উপন্যাস।। কমরেড নয়ন।। সৌপ্তিক চক্রবর্তী
মস্ত তিনতলা বাড়ির নিচের গেটে বেল টিপে নয়ন কিছক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। রথীন মিত্রর ছেলে এসে ‘সব ভাল তো?’ জিজ্ঞেস করে গণশক্তিটা নিয়ে নিল। নয়ন ‘হ্যাঁ, চলছে আর কি।’ বলতে বলতে সে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। আসলে এতটা সময় নিল নয়ন উত্তরটা দিতে। বুল্টু, মানে রথীন মিত্রর ছেলেকে দোষ দেওয়া যায় না। খানিক অপেক্ষা করেছিল সে উত্তরের। তারপর অগত্যা।
এখন যেখানে রথীন মিত্রর বাড়ি সেখানে আগে থাকত জগারা। জগা, জগার বাবা-মা আর বোন। জগা নয়নের বয়সই ছিল। সে প্রায় পঁচিশ বছর আগের কথা। দুপাশে-সামনে খোলা জমির মাঝে একচালা একটা ঘর ছিল জগাদের। এই পাড়ায় তখন ওই একটাই টালির চালের ঘর ছিল। বাকিসব বাড়ি পাকা। জগাদের বাড়িতে আবার ইলেক্ট্রিসিটিও ছিল না। রথীন মিত্র তখন ছেলে-বউ নিয়ে ভাড়া থাকত এপাড়ায়। তারপর একদিন জগারা উঠে গেল। অন্য জায়গায় ঘর করে নিল। কোথায় তা নয়ন জানে না বা এখন মনে পড়ে না। জগারা জমিটা রথীন মিত্রকে বেচে দিয়ে গিয়েছিল। বুক হাত দিয়ে বললে নয়নকে এইটা বলতেই হবে যে জগারা ন্যায্য দাম পায়নি। কিছুদিন তারা টালবাহানা করার পর একদিন তাদের জোর করেই উঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
পার্টি অফিসের দিকে হাঁটতে হাঁটতে নয়ন ভাবতে থাকল আজ পার্টির এই অবস্থার জন্য পার্টিই কি দায়ী! কিছু কিছু ভুলচুক তো হয়েছেই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার ইমেজ খারাপ হয়েছে কোনো কোনো ঘটনায়। তবে নির্লজ্জের মতো এরকম দলবদল ও আরও নির্লজ্জের মতো ঘর ওয়াপসি তাদের পার্টিতে কখনওই দেখা যায়নি। ইদানীং এইসব ভাবতে শুরু করলেই তার মাথাটা প্রথমে দপদপ করতে শুরু করে। তারপর আবার মাথা ব্যাথা শুরু হয়।
পার্টি অফিসে বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারল না। মাথাট যন্ত্রণাটা বাড়ছে। অনেক্ষণ চেপে রেখেও শেষমেষ আর পারল না। বমি করে ফেলল নয়ন। চোখ ঝাপ্সা হয়ে এল। অজ্ঞান হয়ে পড়েই যাচ্ছিল চেয়ার থেকে। নেহাত মিহিরদা ধরে নিল!
