উপন্যাস।। কমরেড নয়ন।। সৌপ্তিক চক্রবর্তী
প্রথম প্রথম তার মা ও জ্যাঠা দুজনের ওপরেই খুব রাগ হয়েছিল। পরে বুঝেছিল। তার বাবা তো চলে গেছে সেই কবে। জেঠিমাও নেই। তো জ্যাঠা-মায়ের সম্পর্কটাকে তো আর অবৈধ বা অনৈতিক বলা চলে না। তার ওপর তারা দুজনেই তো তাদের তিন ভাই-বোনকে পালছে। নিজেদের শরীরের খিদে যদি পরস্পর মিটিয়েই থাকে তাতে দোষের কি! মাকে তো কখনওই দুঃখী বা অত্যাচারিতা মনে হয় না বরং সবসময় একটা সত্যি সত্যি খুশি লুকিয়ে থাকে তার হাসির মধ্যে। অতএব তার মায়ের ইচ্ছাতেই যখন এই সহবাস তখন আদর্শবাদী নয়ন বেশ কিছুদিন দোলাচলে থেকে শেষটায় তা মেনে নেয়। এরপর থেকে নয়ন কখনও আগে বাড়ি ফিরে মাকে নিচের ঘরে না দেখতে পেলে সিঁড়ি ভেঙে আর দোতলায় ওঠেনি।
সেদিনের ওই মিনিটখানেক ধরে দেখা লাইভ সেক্স আজও তার মাস্টারবেশনের ইন্ধন হয়ে আছে। শুরুটা হয়ে যায় সেটা মনে করেই। তারপর ডালপালা মেলে নয়নের কল্পনা।
নয়নের অনেকটা বড় বয়স পর্যন্ত মাঝে মাঝে রাতে নয়ন ঘুমিয়ে পড়েছে ভেবে তার মা ঘর থেকে বেরিয়ে দোতলায় চলে যেত। আধঘন্টা কি চল্লিশ মিনিট বাদে ফিরে আসত। নয়ন ঘুমের ভান করে পরে থাকত পাছে মায়ের কোনো অস্বস্তি হয়।
মা মারা যাওয়ার পর তার মৃতদেহ দেখে জ্যাঠার ওই বাজে পোড়া গাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকাটা আজও নয়নের চোখে ভাসে। তার পরপরই আরও অসুস্থ হয়ে বিছানা নিল সে। শেষ বয়েসেও আবার সঙ্গীনিবিহীন হয়ে পড়ার আঘাতটা আর নিতে পারেনি। বাবা-ভাই-বউ-মা-ভাইয়ের বউ একে একে সকলকেই তো বিদায় দিল সে।
পাঁচ
দিনকয়েক বাদে সকালবেলা নয়ন বোর্ডপিন দিয়ে গণশক্তিটা তাদের বোর্ডে সাঁটছে। ওদিকে কল্লোলের পান-বিড়ির দোকানের সামনে থেকে বাবলু-গিটু আর বাপি তাকে টিটকিরি মারছে। ‘ওরে গান্ডু, আর ওই জালি কাগজ লাগিয়ে কি হবে? কেউ তো পড়ে না।’ বাপি বলল। বাবলু-গিটু খিলখিলিয়ে উঠল। হাসতে হাসতে গিটু বললঃ নিজেই লাগায়, নিজেই পড়ে, বালটা।
নয়ন মুখ লাগায় না। তার গণশক্তি সাঁটা হয়ে গেলে হনহন করে পার্টি অফিসের দিকে পা চালায়। এরা সব তৃণমূল করে। তার থেকে বয়সে বেশ ছোট। নয়ন মনে মনে ভাবে কী অসভ্য! কোনো সম্মান দিতে জানে না। সকাল সকাল মুখ খিস্তি করছে। আজ অব্ধি কেউ বলতে পারবে যে নয়ন কখনও কাউকে খিস্তি করেছে। প্রচন্ড রেগে গেলেও সে নিজেকে সামলে নিয়েছে বরাবর। খুব বেশি হলে ‘শাল্লা” বলে কচ্চিৎ কদাচিৎ হয়তো চিৎকার করে উঠেছে। ব্যাস, ওই পর্যন্তই।
