উপন্যাস।। আবার এসো ফিরে।। রামেশ্বর দত্ত
জঙ্গল সাফ করা চলছে। অর্ধেক দিনের কাজের পরেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামল। বৃষ্টির মধ্যে তারা কাজ চালিয়ে যেতে থাকল। না হলে জানে, পুরো দিনমজুরী পাবে না। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কাজ। গা মাথা ভিজছে। ঈশ্বরচন্দ্রের মনে দয়া হল। ভাবলেন এভাবে বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বরজারিতে পড়ে যেতে পারে।
কাজ ছেড়ে তিনি তাদের বাড়ির ভিতরে এসে আশ্রয় নেবার কথা বললেন। অথচ কেউ আসে না।
তিনি তাদেরকে আবার অনুরোধ করলেন। একজন বলে উঠল, পুরা কাজ না করলে, পুরা রোজ দিবি কি তুই? রোজ না প্যেলে আমরা আজ খাব কী?
পর্ব – ২৬
ঈশ্বরচন্দ্র ব্যাপারটা বুঝলেন। আশ্বস্ত করলেন। এবার তারা ফিরে এলো।
সারাদিনেও বৃষ্টি থামল না; তারাও কাজে নামতে পারল না। দিন শেষে ওদের মুখ চুন। এই বুঝি বাবু বলে, কাল কাজ শেষ করে পয়সা নিয়ে যাস।
কিন্তু ঈশ্বরচন্দ্রের মন এত কঠোর নয়। তিনি তাদের পুরো মুজুরিই দিলেন। তারা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে খেল। ভাবল, এ কেমন বাবু, কাজ না করিয়েই পুরো পয়সা দিয়ে দিল! সেদিনের মতো তারা বিদায় তো নিল, তবে সে খবর গ্রামে রটতে দেরী হল না। তারা বলে বেরিয়েছে, তাদের দেশে এক দয়াবান বাবু এয়েছে।
কর্মাটাঁড়ে সাকুল্যে আট ঘর বাঙ্গালির বাস। তাদের কাছেও এ খবর পৌঁছাল। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নামডাক তাদের গোচরে আছে, তবে, মানুষটাকে তারা চাক্ষুষ করেনি। একে একে সকলে এসে দেখা করে তাঁর সঙ্গে পরিচয় পর্ব সেরে নিল।
ভদ্রজনোচিত তাঁরা, ঈশ্বরচন্দ্রের কাছের লোক হল বটে; তবে তাঁর প্রাণের লোক হল সাঁওতালকুল; সাঁওতাল বিদ্রোহের সিধু-কানহু-চাঁদ ভৈরবের রক্ত এদের শরীরেও বইছে। এমন মানুষগুলোর জীবনযাত্রার মানে উন্নতি ঘটাবার জন্যে মন তো ঈশ্বরচন্দ্র বহু আগেই তৈরী করে রেখেছেন; এতদিনে সেই সুযোগ এলো। এর সদ্ব্যবহার তাঁকে করতেই হবে; স্থির করে নিয়েছেন, শেষ জীবনটা তিনি এদের জন্যেই ব্যয় করবেন।
পরে একদিন।
ভোরের আলো ফোটবার সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছেন। অভিরামকে বাড়িতে রেখে এসেছেন। একলা গ্রামের পথে চলতে চলতে কতদূর এসে পড়েছেন, খেয়াল নেই। বেলা বাড়তে শুরু করল। এবার বাড়ি ফিরতে হবে। ঘুরে পশ্চাতদিকে হাঁটতে শুরু করলেন। কিন্তু এ কি! সঠিক পথে চলছেন না বলে তাঁর মনে হচ্ছে। পথ হারিয়ে ফেলেছেন। গ্রামের পথ। সেখানে তো আর দিক নির্ণয়ের ফলক নেই? যা রয়েছে, তা শুধু শাল-তাল-বাবলা গাছের সারি আর ধু ধু মাঠ প্রান্তর। তাতে দিক চেনার থেকে বেশি দিকভ্রষ্ট হবার ভয়। সবই যে এক ধরণের। পথে কোনও বট–অশ্বথু গাছও চোখে পড়েনি, যা কিনা নিশানা করে রেখেছেন। কী করেন এখন?