আট
নয়ন হাতের বইটা বন্ধ করে মাথার পাশে রেখে দিল। আধশোয়া হয়ে এতক্ষণ ধরে সেটাই পড়ছিল। কিছুদিন হল বইটা পেয়েছে। মিহিরদাই দিয়েছে। পড়া হচ্ছিল না। আজ অনেকটা পড়ে ফেলছে। জনৈক তাত্বিক কমরেডের লেখা। মহান বলশেভিক বিপ্লবের একশো বছর, ফিরে দেখা, মূল্যায়ন, সাম্প্রতিক সময়ে তার প্রাসঙ্গিকতা ইত্যাদি নিয়ে প্রাঞ্জল ভাষায় চমৎকার লেখা। এখানে বলে রাখা দরকার নয়ন শুধুমাত্র তাদের পার্টির পাব্লিকেশনের বই-পত্রই পড়ে। প্রতি বছর পুজোর সময় প্যান্ডেলের পাশে তদের স্টল হয়। অন্য কয়েকজন কমরেডের সাথে নয়নও স্টল সামলায়। সেখান থেকে কিছু বই কেনে। আর কিছু বই তাকে মিহিরদা উপহার দেয়।
মাথার যন্ত্রণাটা এখন অনেক কম। সেদিন পার্টি অফিস থেকে মিহিরদা রিকশা করে তাকে বাড়ি দিয়ে গিয়েছিল। গতকাল তাকে রিহার্সাল রুমে না দেখে দরজা নক করে সুপ্রিয়রা এসে দেখে গেছে। মেঘনাও ছিল। তখন সে আচ্ছন্নের মতো পড়ে ছিল। খুব যন্ত্রণা হচ্ছিল তখন। ওরা নক করায় আর সুপ্রিয়র ‘নয়নদা, আছ নাকি?’ শুনে কোনোভাবে ‘আছি, আয়’ বলেছিল নয়ন।
-কি হয়েছে তোমার? শরীর খারাপ নাকি? সুপ্রিয়র প্রশ্নটা শুনে অতি কষ্টে ‘মাথা যন্ত্রণা’ বলেছিল নয়ন।
-ঠিক আছে তুমি ঘুমাও আমরা পরে আসব’ বলে ওরা ঘর থেকে চলে গিয়েছিল।
উপন্যাস।। কমরেড নয়ন।। সৌপ্তিক চক্রবর্তী
রাতে পার্টি অফিস বন্ধ করে মিহিরদা সজলকে নিয়ে তাকে দেখতে এসেছিল। তখন ঘরে টিংকুও ছিল। দুদিনে নয়নের অবস্থার কোনো উন্নতি না দেখে মিহিরদা নাকি গগনডাক্তারকে নিয়ে আসতে তার চেম্বারে গিয়েছিল। কিন্তু সে আসেনি। তার কথায় ‘দেখ, আমি গিয়ে আর নতুন করে কী দেখব? যতক্ষণ না এমআরআই রিপোর্ট দেখছি আসল ট্রিটমেন্ট শুরু করতে পারব না। আমি একটা ওষুধ চেঞ্জ করে দিচ্ছি। এটা একটু স্ট্রং তাতে ব্যাথা কিছুটা কমবে। তোমরা এমআরআইটা করাও ইমিডিয়েটলি।’ মিহিরদা নিজেই সেই ওষুধ কিনে নিয়ে এসেছিল। খুব ভাল মনে নেই তবে মোটামুটি এইসবই বলাবলি করছিল তারা। রাতে নুপুরবৌদি একটু চিকেন স্ট্যু খাইয়ে দিয়েছিল।
নতুন ওষুধে কিছুটা কাজ দিয়েছে। রবি-সোম-মঙ্গল শুয়ে থেকে আজ সে উঠে বসেছে। বইও পড়ল। দুপুরে ভাত খেয়েছে। তৃপ্তি করে খেয়েছে। নিজেই খেয়েছে। রবি-সোম তো খায়নি বলাই ভাল। গতকাল কোনোমতে। তাও রোজই খাইয়ে দিতে হয়েছিল। ভাবল আজ একবার পার্টি অফিসেও যাবে। এখন তো সে মোটামুটি সুস্থই আছে।