নয়ন বুঝতে পারল মাথাটা ব্যাথা করছে আবার। এটা যে কি হয় তার! বছর দেড়েক ধরে মাঝে মাঝেই তার মাথাটা কেমন ব্যাথা করতে শুরু করে। আগেও হয়েছে। দু-এক বার। অল্প সল্প। কিন্তু গত এক বছরে যেন উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে ব্যাথাটা। আর ফ্রিকুয়েন্সিও বেড়েছে। আগে হয়তো দুমাসে একবার হত। কিংবা হয়তো মাসে একবার। তবে ইদানীং প্রায় প্রতি হপ্তাতেই এই ব্যাথাটা হচ্ছে। সাথে মনে হচ্ছে চোখেও সমস্যা হচ্ছে কিছু। মাঝে মধ্যে দেখতে আসুবিধা হচ্ছে। গত এক-দুমাসে অসহ্য যন্ত্রণার পাশাপাশি বমিও হয়েছে। সে কাউকে কিছু জানায়নি। মিহিরদা আর বিশুই যা জেনেছে। তবে বমি-টমি বা চোখের সমস্যার কথা কিছু জানে না। বার দুয়েক পার্টি অফিসেই যন্ত্রণা হওয়ায় তাদের জানাতেই হয়েছে। কারণ সে বাড়ি ফিরে গিয়েছিল। আজও মনে হচ্ছে তাই হবে।
রঘুনাথ মেডিক্যাল স্টোর্স থেকে একপাতা স্যারিডন কিনে নয়ন পার্টি অফিসে ঢুকল। ততক্ষণে বেশ ব্যাথা শুরু হয়েছে তার। সজল আর মিহিরদা বসে ছিল। আলাদা কোনো কথায় না ঢুকে ব্যাথাটা ভুলে থাকা যাবে ভেবে ও চেয়ারে বসে গণশক্তির পাতা উল্টাতে থাকল।
না, বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারল না নয়ন। মিহিরদা-সজলকে জানাতেই হল যে আবার তার মাথা ব্যাথা করছে সে বাড়ি চলে যাবে। মিহির নয়নকে খুবই স্নেহ করে। নয়ন যে কলেজ থেকে বিএ পাশ করেছিল সেই সরোজ গাঙ্গুলী কলেজের লাইব্রেরিয়ান ছিল মিহির। বছর তিনেক হল রিটায়ার করেছে। সেই থেকেই নয়নের কাছে প্রিয় ‘মিহিরদা’। শুনেই মিহিরদা তাকে বলে উঠলঃ তুই এখুনি বাড়ি চলে যা। শরীর ভাল না লাগলে সন্ধেবেলা তোকে আর আসতে হবে না। আমি চাবি নিয়ে যাব। রাতে পার্টি অফিস বন্ধ করে তোর বাড়ি ঘুরে আসব না হয়। চাবিটাও দিয়ে আসব যদি দেখি ঠিক আছিস। আর শোন, এটা তো বারবারই হচ্ছে, তুই ডাক্তার দেখা।
সজলও সায় দিয়ে বললঃ হ্যঁ, নয়নদা একবার দেখিয়ে নাও।
‘হুম দেখাব’ বলে নয়ন উঠে পড়ল। যন্ত্রণায় তার মাথাটা তখন ছিঁড়ে যাচ্ছিল।
কোনোমতে বাড়ি ফিরে স্নান করে নয়ন ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ল। দুপুরে আর কিছু খেল না। খাটে শুয়ে চোখদুটো বন্ধ করে পড়ে থাকল। যন্ত্রণায় ঘুম এল না।
কেমন একটা আচ্ছন্ন অবস্থায় শুয়ে শুয়ে নয়ন বুঝতে পারছিল বেলা গড়িয়ে বিকেল নামছে। বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধে। একটু আগে গেট খোলার আওয়াজ হল। তুলি ফিরল। রান্নাঘরে বাসন পড়ার শব্ধ। নুপুরবৌদি উঠে পড়েছে।
ভেজানো দরজয় নক করার শব্দ হল। কে? প্রায় চিঁচিঁ করে জিজ্ঞেস করল নয়ন।
‘আমি, আসব?’ গলা শুনে নয়ন বুঝল নুপুরবৌদি।
‘এস’ এতটা যন্ত্রণা হচ্ছে যে এই একটা দুটো শব্দ উচ্চারণ করতেও নয়েনের কষ্ট হচ্ছে।
একটা জলের বোতল নিয়ে নুপুরবৌদি ঘরে এসে ঢুকল। খাটের পাশে টুলের ওপর জলের বোতলটা রাখতে রাখাতে জিজ্ঞেস করলঃ কেমন আছ এখন? চা খাবে?