দূর থেকে দেখতে পেলেন একদল পুরুষ তাঁর দিকেই আসছে। তিনি দাঁড়িয়ে পড়লেন। কাছে আসতে দেখতে পেলেন, যুবকের দল কাঁধে তীর ধনুক নিয়ে শিকারে যাচ্ছে। হাত দেখিয়ে দাঁড়াবার ইশারা করলেন তাদের। কাছে এসে এমন একজন ভদ্রবেশী লোককে দেখে তারা কেমন হকচকিয়ে গেল।
ঈশ্বরচন্দ্রের পরনে ছিল ধুতি ফতুয়া, গায়ে জড়ানো সূতির মোটা চাদর; যা তাঁর চিরকেলের পোশাক। এদিকে যুবকদের গা খালি। নিচে রয়েছে খাটো করে পরা একফালি নেংটি জাতীয় কাপড়, মাথায় গামছা বাঁধা।
ঈশ্বরচন্দ্র জানতে চাইলেন, তারা কোথা থেকে আসছে, কোথায় যাচ্ছে। ভাষার প্রতিবন্ধকতায় যুবকেরা কী বুঝল কে জানে, বা হয়তো ঠিকই বুঝেছিল, কিন্তু মুখের ভাষায় তা ব্যক্ত করতে না পেরে একবার ডান হাত তুলে সামনের দিকে আর একবার বাঁ হাত পিছনের দিকে দেখিয়ে কিছু বোঝাতে চাইল। ঈশ্বরচন্দ্র বুঝলেন না কিছুই। এবার মরিয়া হয়ে প্রশ্নই করে বসলেন, তুদের রেল ইস্টেশনটা কুন দিকে?
কাজ হল। উত্তর এলো, তু ইস্টেশনে যাবি? পথ হারাইছিস, বাবু?
ঈশ্বরচন্দ্র ঘাড় নাড়লেন। অবাক করে দিয়ে সবকটা যুবক তাঁকে নিয়ে উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করল, রেল স্টেশনে পৌঁছে দেবার জন্যে। মনে মনে লজ্জা পেলেন ঈশ্বরচন্দ্র। মুখে কিছু বললেন না। তবে আরও একবার সম্যক চিনে গেলেন এখানের সাদাসিধে সরলমনা মানুষগুলোকে। এরা সত্যিই প্রকৃতির সন্তান। আর, এই প্রকৃতিকেই তিনি এখন খুঁজে পেতে চাইছেন জীবনের বাকি দিনগুলো শান্তিতে কাটাবার জন্যে।
নন্দনকাননে ফিরে এলেন। দেরী দেখে অভিরাম বুঝেছে, বাবু নিশ্চয়ই পথ হারিয়ে বসেছিল। সে একচোট বকাঝকা করল । বলল, তু একলা কেনে গেলি? জানিস, উয়ারা নিজেদের মহল্লায় নতুন মানুষ দেখলে, তাকে সহজে ছাড়ে না…
-আরে, আরে…, করে ঈশ্বরচন্দ্র তখন আর এক বাঙালি সাঁওতাল, অভিরামকে বোঝাতে ব্যস্ত, ভৃত্য অভিরামের ধারণা কত ভুল।
ফের অন্য একদিন। সেদিন তিনি নিজের হোমওপ্যাথি ওষুধের বাক্স নিয়ে নাড়াচাড়া করছেন। রাক্সটাক্স ওষুধের শিশি খুঁজছেন। তাঁর গা সকাল থেকে কেমন ম্যাচম্যাচ করছে। বার তিনেক রাক্সটাক্স খাবেন। জানেন, শরীর চাঙ্গা হয়ে যাবে।
ব্যাপারটা অভিরামের নজরে পড়ে গেল। বাবু কী করছে? একটাই বাক্স ঘাঁটছে কেন বারবার। উৎসুক হল অভিরাম। জিজ্ঞেস করল, ওগুলো কিসের শিশি, বাবু?
