার্যক্ষমতাকে কমিয়ে ফেলে। যার ফলে হাসির জোয়ারে মানসিক চাপ যে কখন দূরে পালায় তা বোঝাই যায় না।
তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, হাসতে হবে প্রাণ খুলে। মুচকি হাসিতে কিন্তু কাজ হবে না। তাই আর গোমড়ামুখো হয়ে না থেকে আসুন আমরা বেশি বেশি হাসি। জীবনকে করে তুলি আনন্দময়।