নয়ন তখন যন্ত্রণায় মাথা তুলতে পারছিল না। কোনোমতে বললঃ না।
‘তুমি কালকেই ডাক্তার দেখাবে বলে দিলাম।’ নুপুরবৌদি আদেশের মতো করে বলল। তারপর বললঃ দাঁড়াও তোমার দাদা ফিরুক। ওকে বলছি।
‘আচ্ছা বেশ’ বলে নয়ন আবার চোখ বন্ধ করে নিল। নুপুরবৌদি ঘরের দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে চলে গেল।
আর একটু পর আবার গেট খোলার আওয়াজে বুঝল জ্যাঠার আয়া চলে গেল।
রাত সাড়ে আটটা নাগাদ প্রায় একইসঙ্গে মিহিরদা আর তার টিংকু তাকে দেখতে এল। ব্যাথাটা তখন কিছুটা কম হলেও চোখের সমস্যা হচ্ছিল আর একটা বমি বমি ভাব। স্নানের সময়ও একবার বমি হয়েছিল। নয়ন শুয়েই ছিল।
টিংকুও বলল ডাক্তার দেখাতে এমনকি টাকাপয়সা কিছু লাগলে যেন জানায় তাও বলে গেল। একটা জরুরি ফোন আসায় টিংকু তার ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
মিহিরদা চেয়ারটা তার খাটের পাশে টেনে এনে বসেছে। ‘চিন্তা করিস না, তবে ফেলেও রাখিস না ভাই।’ গম্ভীরভাবে সে বলল।
-না, না, আমি ডাক্তার দেখিয়ে নেব। ক্লান্ত ধরা গলায় নয়ন জবাব দিল।
-বেশ, আর কথা বলিস না, চুপচাপ শুয়ে থাক, আমি চাবিটা আমার কাছেই রাখছি। আপাতত পার্টি অফিস খোলা-বন্ধ নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। তুই শরীরের খেয়াল রাখ। বলে পকেট থেকে ওয়ালেট বার করে তার থেকে পাঁচশো টাকার একটা নোট বার করল মিহিরদা।
নয়ন কিছু বলার আগেই ‘কোনো কথা বলবি না, নয়ন’ প্রায় ধমকের সুরে বলে নোটটা ওর মাথার বালিশের নিচে রেখে মিহিরদা চলে গেল।
ঘরে শুয়ে শুয়েই সে গন্ধ পেল মুরগির মাংস হচ্ছে বাড়িতে। টিংকু অফিস ফেরত কোনো কোনো দিন নিয়ে আসে। মাছের ব্যাপারটা এখন এ সংসারে প্রায় বিলাসিতা। তুলি তো আবার মাছ খাইই না। ওই মাসে দু-চারবার পুঁটি, তেলাপিয়া কি মৌরলা। অন্যান্য দিন ডাল-ভাজা-তরকারি কিংবা ডিমের ঝোল। জ্যাঠার জন্য দুপুরে চালে-ডালে আর রাতে দুধ-খই। ব্যাস, এই হল আজকাল তাদের বাড়ির হেঁশেল।
রাতেও নয়ন কিছু খেল না। আর একবার বমিও হল তার। নুপুরবৌদি এক গ্লাশ দুধ তার খাটের পাশে টুলের ওপর ঢাকা দিয়ে রেখে গেল। রাত তখন প্রায় দশটা। নয়ন প্রায় অচেতন। জোর করে ঘুমের চেষ্টা করে যাচ্ছে।