-একটা ওষুধ খুঁজছি রে, অভিরাম। শরীরটা সকাল থেকে ঠিক নেই। ওই ওষুধটা বার কয়েক খেলে শরীর ঠিক হয়ে যাবে।
বাবুর কথা শুনে অভিরাম তিন হাত লাফিয়ে উঠল, –বাবু, তুই ডাগটার আছিস? নিজের ডাগটারী নিজে করিস?
ঈশ্বরচন্দ্র হাসলেন। প্রশ্ন করলেন, কেন, তোর বুঝি ওষুধ লাগবে?
-না রে বাবু। আমার নয়। তুই যদি ডাগটার আছিস, তবে গ্রামের সাঁওতালদের জন্যে একটা ডাগটারখানা খুলে বস। অসুখ হলে ওদের বেঘোরে প্রাণ যাবে না। ক্রোশ হেঁটে মধুপুর যেতে হবে না। তোর কাছে আসবে। ওষুধ নেবে। তুই পয়সা নিবি…
-পয়সা নোবো! …ওরে , না , না। আমার পয়সার দরকার নেই। এমনিতেই ওষুধ দিয়ে দোবো।
-ও বাবু। তোকে ওরা ভগবান মানবে।
-ভগবান নয়। আমি মানুষই থাকব। কালকেই তুই এখানে একটা নোটিশ লাগিয়ে দেয়ে। নোটিশ আমি লিখে দোবো, এখানে বিনা পয়সায় চিকিৎসা করা হয়।
নোটিশ লটকে গেল নন্দনকাননের গেটে। ঈশ্বরচন্দ্র বাড়িতেই খুলে ফেললেন এক দাতব্য চিকিৎসালয়। গরিবগুরবোর দল তা দেখল। অভিরাম ঢেঁড়া পেটেবার মতো জনে জনে বলে বেড়াতে থাকল কথাটা। কাজ হল। রোগী আসতে শুরু করল।
ঈশ্বরচন্দ্র রোজ সকাল ছটায় চিকিৎসালয় খোলেন। বসেন বেলা এগারোটা পর্যন্ত। তা সে রোগী আসুক আর না আসুক। তবে, সে অবস্থায় বেশিদিন থাকতে হল না।
গ্রামের মানুষ খোলামেলায় থাকে, তাতে তাদের রোগভোগ কিছুটা কম হয় বৈকি। কিন্তু তাই বলে, একেবারে নিরোগ তো নয়? জ্বরজারি, সর্দিকাশি, পেট খারাপ এসব সাধারণ অসুখ। বাচ্ছা বুড়ো, মেয়ে করে কে আর বাদ থাকছে সামান্য সামান্য এই রোগ থেকে। এতকাল তারা এসব রোগ নিজেদের মধ্যে ওঝার ঝাড়ফুঁক, আর গাছগাছালি পাতা, শিকড়বাকর এনে বেটে খেয়ে সারাত; তাতে কখনও সারত, আবার কখনও বা রোগী মারাও পড়ত। এই নিয়ে তাদের বাস। তবে এখন যখন গ্রামে ডাক্তারবাবু এসে গেছে, তাহলে, তার কাছেই কেন না যায়? তাও, ওষুধ দিচ্ছে বিনি পয়সায়!