এমআরআই করানো হবে আর দু-চর দিনেই। মানে এটা ডিসাইড করা হয়েই গেছে। সিদ্ধান্তটা অবশ্য নিয়েছে মিহিরদা আর টিংকু মিলে। নয়নও আপত্তি করেনি। কষ্টটাও তো আর সহ্য করা যাচ্ছে না। দু-চারদিনে পার্টি থেকে মাসোহারাটাও পেয়ে যাবে। এমআরআই-এর পর যে কি হবে কে জানে! নয়ন আর ভাবতে পারে না।
সন্ধেবেলা চা খেতে খেতে তার মনে পড়ল চিত্তদার কথা। বড়রাস্তার ওপারে যতীন কলোনীতে থাকত। হার্ডকোর কমরেড ছিল। একটা প্রাইমারি স্কুলে পড়াত। মাঝে মাঝে তাদের পার্টি অফিসেও আসত। এছাড়া পার্টির সভা কিংবা অন্য কোনো প্রোগ্রামে তো দেখা হতই। কি দারুন লোক ছিল! কোনো দিন পদের লোভ করেনি। কেউ বলতে পারবে না যে কোনো জুলুমবাজি-ক্ষমতা প্রদর্শন চিত্তদা কখনও করেছে। সবে থেকে বড় গুণ ছিল যে চিত্তদা দারুন সুন্দর বক্তৃতা দিতে পারত। কমিউনিষ্ট আন্দোলন নিয়ে অনেক পড়াশুনা করেছিল। তার মুখ থেকেই নয়ন ও অন্যান্য কমরেডরা ইউরোপ-আমেরিকার নানান দেশের গণসংগ্রামের গল্প শুনে শিক্ষিত হয়েছে। নয়নের এখনও মনে পড়ে কিউবা-চিলি-গুয়াতেমালার সেইসব সংগ্রামী মানুষের কথা শুনতে শুনতে তার চোখ চকচক করে উঠত। তাদের সেই আমরণ সংগ্রামের উত্তরাধিকার বহন করে নিয়ে চলার গর্বে তার বুক চওড়া হয়ে উঠত। আজও মনে পড়লে একইরকম চওড়া হয়ে ওঠে। গত বছর চিত্তদা করোনায় মারা গেলে যে গুটিকয়েক কমরেড ভয় উপেক্ষা করে তার শেষযাত্রায় সামিল হয়েছিল তাদের মধ্যে নয়নও ছিল।
পার্টি অফিসের দিকে যেতে যেতে নয়ন মনে মনে ভাবতে থাকল তাদের সাথে কত পার্থক্য আজকের এই তৃণমূল করতে আসা নতুন ছেলেদের। তারা এসেছিল হাতের মুঠি শক্ত করে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়বে বলে। পার্টিকে কি কিছু দেবে বলে। এরা আর এসেইছে হাত পেতে। কিছু পাবে বলে। কেউ চাকরি তো কেউ অটোর পারমিট, কেউ সিন্ডিকেট তো কেউ বাজারের তোলার ভাগ। পার্টির জন্য তারা জান লড়িয়ে দিতে সদা প্রস্তুত ছিল, আছে এবং আগামী দিনেও থাকবে। তারা কি পেল তা নিয়ে ভাবার কোনো অবকাশই নেই তাদের। পার্টি জিতবে, ক্ষমতায় থাকবে, মানুষের জন্য কাজ করবে এইটাই একমাত্র স্বপ্ন। হ্যাঁ তাদের পার্টিরও কেউ কেউ হয়তো করে খেয়েছে তবে সে আর কজন! ওটুকু চোনা কোথায় থাকে না! আর এদের তো পুরোটাই চোনা। তাদের পার্টির প্রথম সারির কটা নেতা-মন্ত্রীর দিকে লোকে আঙুল তুলতে পারবে!