ছয়
এক হপ্তা পর আজ আবার মেঘনা আগে এল। নয়ন তখন গড়াচ্ছিল। গত মঙ্গলবার ও যখন রিহার্সালে এসেছিল তখন পাঁচটা বেজে গিয়েছিল। ওরা রিহার্সাল শুরু করবে করবে। নয়ন কিছুটা সুস্থ বোধ করায় রিহার্সাল ঘরে গিয়েছিল। ওখান থেকে পার্টি অফিস যাবে ঠিক করে রেখেছিল। মেঘনা অন্যান্য দিনের মতোই সবাইকে হাই জানিয়ে রিহার্সালে লেগে পড়েছিল। নয়ন একটু গুটিয়ে ছিল। মেঘনার এই স্বাভাবিক ব্যবহারে সেও হাঁফ ছেড়ে আস্তে আস্তে সহজ হয়ে গিয়েছিল।
একটা চোরা দ্বন্দ্ব কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল নয়নকে। তার এতদিনের এই যে নিষ্কলঙ্ক কমরেড জীবন, তাতে কি দাগ লাগল কোনো? কিন্তু না, সে তো ইনসিস্ট করেনি, যা করার তা তো মেঘনাই করেছে এবং স্বতস্ফুর্তভাবেই। তহলে? আর সেক্স করা তো কোনো পাপ নয়! নয়নের মনের ভেতর এমনই নানান কথা ঘুরপাক খাচ্ছিল ক্রমাগত।
গত দুদিনে মাথা ব্যাথাটা আর হয়নি। আজও দিব্যি আছে। পার্টি অফিসেও গেছিল। তবে ঘুমটা বেশি হচ্ছে একটু। ঘুমঘুম একটা ভাবও সারাদিন। আর চোখের সমস্যাটা।
সোমবারই সন্ধে নাগাদ একটু সুস্থ লাগায় বেরিয়ে পাড়ার গগনডাক্তারকে দেখিয়ে এসেছিল। তিনশো টাকা ফী নিয়ে দুটো ওষুধ আর সিটি স্ক্যান-এমআরআই এরকম কয়েকটা টেস্ট লিখে দিল। টেস্টগুলো নাকি অবশ্যই করে নিতে হবে। গগনডক্তারের ভাষায় ‘অ্যাজ আর্লি অ্যাজ পসিবল’। তারপর রিপোর্ট নিয়ে আবার চেক-আপ।
নয়ন টেস্টগুলোর কথা পরে ভাববে। অনেকগুলো টাকার ব্যাপার। আপাতত ওষুধ শুরু করেছে। মনে তো হচ্ছে কাজও হচ্ছে। দেখা যাক কদিন। তবে ওষুধের যা দাম! বলতে নেই নয়ন খুব বেশি ভোগেনি আজ অব্ধি। ওই সর্দি-কাশি-জ্বরজারির ওপর দিয়েই যা গেছে। বড় কিছু হলে ট্রিটমেন্ট চালাতে পারত না হয়তো। অন্তত সেদিন ডাক্তারের ফী আর ওষুধের দাম দেওয়ার সময় তার তাইই মনে হয়েছিল।
যাইহোক, গেট খোলার শব্দে নয়ন খাটের ওপর উঠে পা ঝুলিয়ে বসেছিল। মেঘনা নক করে তার ঘরে চলে এল। দরজাটা ভেজানো ছিল খালি। ঘরে ঢুকে মেঘনা প্রথমেই দরজাটা বন্ধ করে ছিটকিনি এঁটে দিল। তারপর ভ্যানিটি ব্যাগটা টেবিলের ওপর রেখে নয়নের দিকে ঘুরে বললঃ একটা গান চালিয়ে দিই কেমন?