দেখতে দেখতে দিন কয়েকের মধ্যে খরবটা সারা কর্মাটাঁড়ে ছড়িয়ে পড়ল। এখন আর ঈশ্বরচন্দ্রকে খালি বসে থাকতে হচ্ছে না। নতুন ডাক্তারবাবুর ওষুধ খেয়ে রোগ সারছেও। এই অবস্থায় শহর হলে, ডাক্তারের নাম-যশ- অর্থপ্রাপ্তি, এসবের কিছুরই অভাব হত না। তবে গ্রামে আর অর্থ কোথায়? তাই নাম আর যশ ছড়াতে দেরী হল না। তাতে ডাক্তার আবার সঙ্গে পথ্যও দিয়ে দিচ্ছে। সাগু, বার্লি, খই।নিজের সঞ্চয়ে তা না থাকলে এক আধ পয়সা নগদে দিয়ে দিচ্ছে, বাজারের দোকান থেকে কিনে নেবার জন্যে। এ তো, শুধু ডাক্তার নয়, সাক্ষাত ভগবান।
এখানেই শেষ নয় ঈশ্বরচন্দ্রের কাজ। কোনও রোগীর রোগ বাড়াবাড়ি হলে, সে নিজে যদি চিকিৎসালয়ে আসতে না পারে, তাহলে বাড়ি বয়ে গিয়ে তাকে দেখে ওষুধ দিয়ে আসছেন! অভিরাম মাথায় করে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে ওষুধ ভরা বাক্সখানা। আনন্দেই রয়েছেন ঈশ্বরচন্দ্র। একাজ করে মনে ভীষণ শান্তি পাচ্ছেন তিনি।
প্রথম হল চিকিৎসা। এরপরে শিক্ষা দেওয়া। নিরক্ষর সাঁওতালগুলো এতকাল শিক্ষার আলো থেকে দূরেই ছিল। কোথায় ইশকুল, কে পড়াবে, কী বই পড়বে, হাতে ধরে কে তাদের অ, আ, ক, খ শেখাবে? ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা তাই বাপ মায়ের সঙ্গে সারাদিন জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে শুকনো গাছপালার ডাল কুড়িয়ে দিনের শেষে মাথায় চাপিয়ে নিয়ে আসে। ঘরের জ্বালানি হয়। কিছু বা, পয়সাওয়ালা বাবুদের বাড়ি বিক্রি করে। এতেই দিন কেটে যায় তাদের। এদের আবার পড়াশোনা?
অভিরামকে ডেকে ঈশ্বরচন্দ্র একদিন বললেন, অভিরাম, বাড়ির হলঘরটা ভালো করে পরিষ্কার করতো।
হলঘরে কি এবার রোগী দেখবি, বাবু?
অভিরাম জানতে চায়। বাবুর সে অতি আজ্ঞাবহ হলেও, ঈশ্বরচন্দ্রের সব কাজের বিষয়ে তার খোঁজ নেওয়া দরকার। ঈশ্বরচন্দ্র অবশ্য তাতে কিছু মনে করেন না। তার সব প্রশ্নেরই উত্তর দিয়ে তাকে সন্তুষ্ট করেন। অভিরাম খুশি, অভিরামের বাবুরও কাজ নিমেষে হয়ে যায়।
তিনি উত্তর করলেন, ওখানে ছোটদের ইশকুল বসাবো, অভিরাম। ছোট ছেলেদের পড়তে বসাবো।
-তুই ইশকুল করবি! ছেলেরা বই পড়বে!
অভিরামের মনে কেমন ঘোর লাগে,-বাবু বই পড়াবে! পড়তে যে তারও মন চাইত। তবে তা আর হল কোথায়? গরীব বাপের ছেলে দু পয়সা কামিয়ে ঘরে আনবার জন্যে সেই ছোট থেকে কাজে লেগে এতটা বড় হল, বইয়ের মুখ দেখতেই পেল না। বাবু ছোটদের পড়ালে, সেও তাদের সাথে পড়বে। বাবুর কাছে লেখাপড়া শিখবে…
কথাটা অভিরাম মন খুলে বলেই ফেলল তার বাবুকে। ঈশ্বরচন্দ্র তো খুশিতে ডগমগ। ঘরের লোককে দিয়ে শুরু করবেন। সে-ই কিনা গিয়ে ছোটদের ধরে নিয়ে আসবে। বাচ্ছাদের বাবা মাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আনতে হবে তো তাদেরকে? অভিরাম ছাড়া সে কাজ করবে কে?