প্রণবদার বাড়িটা ক্রশ করতে করতে নয়ন ভাবতে থাকল পার্টির জন্য সে মারও খেয়েছে। রক্তও ঝরেছে। আর তা তো হবেই। কমরেড হতে গেলে লড়াকু তো হতেই হবে। মারাটা তো সহজ কিন্তু মার খেয়ে সহ্য করে লড়াই চালিয়ে যাওয়াটাই আসল। যেমন ষোলোর বিধানসভা ভোটে। সেবার নয়ন ছিল পোলিং এজেন্ট। বুথে বসে আছে। ও বাবা! হঠাৎ দেখে বাবলু আর গিটু ঢুকে পড়ল। বাপি ছিল ওদের পোলিং এজেন্ট। সে যথারীতি ভেতরেই ছিল। তখনও বেলা এমন কিছু বাড়েনি আর ভোট লুটতে চলে এসেছে! তাদের জামানাতেও যে হয়নি তা নয় কিন্তু একটা চক্ষুলজ্জা তো থাকবে! দুটো পর্যন্ত তো অন্তত মানুষকে ভোট দিতে দেবে! নয়ন এসব মেনে নেওয়ার পাত্র নয়। সে প্রতিবাদ করে। ওরা নয়নকে বুথ থেকে বার করে দিতে যায়। সেই থেকে ধস্তাধস্তি-হাতাহতি। তার নতুন পাঞ্জাবিটা ছিঁড়ল। মুখ ফাটল। টিকটা ঝেড়েছিল গিটু। নয়ন পাঞ্জাবির হাতায় মুখের রক্ত মুছতে মুছতে শান্ত অথচ দৃঢ় ভাবে বলেছিলঃ আরে মার না, কত মারবি, মার। আমিও নয়ন। মেরে লাশ ফেলে দিলেও বুথ ছেড়ে নড়ব না।
উপন্যাস।। কমরেড নয়ন।। সৌপ্তিক চক্রবর্তী
পুলিশ-কেন্দ্রীয় বাহিনীর কিছুটা তৎপরতায় ও হস্তক্ষেপে আর উপস্থিত ভোটারদের সামনে ইমেজ খারাপ হচ্ছে বুঝে বাবলু-গিটু বেরিয়ে গেল। ছেঁড়া পাঞ্জাবি পরে নয়ন বসে থাকল বুথে। একটু দুঃখ হচ্ছিল তার। নতুন কেনা পাঞ্জাবিটা ছিঁড়ে দিল শালারা।
তবে রেজাল্ট বেরনোর দিন কোথায় উবে গেল তার পাঞ্জাবির শোক! আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল সে। এগারোয় হেরে গিয়েও সেবার আবার জিতে বিধায়ক হয়েছিল তাদেরই পার্টির কাঞ্চন সান্যাল। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে সীট কমে গিয়েছিল অনেক।
আর একবার মার খেয়েছিল এগারোয়। সেবার তো পালাবদল হল। তার পর পরই একদিন বাবলু-গিটু আর বাপির নেতৃ্ত্বে বেপাড়ার ছেলেরা ঢুকে পড়ল পাড়ায়। যারা যারা সিপিএম করে এবং হাতের সামনে পেয়েছিল বেদম কেলিয়েছিল তাদের। যথারীতি নয়নও বাদ পড়েনি। সে পার্টি অফিসের সামনেই বসে ছিল। মারের চোটে তার মাথা ফাটে আর বাঁকনুইতে ফ্র্যাকচার হয়।
সব থেকে বেশি মেরেছিল বাবুনদাকে। বাবুনদা এপাড়ার লোক নয়। তবে এ অঞ্চলেরই লোক। এই ওয়ার্ডের পার্টি অফিসে নিত্য যাতায়াত ছিল। বাবুনদার ওপরে রাগও ছিল অনেকের। আসলে নয়নের যেটা মনে হয় তা হল বাবুনদার মতো কমরেডদের জন্য পার্টির সংগঠন যেমন মজবুত হয়েছিল তেমন ভাবমুর্তিও নষ্ট হয়েছিল খানিক। ওইদিনের আক্রমণের পর থেকে বাবুনদাকে অবশ্য আর এপাড়ায় দেখা যায়নি।
যাইহোক, নয়ন তো আর মার খেয়ে দমে যাওয়ার পাত্র নয়। স্টিচ কাটার পরই আবার তাকে দেখা গিয়েছিল পার্টি অফিস খুলছে। বাঁহাতে প্লাস্টার।