‘বেশ’ বলে উঠল নয়ন।
‘কি গান শুনবে বল?’ হাসি হাসি মুখে প্রশ্নটা ছুড়ে দিল মেঘনা।
প্রশ্নটায় একটু থতমত খেয়ে গেল নয়ন। গান মানে তো সেই হয় গণসঙ্গীত নয় কিশোরকুমার। গণসঙ্গীতটা বলা বোধহয় উচিত হবে না। একটু ‘উঁ’ করে নয়ন বললঃ কিশোরকুমারের কোনো গান। মানে যদি তোমারও ভাল লাগে আর কি।
মেঘনা অল্প হেসে মোবাইলে গান চালিয়ে দিল। চলতে চলতে মেরে ইয়ে গীত ইয়াদ রখ না…
মেঘনা নয়নের কাছে এসে দাঁড়াল। ওর গালে-মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকল।
ওর কাঁধদুটো দুহাতে ধরে চোখে চোখ রেখে নয়ন জিজ্ঞেস করলঃ কাজটা কি ঠিক হচ্ছে, মেঘনা?
‘কী ভুলটা হচ্ছে? বউকে লুকিয়ে করছ? আমায় জোর করে করছ? কোনোটাই নয়, তাই না? আর আমি কোনো কমিটমেন্টে যাই না। বেশি বয়সি পুরুষ পছন্দ করি। তোমাকে ভাল লেগেছে। তোমার এই স্লিম চেহারাটা আমার দারুন লাগে। ব্যাস, সেক্সের জন্য আর কী লাগে? তোমাদের কমিউনিজমে কি সেক্স করা বারণ নাকি! অদ্ভুত!’ মেঘানা সোজা নয়নের চোখে চোখ রেখে টানা বলে গেল। চাপা গলায়।
উত্তরে নয়ন কিছুই বলতে পারল না।
এটা সত্যিই যে মেঘনা কিছু ভুল বলেনি। যৌথ সম্মতিতে যৌন মিলনে কোনো ভুল বা অপরাধ নেই। আসলে মাস্টারবেশন ছাড়া অন্য কোনোরকম যৌনঅভিজ্ঞতা যে তার হতে পারে নয়ন এটাই কোনোদিন ভেবে উঠতে পারেনি। আজ অযাচিত ভাবেই এই বন্ধনহীন যৌনতা এসেছে তার জীবনে! যা শুধুই আনন্দের।
যদিও কমিউনিজম সে তেমন পড়েনি তবে তাতে যৌনতায় নিষেধাজ্ঞা থাকবে তা হতেই পারে না। কমরেড ও সন্ন্যাসী তো আর এক নয়! অতএব…
চুমুতে নয়নকে আবিষ্ট করে মেঘনা তাকে বিছানায় ফেলল। ততক্ষণে নয়নের পাঞ্জাবিটা সে খুলে দিয়েছে। চিৎ হয়ে নয়ন খাটে শুয়ে শুয়ে দেখল ওর সামনে মেঝেতে দাঁড়িয়েে এক এক সবকিছু খুলে পুরো উলঙ্গ হয়ে গেল মেঘনা। সেই তার মায়ের খোলা শরীরের পর এই প্রথম অন্য কোনো শরীর উলঙ্গ দেখল নয়ন। পায়জামাটা খুলে দিল মেঘনা।
নয়নের ওপরে উঠে করছে মেঘনা। পুরো রাশটাই তার হাতে। দুহাতে ধরে আছে নয়নের দুহাত। দুজনেই শরীর ভরে নিচ্ছে অপূর্ব এই সোহাগ।
তবে খুব বেশিক্ষণ নয়। বয়স বেশি হলেও সে তো নেহাতই আনাড়ি। একটু পরেই সে তৃপ্তিতে বুজে আসা গলায় বলে উঠলঃ এবার আমার বেরিয়ে যাবে, মেঘনা।
মেঘনা আরও দ্রুত ওঠানামা করতে করতে হিসহিসে গলায় জিজ্ঞেস করলঃ কি, শ্রেনীহীন সমাজে সেক্স থাকবে না, বল?