দেখতে দেখতে ইশকুলও চালু হয়ে গেল। অভিরামের কৃতিত্ব। প্রথম সুযোগেই সে দশ-বারোটা বাচ্ছাকে এনে হাজির করল। ইশকুলের সময়, বেলা বারোটা থেকে চারটে। ঈশ্বরচন্দ্র এগরোটায় তাঁর চিকিৎসার দপ্তর বন্ধ করে এক ঘণ্টার মধ্যে স্নান খাওয়া সেরে নিয়ে বারোটায় ইশকুলে এসে ছেলেদের নাম ডেকে উপস্থিত, প্রেজেন্ট, এয়েচি, করিয়ে ছেলেদের হাজিরা নিচ্ছেন। তারপর শুরু হচ্ছে প্রার্থনা,-বন্দে মাতরম। / সুজলাং সুফলাং/মলয়জশীতলাম/ শস্যশ্যামলানং / মাতরম।/ শুভ্র-জ্যোৎস্না-পুলোকিত- যামিনীম/ ফুল্লকুসমিত-দ্রুমদলশোভিনীম/ সুহাসিনিং/ সুমধুরভাশিনীম/সুখদাং-বরদাং/ মাতরম…
বঙ্কিমবাবুর এই গান ততদিনে চালু হয়ে গেছে সবার মুখে মুখে। ঈশ্বরচন্দ্র সেটাকেই ইশকুল প্রার্থনা বানিয়ে নিয়েছেন, তা সে বঙ্কিমবাবু যতই কিনা তাঁর লেখার বিরুদ্ধাচরণ করুন।
প্রথমে নিজে গাইছেন, পরে পড়ুয়ারা তাঁকে অনুসরণ করে কথাগুলো উচ্চারণ করছে। বাচ্ছার দলে যুবক অভিরামও সামিল। ঈশ্বরচন্দ্র তাকে কথা দিয়েছেন, লেখাপড়া শিখিয়ে দেবেন। মহাল্লোসে সে তাই ঘরকন্না, রান্নাবান্নার কাজ সময়ে সেরে নিয়ে ঈশকুলে চলে আসে।
ঈশ্বরচন্দ্র নিজের বর্ণপরিচয় দিয়ে পড়া শুরু করিয়েছেন ছেলেদের। দিনে দিনে তাদের পড়াশোনা এগিয়ে যাচ্ছে। সেই দেখাদেখি, গ্রামের ছোট ছোট মেয়েদেরকেও বাড়ির লোক পাঠিয়ে দিচ্ছে, যা বাবুর ইশকুলে যেয়ে পড়ালিখা শিখ। মেয়েরা পড়তে এসেছে!- ঈশ্বরচন্দ্রের খুশি যেন বাঁধ ভাঙা জল হয়ে উপচে পড়ছে। শহরে বা নিজের গ্রামে যে স্ত্রীশিক্ষা শুরু করতে তাঁকে কত কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল, সেখানে এই অজ গাঁয়ে মেয়েদের বাবা-মা তাদেরকে নিজে থেকে পড়তে পাঠাচ্ছে! যদিবা, সময়টা পনেরো বিশ বছর এগিয়ে এসেছে।
ঈশ্বরচন্দ্রের এবার ইচ্ছে, রাতের ইশকুল শুরু করবেন। তাতে রাখাল বালকদের পড়াবেন। দিনের কাজ ছেড়ে তারা তো পড়তে আসছে পারছে না, তাই কাজ শেষে তারা আসবে। পড়বে। তাদের ইশকুলের নাম দেবেন রাখালদের ইশকুল। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাঁর একলার পক্ষে টানা সম্ভব নয়। তাই একজন শিক্ষক নিযুক্ত করবেন। মাস মাইনে দশ টাকা। এখানেও অভিরাম হল তাঁর উদ্ধারকর্তা। সেই বাঙালিটোলা থেকে এক বাঙালি বাবুকে ধরে পাকড়ে নিয়ে এল। পড়ালেখা জানা মানুষ। নাম বললেন, বিভূতি ভট্টাচার্য। ঈশ্বরচন্দ্র তাঁকে কাজে বহালি করে নিলেন।
চলবে…