ক‌বিতা।। আবদুল ল‌তিফ

মায়াবী সেই প্রজাপতিটা

আজ ভোর থেকে, আমি দিশাহারা।

রঙীন একটা প্রজাপতি আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে,

ওর চোখ ধাঁধানো রঙবেরঙের পাখা,

হাওয়ায় ভাসানো অবয়ব,

সবকিছুই কী অপরূপ!

কিছুতেই সে ধরা দেয় না।

ওকে ধরবো বলে একটা সাদা কাগজের ফাঁদ পেতে বসে আছি,

ওর সব রঙ শুঁষে নিয়ে ছড়িয়ে দেব আমার ফাঁদে।

শৈল্পিক চিত্রিত আলপনায় ভরে উঠবে সাদা উঠোন,

সেই আশাতেই সময় যায় গড়িয়ে।

বড় নিঠুর প্রজাপতি, কিছুতেই দেয় না ধরা।

বাড়ছে বেলা, অন্তবিহীন এই লুকোচুরির আর শেষ হয় না।

একটা ধুধু প্রান্তরে ছুটে চলি ওকে অনুসরণ করে,

মাঠজুড়ে সবুজ ঘাসের গালিচা,

সর্ষেক্ষেতের হলুদ আভা ছড়িয়ে আছে,

সেই হলুদ ফুলেদের মাঝখান দিয়ে চলতে চলতে

সবুজ পাতায় ঘেরা একটা বিরাট গাছের ছায়ায় এসে পড়ি

এবং তারপর গলদঘর্ম হয়ে

শ্রান্তদেহে যেই গাছের শেষ ডালটা ধরে ফেলেছি,

অমনি সে উড়লো আকাশের নীলিমায়, মেঘেদের মাঝখানে।

আমিও গা ভাসাই খোলা আকাশের সীমানা ছাড়িয়ে

অনেক অনেক দূরে,

আর তখনি খেলা থামিয়ে প্রজাপতিটা বললে,

“আজ নয়, অন্য একদিন, অন্য কোন সময়”

আমার সাদা খাতার পাতা রয়ে যায় অমলিন

ধূধূ প্রান্তরটির মতো,

একেবারে আনকোরা।

সে আ‌সে ধী‌রে

বহু‌দিন আ‌মি ক‌বিতা লি‌খিনা, ‌

লিখতামও না কোন‌দিন

শুধু সাদা কাগ‌জের ওপর

স্ব‌রে অ স্ব‌রে আ

তার পা‌শে কিছু আঁ‌কিবু‌কি,

এ‌লো‌মে‌লো কাটাকু‌টি

যার কোনই অর্থ নেই, অর্থ হয় না।

এই অর্থহীন প্রলা‌পের পথ বে‌য়ে

ক‌বিতারা ধরা দেয়‌নি কখ‌নো।

তবু কদা‌চিৎ তারা জীবন্ত হয়ে

চলা‌ফেরা ক‌রে

আমারই চো‌খের ওপর দি‌য়ে ‌

দেখ‌তে পাই, ছুঁ‌তে পা‌রি‌নে।

ভীরু প্রেম যেমন স্পর্শমাত্র ঝ‌রে প‌ড়ে যায়, ‌

তেম‌নি আমার লজ্জারাঙা ক‌বিতারা

মুহূ‌র্তেই ঝ‌রে প‌ড়ে,

আমারই চো‌খের সাম‌নে।

আমার এই হতাশায় ভরা চোখদু‌টি‌তে

তা‌দের দেখ‌তে পাই,

চলা‌ফেরার শব্দ শু‌নি অহ‌র্নিশ।

দু‌খের দি‌নের অশ্রুধারার মা‌ঝে,

রূপা‌লি জোছনারা‌তে,

প্রভাত‌বেলার অরুন‌কির‌ণে, ‌

গোধু‌লির স্বপ্নমায়ায়,

আমার সমস্ত অনুভূ‌তিজু‌ড়ে

“‌সে আ‌সে ধী‌রে, যায় লা‌জে ফি‌রে”।

 

শেয়ার করতে:

You cannot copy content of this page