শীৎকার করতে করতে অস্ফুটে নয়ন বললঃ থাকবে, থাকবে।
তারপরই নয়ন ‘আর ধরে রাখতে পারছি না, বার করে নাও, প্লিজ’ বলতে না বলতেই মেঘনা বার করে দিল।
আহ! আজকের এই ক্ষরণ আগের দিনের চেয়ে আরও বেশি তৃপ্তির। নয়নের তেমনই মনে হল।
কিছুক্ষণ নয়নের বুকের ওপর শুয়ে থাকল মেঘনা। নয়ন দুহাতে জড়িয়ে থাকল তাকে। একটা প্রগাঢ় চুমু দিয়ে মেঘনা উঠে জামাকাপড় পরে ‘পরে আসব, আবার’ বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। নয়ন পাশের ঘরের তালা খোলার শব্দ শুনতে শুনতে পায়জামাটা পরে ফেলল। প্রথমেই বাথরুমে যেতে হবে তাকে।
খানিকক্ষণ রিহার্সাল দেখে নুপুরবৌদি দরজা নক করে চায়ের জানান দিতে চা খেয়ে নয়ন বেরিয়ে গেল পার্টি অফিস খুলতে।
সাত
দুদিন আবার অসহ্য যন্ত্রণায় শয্যাশায়ী থেকে আজ একটু সুস্থ বোধ করায় নয়ন পার্টি অফিসে ঢুকল। তখন বেলা প্রায় দশটা। মিহিরদা এসে পড়েছে। এখন চাবিটা মিহিরদাই রাখছে। নয়ন বলেছিল যে ওকেই দিয়ে রাখতে কিন্তু মিহিরদা রাজি হয়নি। হবেটাই বা কি করে! আজ মাসখানেক ধরে ছাড়া ছাড়া ভাবে কখনও টানা দুদিন কখনও টানা তিনদিন মাথার যন্ত্রণায় কাবু হয় নয়ন পড়ে থাকছে বাড়িতে।
মিহিরদা ওকে ঢুকতে দেখেই জিজ্ঞেস করলঃ কি রে তোর শরীর কেমন?
-আজ চাঙ্গা আছি গো, দাও, গণশক্তিগুলো দিয়ে আসি বাড়ি বাড়ি। আর বোর্ডেও মেরে দিই। হাসি মুখে নয়ন জবাব দিল।
-না থাক, তুই বোস। বিশু বোর্ডে মারতে গেছে। এখুনি ফিরেই ও কপিগুলো নিয়ে যাবে। মিহিরদা বলল।
-আরে, না, না দাও না আমি দিয়ে আসছি। তারপর এসে চা খাব। বেকার বাড়ি বসে আছি এতদিন। বলে নয়ন কপিগুলো নিয়ে মিহিরদা কিছু বলার আগেই হন্তদন্ত হয়ে পার্টি অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ল।
এক্স কাউন্সিলর রথীন মিত্রর বাড়িটাই খালি বাকি। বাকি সব বাড়িতে দেওয়া হয়ে গেছে। ওর বাড়িটা আসলে এই পাড়ায় নয়। পাশের পাড়ায়। একই ওয়ার্ড। আজ রথীন মিত্র পার্টি অফিসে আসবে না তাই বাড়িতে দেওয়া। না হলে পার্টি অফিস থেকেই নিয়ে নেয়।
মস্ত তিনতলা বাড়ির নিচের গেটে বেল টিপে নয়ন কিছক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। রথীন মিত্রর ছেলে এসে ‘সব ভাল তো?’ জিজ্ঞেস করে গণশক্তিটা নিয়ে নিল। নয়ন ‘হ্যাঁ, চলছে আর কি।’ বলতে বলতে সে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। আসলে এতটা সময় নিল নয়ন উত্তরটা দিতে। বুল্টু, মানে রথীন মিত্রর ছেলেকে দোষ দেওয়া যায় না। খানিক অপেক্ষা করেছিল সে উত্তরের। তারপর অগত্যা।
ইলাস্ট্রেশন-গুগল
চলবে…