মেন্টাল ডায়েট

মেনে চলুন মনের ডায়েট

ডায়েট, এই শব্দটা শুনলেই কল্পনায় আসে কম খাওয়ার কথা। সঙ্গে শারীরিক কসরত। তবে আমরা যা যা খাচ্ছি, শুধুমাত্র তার ভেতরেই সীমাবদ্ধ নয় ডায়েট। আমরা কী শুনছি, কী দেখছি বা পড়ছি, কাদের সঙ্গে চলছি, বন্ধুদের আড্ডায় কী নিয়ে যুক্তিতর্ক আর গল্প করছি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাদের অনুসরণ করছি—সেসবও কিন্তু ডায়েটেরই অংশ। চিন্তাভাবনার সঙ্গে জড়িত এই ডায়েটকেই বলে মেন্টাল ডায়েট।
আর তাই ডায়েট শুধুমাত্র খাবারের ওপর নির্ভর করে না। ব্যস্ত জীবনে আমরা নিজের দিকে তাকানোর সময় পাই না। উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠাকে আমরা প্রতিনিয়ত পাশ কাটিয়ে যাই। কাজের চাপে ভুলে যেতে হয় নিজের একান্ত অনুভূতিগুলো। আমাদের কাছে শারীরিক সুস্থতা যতটা প্রাধান্য পায়, মানসিক সুস্থতা যেন ততটাই অবহেলিত। আর তারপরেই দানা বাঁধে উদ্বেগ, বিষণ্নতা, অবিশ্বাস আর আত্মসন্দেহের প্রবণতা।
নেগেটিভ চিন্তাভাবনা, দুশ্চিন্তাকে দূর করে মনকে শান্ত রাখাটাই এখানে মুখ্য। মন ও মস্তিষ্কে যাতে ইতিবাচকতার চর্চা হয়, সৃজনশীলতার ফলন ঘটে, সে জন্যই যা কিছু করা, তাইই মেন্টাল ডায়েট।
জেনে নিই নিজেকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখার কয়েকটি উপায়
  • বেশির ভাগ সময়ই আমাদের চারপাশের মানুষ, আলোচনা, কী পড়ছি, কী দেখছি—এই সবকিছুই আমরা চিন্তা করছি। যখন চিন্তা করছেন খেয়াল করুন কী ভাবছেন। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আপনি যা ভাবছেন, সেটি কি আপনার জন্য কোনো উপকারী চিন্তা? যদি সেই চিন্তায় কোনো ইতিবাচক ফল না আসে, তাহলে বাদ দিন। এ ব্যাপারে যদি আপনি সতর্ক থাকেন, তাহলেই চিন্তার ক্ষেত্রে লাগাম টেনে ধরতে পারবেন।
  • মন ভালো থাকলে সব কাজই আনন্দের মনে হয়। মন ভালো রাখতে তাই বেছে নিন নিজের পছন্দের কোনো শখ। যেমন- সিনেমা দেখা, বই পড়া, ছবি আঁকা, গান শোনা, ঘুরে বেড়ানো, উইন্ডো শপিং—স্বল্প সময়ের জন্য হলেও হারিয়ে যেতে পারেন অন্য এক দুনিয়ায়।
  • অনেক সময় কাছের বা দূরের মানুষের সঙ্গে কথা বলেও খুব সহজেই ‘ইমোশনাল রিলিফ’ হয়। ঘুরে আসতে পারেন নতুন কোনো জায়গার, নতুন কোনো পরিবেশ থেকে। এতে মানসিক ক্লান্তি অনেকটাই দূর হয়ে যায়।
  • চিন্তা কোনোভাবেই দূর করতে পারছেন না? নিজের সঙ্গে খেলতে পারেন একটি মজার খেলা। যেসব চিন্তা আপনাকে দুঃখ দিচ্ছে বা অসুখী করে তুলছে, সেগুলো ভাবা বন্ধ রাখুন। বদলে পজিটিভ কোনো কিছু ভাবুন। আপনার মন যতই খারাপ চিন্তা করতে চাইবে, ততই এটিকে আপনি রূপান্তরিত করুন ইতিবাচক, সৃজনশীল কোনো চিন্তায়। অথবা সেই সময় নিজেকে ব্যস্ত রাখুন শিক্ষামূলক কোনো কাজে।
  • টেলিভিশন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পর্দায় ভেসে আসা ঘৃণা বা বিদ্বেষমূলক খবর চাইলেও আমরা না দেখে থাকতে পারি না। মানসিক শান্তি ফিরে পেতে কমিয়ে আনতে পারেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার।
  • মেন্টাল ডায়েটের অন্যতম পথ মনোযোগী হওয়া। চেয়ারে বসা, মোবাইল হাতে নিয়ে ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে ঢুঁ মারা, জল খাওয়া, হাঁটা, এমনকি রান্নার মতো কাজও আমরা করে ফেলি অবচেতন মনে। মনোযোগ দেওয়ার অর্থ হচ্ছে, বর্তমানে থাকা। যে কাজ করছেন, সে কাজটিই একাগ্রতার সঙ্গে করুন। মন দিয়ে অন্যের কথা শোনার অভ্যাস করুন।
দিন শেষে আপনি যে চিন্তাটি বেছে নেবেন, সেই পথেই আপনি এগিয়ে যান। তাই সুস্থ্ ও সুন্দর মনের জন্য ‘মনের ডায়েট’-এর বিকল্প নেই।
সূত্র: হেলথ শটস, জিজিস অ্যাডভেঞ্চার
শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page