রাতে খাওয়-দাওয়া সেরে শুয়ে শুয়ে নয়নের মেঘনার কথা মনে পড়ল। বলা ভাল তার সাথে করা সেই সেক্সের কথা। আগেও কয়েকবার মনে পড়েছে। বার দুয়েকে মাস্টারবেশনও করেছে। টুক করে উঠে গিয়ে টেবিলে রাখা খাতাটা থেকে একটা পাতা ছিঁড়ে এনে নয়ন আবার শুয়ে পড়ল। পায়জামার দড়িটা খুলে নামিয়ে দিল সেটা। তারপর বেশ কিছুক্ষণ ধরে ভাবতে ভাবতে তাড়িয়ে তাড়িয়ে মাস্টারবেট করল। শরীরটা যেন হাল্কা হয়ে গেল তার। কাগজে মুছে পায়জামাটা পরে উঠে কাগজটা ফেলে দিল ডাস্টবিনে। তারপর জল খেয়ে শুয়ে পড়ল।
নয়
এই নিয়ে পরপর তিনটে বৃহস্পতিবার মেঘনা আগে এল। মানে তখনও রিহার্সালে আর কেউ আসেনি। সাধরণত সাড়ে চারটে থেকে ওরা একে একে আসতে থাকে। আগের দুদিন মেঘনা চারটে থেকে চারটে দশের মধ্যে এসে পড়েছিল। আজ এল আরও আগে। তখন সবে পৌনে চারটে। গতকাল বিকেল থেকে মাথাট আর ব্যথা করেনি। পার্টি অফিসে যেতেই মিহিরদা দরজা থেকে ধরে সোজা বাড়ি দিয়ে গিয়েছিল তাকে।
আগেরবারের মতোই দরজাটা বন্ধ করে নয়নের কাছে এল। নয়ন খাটে বসে ছিল। পা ঝুলিয়ে। আসলে মেঘনা ভেবেছিল নয়ন হয়তো এখনও অসুস্থ আছে। গত মঙ্গলবার তার ইচ্ছে থাকলেও সে নয়নের মাথ্যয় একবারও হাত বুলিয়ে দিতে পারেনি। দলের অন্যরা সবাই ছিল। ও সুস্থ আছে দেখে গান চালাতে চালাতে খুব খুশি হয়ে বললঃ বাহ! এই তো উঠে বসেছ। সাবাশ! তারপর ওর গালে-মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞেস করলঃ ডাক্তার দেখিয়েছ?
আলগা করে ‘হ্যাঁ’ বলল নয়ন।
মেঘনাঃ কী বলল?
নয়নঃ ওই ওষুধ দিয়েছে আর কয়েকটা টেস্ট করতে বলেছে। ওষুধ শুরুও করে দিয়েছি।
মেঘনাঃ টেস্টগুলোও করে নাও তাড়াতাড়ি।
নয়নঃ হ্যাঁ, এই কাল-পরশুই যাব।
মেঘনাঃ করবে কি আজ?
নয়নঃ হ্যাঁ, মানে তোমার ইচ্ছে থাকলে।
‘বেশ তবে আজ তুমি আমায় কর’ বলে মেঘনা সব খুলে খাটে উঠে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল।
নয়নও পায়জামা-পাঞ্জাবি খুলে ওর ওপর উঠে এল।
কিছুক্ষণ মেঘনাকে আদর করতে করতে তার শরীরের গন্ধটা প্রাণভরে নিল নয়ন। তারপর ঢোকাতে গিয়ে মায়ের সাথে জ্যাঠার সেই যৌনদৃশ্যের স্মৃতি মনে আসায় নয়ন মেঘনাকে বললঃ তুমি হামাগুড়ি দেওয়ার মত করে উপুড় হবে, প্লিজ? আমি পেছন থেকে করব।
খুব খুশি আর একটু বিস্ময়ে হাসিমুখে ‘ওহ! ডগি স্টাইল, জিও।’ বলে অভ্যস্ত মেঘনা উপুড় হয়ে দুপা মেলে দিল।
ভিজিয়ে নিতে নিতে নয়ন বুঝতে পারল মাথাটা দপদপ করতে শুরু করেছে আবার।
একে প্রথম প্রথম তাও অসুস্থ শরীর। কিন্তু সে প্রায় সর্বশক্তি দিয়ে করে যেতে থাকল। মেঘনা মৃদু মৃদু শীৎকার করতে করতে অনুরোধ ভরা গলায় বললঃ ভেতরে ফেল না, প্লিজ।
-না, না। আগেই বার করে নেব। বলে নয়ন জোর বাড়াল।
উপন্যাস।। কমরেড নয়ন।। সৌপ্তিক চক্রবর্তী
প্রাণপণে মাথার যন্ত্রণা উপেক্ষা করে আজ এতখানি বয়সে এসে এই যে সে মেঘনার সাথে করে চলেছে এটা যেন একটা স্বপ্ন!
স্বপ্নভঙ্গ হল অচিরেই। নয়নের ঝরে গেল।
এরপর মেঘনা নয়নকে খাটে চিৎ হয়ে শুতে বলল। মেঘনার গরম-ভেজা মুখের ভেতর আবারও সেই চরম সুখানুভুতি পেতে পেতে নয়ন বুঝতে পারল মাথাযন্ত্রণাটা বাড়ছে।
নয়নের ওপর উঠে আদেশের সুরে ‘ফেলবে না, ধরে রাখ’ বলে মেঘনা ওপর-নিচ করতে করতে আবার শীৎকারে ডুবে গেল।
জোরে জোরে ওঠানামা করতে করতে একটু বাদেই মেঘনা প্রবল শীৎকার দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে হাল্কা ঘামে ভেজা শরীরটা এলিয়ে দিল নয়নের বুকের ওপর। নয়নের বুকটাও তখন ভিজে গেছে ঘামে।
মেঘনার ক্ষরণের অনুভুতি ছুঁয়ে গেল নয়নকেও। এই অভাবনীয় অভিজ্ঞতায় দারুন একটা তৃপ্তি হল তার। ও দুহাতে মেঘনাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকল।
জামা-কাপড় পরতে পরতে মেঘনা বললঃ সামনের সপ্তাহে আমি আসব না। দিল্লি যাচ্ছি। জেএনইউতে একটা সেমিনার আছে। তারপর কলেজের পুরনো বন্ধুদের সাথে কয়েকদিন থেকে শনিবার রাতে ফিরব। তুমি শরীরের খেয়াল রেখ, কিন্তু।
‘বেশ, সাবধানে যেও’ পাঞ্জাবিটা গায়ে গলিয়ে নিতে নিতে নয়ন বলল।
বিছানায় উঠে বসলেও তার মাথাটা তখন বেশ যন্ত্রণা করছে। ঠিক করল আজ আর পার্টি অফিসে যাবে না। রিহার্সালও দেখবে না। মেঘনা বেরিয়ে যেতেই সে আবার বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুঁজে ফেলল।
দশ
এমআরআই করিয়ে বাড়ির সামনে এসে রিকশা থেকে নামার সময় নয়ন দেখল পিলু ঘোষ মাথা নিচু করে হেঁটে আসছে। মিহিরদাও ছিল সাথে। রিকশা থেকেই নয়নকে বললঃ পার্টি অফিসে যদি এসেছিস তো মার খাবি এবার। চুপচাপ ঘরে রেস্ট নে। বলেই আর দেরি করল না রিকশাওয়ালাকে বললঃ চল, আমায় পার্টি অফিসের সামনে নামিয়ে দেবে। তখন বেলা দশটা বেজে গেছে। পার্টি অফিস খুলতে হবে। ইচ্ছে করেই সক্কাল সক্কাল মিহিরদা অ্যাপয়েন্টমেন্টটা করেছিল। রোদে নয়নের মাথায় যদি আবার যন্ত্রণা শুরু হয়।
নয়ন আর কথা না বাড়িয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেল। ওদিকে পিলু ঘোষও তাদের বাড়িটা ক্রশ করে চলে গেল। পিলু ঘোষকে দেখলেই নয়নের সেই পিউয়ের আত্মহত্যার কথা মনে পড়ে। পাড়ার মোড়ে পিলু ঘোষের একটা লটারির দোকান আছে। টেনেটুনে সংসার চলে। পিউ ছিল পিলু ঘোষের মেয়ে। তখন তার বয়স হবে সাতাশ-আটাশ। সুশ্রী-লম্বা। একটা কল সেন্টারে কাজও করত শুনেছিল নয়ন। কেন যে সে এই রাস্তা বেছে নিয়েছিল তা আজও অজ্ঞাত। মানে পাড়ার লোকেদের কাছে। পিউই ছিল বড়। আর একটা ছেলে আছে। পিলু ঘোষের বাড়িটা নয়নদের দুটো বাড়ির পরেই।
চলবে…